আইন অমান্য করে নাটোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ‘চন্দ্র প্রামানিক পুকুর’ দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে কৌশলে রানী ভবানীর আমলের পুরাতন পুকুরটির অর্ধেক অংশ ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী মফিউর রহমান দুদু নামে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবর একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেছেন মাহফুজ উদ্দিন হেলাল নামে স্থানীয় বাসিন্দা। তবে দখলের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের কাপুড়িয়া পট্টি নববিধান স্কুলের পিছনে ও কানাইখালি শিল্পকলা একাডেমী এবং কাপুড়িয়া পট্টি সংযোগ সড়কের পাশে খনন করা পুকুরটি গুগল ম্যাপে ‘চন্দ্র প্রামাণিক পুকুর’ নামে দেখা যায়। আর এস খতিয়ানের ৬২৫৫ নং দাগে ১ একর ৬২ শতক আয়তনের পুকুরটির মালিক ছিলেন বিশ্বনাথ চন্দ্র নাথ। জনশ্রুতি রয়েছে, ওই এলাকায় বসবাসরত অভিজাত ও বিশিষ্ট হিন্দু পরিবারের লোকজন দৈনন্দিন কাজে পুকুরটি ব্যবহার করত। দেশভাগের সময় তারা সব সম্পত্তি অবিক্রিত রেখে ভারতে চলে যায়। এরপর থেকেই দীর্ঘ সময় ধরে স্থানীয়রা বাসিন্দারা পুকুরটি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবর করা অভিযোগে বলা হয়, মফিউর রহমান দুদু নামে এক ব্যবসায়ী পুকুরটি দখল করে ভরাট করেছেন। এদিকে, “পরিবেশ আইন-১৯৯৫ ও জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ এর বিধানে বলা হয়েছে, যে কোন জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ এবং ব্যক্তিগত পুকুর হলেও তা জলাধারের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তা ভরাট করা যাবে না।”
তবে অভিযুক্ত দুদু দাবি করেন, পুকুরটি বিশ্বনাথ চন্দ্র নাথ জমিদারি কোম্পানি লিমিটেড নাটোরের পক্ষে লিকুইডিটারের (পূর্ণ চন্দ্র শশিভূষণ) নিকট হতে জায়গাটি ক্রয় করেন তিনি। এ বিষয়ে আদালত আমার পক্ষে ডিগ্রী প্রদান করে। এছাড়া শুনানীতে এসি ল্যান্ড আমার কাজগপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। ওই এলাকায় অন্যান্য বাসিন্দারা আদালতের মাধ্যমে জমির স্বত্ব লাভ করে বসবাস করছেন। এছাড়া অভিযুক্তের কাছে সংরক্ষিত ১৭৫২৯ নং প্রস্তাবিত খতিয়ানে ৬২৫৫ নং দাগের ০.৫২ একর জমির শ্রেণী পুকুর এবং ০.৪৫ একর জমির শ্রেণী পুকুরের স্থলে পুকুরপাড় প্রতিস্থাপনে সংশোধনী দেখানো হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরটির দক্ষিণের অর্ধেক অংশে (যেটিকে প্রস্তাবিত খতিয়ানে পাড় হিসেবে দেখানো হয়েছে) বালু ভর্তি জিআই ব্যাগ ও ভরাট বালু দিয়ে পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে এবং সেখানে কলার গাছ লাগানো হয়েছে।
অভিযোগকারী মাহফুজ উদ্দিন হেলাল জানান, আইন অমান্য করে ভূমিদস্যু দুদু পুকুরটি জবর দখল করে ভরাট করেছেন। দুদু জাল দলিল করে জমির মালিকানা দাবি করছেন। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দারা ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। অবৈধ দখল ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তিনি।
অভিযুক্ত মফিউর রহমান দুদু জানান, ‘পুকুরটি ও পুকুরপাড় জায়গাটির বৈধ মালিক আমি। বিশ্বনাথ চন্দ্র নাথ জমিদারি কোম্পানি লিমিটেড নাটোরের পক্ষে লিকুইডিটারের নিকট হতে জায়গাটি ক্রয় করি। আমার বিরুদ্ধে দখলের যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সত্য। আমাকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে হয়রানি করার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি পক্ষ। আমি কেন অন্যের জায়গা দখল করতে যাব’ বলেন তিনি।
নাটোর সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কৃষ্ণ চন্দ্র জানান, পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি, অভিযুক্ত ব্যক্তি জিআই বস্তা দিয়ে পুকুরের পাড় বেঁধেছেন। কাগজপত্র দেখলে বিষয়টি জানা যাবে, পুকুরটি আইন অমান্য করে দখল করা হয়েছে কিনা। আইনের ব্যত্যয় হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রাজু