তিনি একাধারে ছিলেন উপজেলার সাংবাদিক, থানার তদবিরবাজ। আবার কখনও ব্যাবসা নিয়ে ব্যাস্ত থাকতেন দিনভর। আসলে এ সবের আড়ালে তিনি দীর্ঘ দিন থেকে চালিয়ে আসছিলেন স্বর্ন চোরাচালানের ব্যাবসা।
এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৬ কোটি টাকার স্বর্ণের বারসহ আটক জিয়াউল হক নামে এক ব্যক্তির স্বীকারোক্তিতে। এ অভিযোগে গত শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে ঢাকার ডিবি পুলিশ সৈয়দপুরে এসে তার বাড়ি থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যায়।
জানা যায়, সৈয়দপুরের ধলাগাছ এলাকার জিয়াউল ইসলাম (৫৮) সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পথে গত ১৬ আগস্ট বিমানবন্দর পুলিশের হাতে আটক হন। তল্লাশিকালে তার ব্যাগ থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসা ১২টি স্বর্ণবার পাওয়া যায়। যার ওজন ৫ কেজি ৯শ ৮০ গ্রাম। যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। ধৃত জিয়াউলকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। গত ২৭ নভেম্বর জিয়াউলকে রিমান্ডে নিলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। তাতে বেরিয়ে আসে স্বর্ণচোরাচালানের আসল রহস্য। স্বীকারোক্তিতে তিনি জানান, স্বর্ণ চোরাচালানের মূলহোতা সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়ার বাসিন্দা মোঃ জামিল আক্তারের ছেলে মোঃ জাভেদ আক্তার। শহরের কতিপয় ব্যবসায়ী ও সৈয়দপুর থানা পুলিশ তাকে সাংবাদিক হিসেবে চিনেন। পাসপোর্টে নতুন বাবুপাড়ার বাসিন্দা হলেও তিনি শহরের ইসলামবাগ শেরু হোটেল এলাকায় শ্বশুড়বাড়িতে বসবাস করতেন।
একটি সূত্র জানায়, স্বর্ণ চোরাচালান কারবারি জাভেদ আক্তার মূলহোতা হলেও এ সিন্ডিকেটের সাথে কারা জরিত তদন্তে এটাও বেরিয়ে আসবে বলে জানা গেছে। ঢাকায় আটক জিয়াউল হকের সৈয়দপুরের বাড়ি বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকায়। এনিয়ে তার ছেলে মোঃ জাহিদ বলেন, আমার বাবার মেরুদন্ডের হাড়ের সমস্যা ছিল। জাভেদ আক্তার আমার বাবাকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার প্রলোভন দিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি করে দেন। আমাদেরকে না জানিয়েই আমার বাবাকে তিনি সিঙ্গাপুরে পাঠান। পাসপোর্টে আমার বাবার মোবাইল নম্বরের পরিবর্তে কৌশলে জাভেদ আক্তারের মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। যা আমি বিমানবন্দর থানায় গেলে জানতে পারি। তিনি আরও বলেন, আমার বাবা একজন সহজ-সরল মানুষ। তিনি বৃদ্ধ ও অসুস্থ। জাভেদ আক্তার আমার বাবাকে ফাঁসিয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, পাসপোর্ট তৈরিতে এ শহরের স্টিল আলমিরা ব্যবসায়ী জরিত। তার লেখালেখির যাবতীয় কাজ করতেন তিনি। ওই ব্যক্তির মাধ্যমেই জাভেদ পাসপোর্ট তৈরী করতেন। তিনি পাসপোর্টধারী ব্যক্তির মোবাইল ফোনের স্থলে অন্য ব্যক্তির মোবাইল নম্বর বসানোর কাজটি ওই ব্যক্তি করে দিয়ে থাকতে পারেন বলে দাবী করে সূত্রটির। জাভেদ আক্তার নিজেকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে ভয় দেখিয়ে ওই কর্মচারীকে এই ব্যবসায়ীর চেম্বারে এনে ১৫ লাখ টাকা উল্লেখ করে তিনশত টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে সই-স্বাক্ষর নিয়ে একটি ঘটনার মিমাংসা করেন। তার সাথে শহরের শাহ হোটেল কর্তৃপক্ষেরও বেশ সখ্যতা রয়েছে। হোটেল ব্যবসা শুরুর দিকে তিনি হোটেলের যাবতীয় কেনাকাটায় সহায়তা করতেন এবং ক্যাশ টেবিলেও বসতেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
ইসলামবাগ শেরু হোটেল এলাকার মতিয়ার রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, জাভেদ আক্তারের নির্দিষ্ট কোন পেশা ছিল না। কখনো তিনি স্ক্রীণপ্রিন্টের মালামাল ব্যবসায়ী কখনো বা নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। কিছুদিন আগে তার মা হাসিনা খাতুন, স্ত্রী মোছাঃ আরজু ও শ্বাশুড়ি শামিমা খাতুন সিঙ্গাপুর বেড়াতে গিয়েছিলেন। মূলতঃ জাভেদ আক্তার এদের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর থেকে অবৈধভাবে স্বর্ণ আনার ব্যাবসা করতে পারেন।
তবে সে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের মূলহোতা এখন ফাঁস হয়ে গেছে।
এদিকে৷ জিয়াউল ইসলামের স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে গত শনিবার রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি) সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগ সেরু হোটেল এলাকায় শ্বশুড়বাড়ি থেকে তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ (সোমবার) তাকে আদালতের মাধ্যমে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার এসআই আজহারুল ইসলাম মোবাইলে জানান, আটক জিয়াউল হকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গত শনিবার রাতে আমরা জাবেদকে সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগ সেরু হোটেল এলাকা থেকে আটক করেছি। তদন্তের স্বার্থে আদালতের মাধ্যমে তার রিমান্ড চাওয়া হবে।
জাফরান