স্বর্ণা নামের ধানের জাতকে বাংলাদেশ সরকার চাষের অনুমোদন দেয়নি গত প্রায় এক দশকেও। স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্যমতে এই জাতের ধান চাষ নিষিদ্ধ। কিন্তু বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলাসহ প্রায় পুরো জেলা এবং আশপাশের জেলায় রোপা আমন মৌসুমে লাখ লাখ বিঘা জমিতে অবাধে চলছে আসছে এই নিষিদ্ধ ধান চাষ।
শুধু চাষাবাদ হচ্ছে তা-ই নয়; এই জাতের ধান ও চাল কিনে গোলা তথা গুদাম ভরিয়ে আসছে সরকার তথা খাদ্য বিভাগ। জানা গেছে, প্রায় এক দশক আগে পাশের দেশ ভারত থেকে চোরাই পথে এই ধানের বীজ আসে বাংলাদেশে। এই জাতের ধানে নিরাময় অযোগ্য একাধিক রোগ-বালাই বেশি হবার কারনে চাষের জন্য এখনো অনুমোদন দেয়নি সরকারের কৃষি বিভাগ। কিন্তু চাষাবাদ চলে আসছে অবাধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোপা আমন মৌসুমে পুরাতন দেশীয় জাতের ধানের চেয়ে এই জাতের ধানের ফলন বেশি হবার অজুহাত দেখিয়ে কৃষকরা অধিক আগ্রহী এই নিষিদ্ধ ধানের চাষাবাদে। এবার উপজেলায় ১২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে মোট জমির মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে ওই চাষ নিষিদ্ধ জাতের ধান।
কৃষি কর্মকর্তারা বলেন রোপা আমন ধানের প্রধান রোগ হচ্ছে মাজরা পোকা। পুরাতন জাতের ধানে এই পোকা বসবাস করে ধান গাছের গোড়ার উপরের অংশে এবং সহজে নিরাময়যোগ্য। এই পোকাটি কিছুটা সাদা রংয়ের হয়ে থাকে। কিন্তু স্বর্ণা জাতের ধানের এই পোকার রং কালো এবং এরা বসবাস করে ধান গাছের গোড়ার নীচে শিকর পয়েন্টে। ফলে নামী দামী কীটনাশক কয়েকবার প্রয়োগ করেও তেমন নিরাময় করা যায় না। সাথে যোগ হয়েছে কারেন্ট পোকা নামের আরেক রাক্ষুষে পোকা।
এই পোকা স্বর্ণা জাতের ধানের পাশাপাশি সুগন্ধি আতব ও দেশীয় অন্যান্য জাতের ধানেও আক্রমন চালায়। এরা কাঁচা ধান গাছের পরিবর্তে কাঁচা শীষে এবং কাটার যোগ্য হওয়া পাকা ধান ও কেটে শুকানোর জন্য জমিতে রাখা ধানের জমিতে হামলে পড়ে। এই পোকা যে জমিতে আক্রমন করে সে জমির ধানের শীষের চাল খেয়ে টোসা করে দেয় অত্যন্ত দ্রুত গতিতে।
কৃষক বিকালে জমিতে ভালো ধান দেখে আসার পর সকালে গিয়ে দেখতে পায় জমিতে শুধু খড় পড়ে আছে। চাষাবাদ নিষিদ্ধ হলেও সেটা জোড়াল ভাবে প্রতিরোধ করতে কৃষি বিভাগের গ্রহনযোগ্য তৎপরতা দেখা যায় না। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিঠু চন্দ্র অধিকারির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকন্ঠকে বলেন, এই জাতের ধান চাষাবাদ না করার জন্য কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলস্বরুপ ইতোমধ্যে এই ধানের চাষাবাদ অনেকটাই কমে গেছে। অচিরেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন।