বর্ণাঢ্য আয়োজনে বান্দরবানে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৭ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। এই উপলক্ষে দুটি স্থানে পৃথক দুটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। সরকারি ভাবে সোমবার বেলা ১১ টায় বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনিস্টিউটের হল রুমে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কেক কোটে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বান্দরবান ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান। এ সময় নবনিযুক্ত বান্দরবান পর্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাইয়ের সভাপতিত্বে আন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কাওছার, জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ্,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএম মনজুরুল হক প্রমুখ।
অপরদিকে, বান্দরবান শহরের রাজার মাঠে এক বিশাল জনসমাবেশ করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। সোমবার সকাল ১০টার দিকে বান্দরবান শহরের রাজার মাঠে বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এ জন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে মামলা-হামলার কারণে দীর্ঘ ৯বছর সভা সমাবেশে করতে পারেনি এ আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলটি। সমাবেশে জেলার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে থেকে খন্ডখন্ড মিছিল রাজার মাঠে সমাবেশ স্থলে সমবেত হয়। এতে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৭ তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক সুমন মারমার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং মারমা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের মামলা-হামলার কারণে আমরা দীর্ঘ ৯ বছর সভা সমাবেশে করতে পারিনি তাই আজ রাজার মাঠে আমরা মনের কথা বলতে এসেছি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চুক্তির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে বলে সরকারি ভাবে চুক্তির বর্ষপূর্তি পালনের উ˜েদ্যাগ নিয়েছেন। বক্তারা বলেন, পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে এবং পাহাড়ে যতগুলো উপ-গ্রুপ রয়েছে, তাদের প্রতি বিশেষ সমর্থন প্রত্যাহার হলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। কারণ জনগণের প্রয়োজনে উপ-গ্রুপগুলো সৃষ্টি হয়নি, তাই এই গ্রুপগুলো টিকে থাকার কথানা বলে মনে করেন বক্তারা।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর ততকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে জেএসএস এর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির দীর্ঘ ২৭ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি। এখনো পাহাড়ে চাঁদাবাজি,খুন,গুম,হত্যা এবং ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত পাহাড়কে উৎকন্ঠিত করে রাখছে। এ চুক্তির পরে বিগত ২৭ বছরে এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে পিসিজেএসএস'র সশস্ত্র গ্রুপ, জেএসএস সংস্কার ও তার সশস্ত্র গ্রুপ, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তার সশস্ত্র গ্রুপ, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও তার সশস্ত্র গ্রুপ, মগ লিবারেশন আর্মি বা মগ পার্টি নামে সশস্ত্র গ্রুপ। এছাড়া সর্বশেষ বিছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) সশস্ত্র সামরিক শাখা নামে আরো ৬টি সশস্ত্র গ্রুপ। এই গ্রুপগুলো বিগত ২৭ বছরে ঘটিয়েছে কয়েক শতাধিক হত্যাকান্ড,অপহরণ ও চাঁদাবাজীর ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে গত ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পার্বত্য বান্দরবান জেলায় সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন সাত জন সেনা সদস্য'সহ ৫২ জন পাহাড়ী ও বাঙ্গালী। এই চুক্তির পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থান নিয়ে এখনো সভা-সমাবেশে ব্যস্ত রয়েছে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সংগঠনগুলো।
ছবির ক্যাপশান: বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনিস্টিউটের হল রুমে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় এবং বান্দরবান শহরের রাজার মাঠে শান্তির চুক্তির বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে জন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।