স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও খাগড়াছড়ি জেলা সদরে চেলাছড়া এলাকায় চেংগী নদীর উপর তৈরী হয়নি কোন ব্রীজ। শুধূ মাত্র একটি ব্রিজের অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে খাগড়াছড়ির চেলাছড়ার হাজার হাজার মানুষ। বর্ষাকালে নৌকা আর খরার সময় বাঁশের সাঁকো পথচারী ও শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা। এমনকি বন্যায় পারাপার করতে গিয়ে নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অনেকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ৪নং পেরাছড়া ইউনিয়নের পেরাছড়া থেকে চেলাছড়াসহ ১২টি গ্রামের মানুষ যাতায়াতের একমাত্র পথ হচ্ছে চেঙ্গী নদী উপর দিয়ে। এছাড়াও পাশর্বর্তী মাটিরাঙ্গা উপজেলায় গোমতি ইউনিয়নবাসীও আসা-যাওয়া করে থাকেন এ পথ দিয়ে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এখানে একটি ব্রীজ নির্মাণের ।
গ্রামবাসী যোগেশ্বর ত্রিপুরা বলেন, “চেঙ্গী নদীতে ব্রীজ না হওয়ার ফলে আমাদের ছেলে মেয়েরা নদী পারাপার করতে গিয়ে নৌকা ডুবে দূর্ঘটনায় পতিত হয় ্এর মধ্যে নদীতে পরে মারা গেছে বিন্দু ত্রিপুরা, চিত্ত ত্রিপুরা, বনানী ত্রিপুরা”।নামের ৪ শিক্ষার্থী। শুধুমাত্র ‘একটি ব্রীজের অভাবে ৪ হাজার পরিবার বেশি আমরা ভুক্তভোগী’।
তিনি আরো বলেন, ব্যবস্যা ক্ষেত্রেও আমাদে দূর্ভোগ চরমে ।মালামাল আনা নেয়রর ক্ষেত্রে নদী পারাপারের জন্য বাড়তি শ্রমিক শ্রমিক নিয়োগ করতে হয় । এ ক্ষেত্রে ডাবল খরচ হয়। এ নদীর উপর সেতু নির্মাণ হলে এলাকার পিছিয়ে পড়া জনসাধারণের জীবনমানেরও উন্নতি হবে। ব্যবসা বানিজ্য সমৃদ্ধি হবে উৎপাদিত কৃষিপন্য সহজে হাটবাজারে নিয়ে আসতে পারবে।
অপর গ্রামবাসী প্রদীপ ত্রিপুরা বলেন, আমাদের “চেঙ্গী নদী পারাপার করতে হয় প্রত্যেকদিন কোন না কোনো কারণে বাজারে যাওয়া আসা লাগে”। ‘ফলে চেঙ্গী নদীর উপর দিয়ে আসা-যাওয়া করে থাকে চেলাছড়া পাড়া, কাপতলা পাড়া, পল্টনজয় পাড়া, বাঙ্গামুড়া, বাউড়া পাড়া, বাঁনতৈসা, লারমা পাড়া ও হাজাছড়াসহ আরো কয়েকটি গ্রামের লোকজন কে। তিনি আরো বলেন, এখানকার এলাকাটি জীবন জীবিকা ক্ষেত্রে কৃষি নির্ভর। কৃষকের উৎপাদিত পন্যগুলো কেরিং করে নদী পারাপার করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরণে প্রতিবন্ধকতা শিকার হতে হয়। তাই আমরা চাই স্থায়ী ব্রীজ।
চেলাছড়ার গ্রাম প্রধান(কার্বারী) মনুরেম ত্রিপুরা বলেন, গত সরকার আমলে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছি ব্রীজের জন্য কোনো ভাবে রেন্সপন পাইনি। নতুন সরকার কাছ থেকে আমার গ্রামবাসী পক্ষে ব্রীজ দাবী করছি। তাছাড়া আমাদের এলাকার পরেই একটি সুন্দর ”হাতি মোড়া” রামের একটি সুন্দর পর্যটন গড়ে উঠছে। পর্যটন শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে ব্রীজটি যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের আশা ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদীর পূর্বপাড়ে রয়েছে পেরাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পেরাছড়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং আর পশ্চিমপাড়ে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বর্ষাকালে নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওইসব গ্রামের বাসিন্দাদের হাট-বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদরে অফিস, আদালত আসার জন্য দীর্ঘসময় খেয়া নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় চেপে শিক্ষার্থীদের নদী পারাপার হতে হয়। চাষিরা ফসল ঘরে তুলতে গিয়েও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। তাদের খরচ বেশি হচ্ছে। ফসল বাজারে নেওয়ার সময়ও চরম কষ্ট করতে হয় চাষিদের।
শিক্ষার্থী মোহনা ত্রিপুরা বলেন, বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়া আসার ক্ষেত্রে আমাদেরকে চেঙ্গী নদী পাড় হয়ে যেতে হয়। মাঝে মধ্যে নৌকা ডুবে যায়, ফলে পরীক্ষার সময় মতো পৌঁছতে পারি না।
পেরাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিম্বিসার খীসা বলেন, “নদীর ওপর একটি ব্রীজ খুব প্রয়োজন”। তিনি বলেন ‘সেতু না থাকায় আমাদের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে ভোগান্তিতে আছে প্রতিবছর বন্যার পানিতে বাঁশের সাঁকোটিও ভেসে নিয়ে যায়। তখন পূর্বপাশের শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে না পারায় শিক্ষার্থী সংকট দেখা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থী সহ পথচারীদের নদী পারাপারে দুর্ভোগের অন্ত থাকে না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো: রাজু আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত ব্রীজটি এলজিইডি আইডি ভুক্ত সড়কের অন্তর্ভুক্ত কিনা তা আগে যাচাই করে দেখতে হবে, যদি সড়কটি প্রস্তাবিত হয়, ব্রীজটির এলজিইডির আওতায় ভুক্ত সড়কের মধ্যে পরে তাহলে ব্রীজ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তাব যাচাই বাছায় পূর্ক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করা হবে।
জাফরান