ইসকনসহ হিন্দুত্ববাদী সকল সংগঠন নিষিদ্ধ দাবি
তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবারও চট্টগ্রাম ছিল উত্তাল। বাদ জুমা হেফাজতে ইসলাম ও মুসল্লিদের পৃথক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে ইসকনকে জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে হিন্দুত্ববাদী সকল সংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধের দাবি করা হয়েছে। এসব সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইসকন ও হিন্দুত্ববাদী অন্যান্য সংগঠন ভারতের মদদপুষ্ট হয়ে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত। অবিলম্বে এসব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। সমাবেশে আগামী ২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
ইসকন নিষিদ্ধ করা ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার প্রতিবাদে বাদ জুমা নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে হেফাজতে ইসলাম বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। অপরদিকে নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকেও একই দাবিতে মুসল্লিসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
বাদ জুমা ষোলশহর দুই নম্বর গেটে হেফাজতের বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সংগঠনের নেতা হারুন ইজহার বলেন, হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তারা হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের সঙ্গে বসতে চেয়েছে। এটি একটি চক্রান্ত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত করার পর বেশিরভাগ হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে।
ইতোমধ্যে তাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন তাদের শাস্তির আওতায় আনছে তখন তারা নতুন বয়ান তৈরি করল। আমি স্পষ্ট ইসকন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনকে বলে দিতে চাই- তিনটি শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আগামীতে হিন্দুত্ববাদী কোনো
সংগঠনের সঙ্গে আমরা আলাপে বসতে রাজি নই।
২০২০ সালে আমি চট্টগ্রামের একটি হোটেলে ইসকন নেতাদের সঙ্গে ডায়ালগে বসেছিলাম উল্লেখ করে হেফাজত নেতা আরও বলেন, বিগত হাসিনা সরকার পতনের পরে আমাদের দেশের ইসলামপন্থিরা হিন্দুদের মন্দির পাহারা এবং আত্মরক্ষা ও সুরক্ষার জন্য সকল ব্যবস্থা করেছিল। এমনকি অতি উদারতা দেখাতে গিয়ে আমাদের কিছু ভাই তাদের পূজা ম-পে গিয়েছিল, যা আমরা সমর্থন করি না। এত উদার থাকার পরও আমাদের ভাইকে জবাই করে তাদের উত্তর তারা দিল। সুতরাং এখন যদি কোনো হিন্দু সংগঠন ডায়ালগে বসতে চায় এক নম্বর শর্ত হলো- এ সমস্ত হিন্দু সংগঠনগুলোকে ভারতে সঙ্গে সকল ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।
দুই নম্বর শর্ত হল- বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের যেসব ভুয়া খবর দেওয়া হয়েছিল সেসবের ব্যাপারে অবস্থান স্পষ্ট করে বলতে হবে- বাংলাদেশে হিন্দুরা নিরাপদ রয়েছে, হিন্দুদের ওপর আক্রমণের তথ্য মিথ্যা, ভুয়া। তিন নম্বর শর্ত-হিন্দুদের বিভিন্ন সংগঠনে যেসব সন্ত্রাসী ও গু-া রয়েছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এ তিনটি শর্ত পূরণ না হলে আমরা কোনো হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে বসব না। কোনো ইসলামী দল যদি ডায়ালগে বসে তারা মোনাফেক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
হেফাজত নেতা হারুন বলেন, শুধু ইসকন নিষিদ্ধ নয়, আরও সংগঠন রয়েছে। সনাতনী জাগরণী পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ- এগুলোও ইসকনের মতো সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসী সংগঠন। আমাদের মূল লড়াই বাংলাদেশের হিন্দুদের সঙ্গে নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের মূল লড়াই বাংলাদেশের ইসকনসহ সনাতনী মহাজোট, ঐক্য পরিষদের সঙ্গেও নয়। আমি গত দুইদিন আগেও ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছি- সাপের লেজ চট্টগ্রামে আর মাথা দিল্লিতে। আমাদের লড়াই দিল্লির সঙ্গে।
আমরা আমাদের লড়াই দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাই। তিনি আরও বলেন, হিন্দুস্তান আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন চাপিয়ে দিয়েছে। হিন্দুস্তান যদি ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে, বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিদের লেলিয়ে দিয়ে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় তাহলে আমরাও আমাদের রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থান অব্যাহত রাখব।
হারুন বলেন, ইতোমধ্যে হিন্দুস্তানের সঙ্গে ইসরাইল যুক্ত হয়েছে-বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। ভারত ইসরাইল যৌথভাবে চক্রান্ত করছে। আমাদের লড়াই দীর্ঘমেয়াদী, সূদরপ্রসারী। এ লড়াই ৫ বছর লাগুক একবছর লাগুক অব্যাহত রাখব। আমাদের সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। ভারত বাংলাদেশের চক্রান্ত করে যাচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা কর্মসূচি নির্ধারণ করেছি- আগামী সোমবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে যাত্রা করব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে, উপদেষ্টাসহ সমন্বয়কদের জানিয়ে দেব- সেদিন আমরা ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে যাত্রা করব। আমাদের প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করবে। জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে আমরা জমায়েত হব। সেদিন শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে যাত্রা করব।
ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে রাজশাহীতে মুসল্লিদের বিক্ষোভ-সমাবেশ ॥ স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে রাজশাহীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন মুসল্লিরা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট বড় মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে ‘উলামা ও তাওহীদি জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়।
মিছিলটি নগরের সোনাদীঘি মোড় প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইসকন আসলে একটি উগ্রপন্থি সংগঠন। এ ধরনের সংগঠনের কার্যক্রম বাংলাদেশে চলতে পারে না। তাই অবিলম্বে বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সমাবেশ থেকে বক্তারা চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে ইসকন অনুসারীদের হাতে খুন হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেন।
একই দাবিতে পার্বত্য জেলা বান্দরবান, ভোলা, মাদারীপুর, ঢাকার সাভার, ঝিনাইদহ, ফেনী, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সারাদেশে বিক্ষোভ অব্যাহত ॥ স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতারা জানান, ইসকন নিষিদ্ধ ও চট্টগ্রামের তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার মাগুরা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, ভৈরব ও ঈশ্বরদীতে বিক্ষোভ হয়। এদিন জুমার নামাজের পর ও সন্ধ্যার দিকে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে শ’ শ’ লোক অংশ নেন। ফরিদপুরের বিক্ষোভ থেকে বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার নিষিদ্ধের দাবিতেও স্লোগান ওঠে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ জনতার উদ্যোগে ফরিদপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার প্রতিবাদে ইসকন ও প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার নিষিদ্ধের দাবিতে শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়ে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মাহমুদুল হাসান অলিভ। বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সোহেল রানা, মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা কবির উদ্দিন, মোহাম্মদ মেহেদী, সিফাত হাসান খান, মৌলানা ঈসা আহমেদ, নিরব ইমতিয়াজ শান্ত প্রমুখ। এর আগে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে একাধিক মিছিল এই কর্মসূচিতে যোগ দেয়।
মাগুরা ॥ ইসকন নিষিদ্ধ ও চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় মাগুরায় যুব ও ছাত্র অধিকার পরিষদ মাগুরা জেলা শাখার উদ্যোগে মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় কার্যালয় থেকে মশাল মিছিল বের হয়ে সমগ্র শহর প্রদক্ষিণ করে সমাবেশ করে। সমাবেশে যুব ও ছাত্র অধিকার পরিষদের জেলা নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা ইসকন নিষিদ্ধ ও চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারপূর্বক দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ ॥ সাটুরিয়ায় ইসকন নিষিদ্ধের দাবি এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকা-ের দ্রুত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সাধারণ মুসল্লিরা। শুক্রবার বাদ জুমা উপজেলার দড়গ্রামে সর্বস্তরের মুসল্লিদের অংশ গ্রহণে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় মিছিলটি দড়গ্রাম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে থেকে শুরু করে দড়গ্রাম বাজারে সিএনজি স্ট্যান্ডে এসে শেষ করা হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন, সাটুরিয়া উপজেলা জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা আলতাফ হোসেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দড়গ্রাম ইউনিয়ন যুব বিভাগ সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্র শিবির দড়গ্রাম ইউনিয়ন সভাপতি মোহাম্মদ রিপন আল মামুন। এ সময় বক্তারা বলেন, আমরা সম্প্রীতির দেশ গঠন করতে চাই কিন্তু ইসকন যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে ব্যস্ত এবং উঠে পড়ে লেগেছে তার একটি প্রমাণ হলো আদালত চত্বরে নৃশংস হত্যাকা-। এই ইসকন নিষিদ্ধ করে দ্রুত হত্যাকা-ে জড়িতদের বিচার করতে হবে এবং কোনোভাবেই বাংলার মাটিতে সন্ত্রাসী, উগ্রবাদী ইসকনকে ঠাঁই দেওয়া যাবে না।
ঈশ্বরদী ॥ ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে ঈশ্বরদীর মহাসড়কে নেমে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইখওয়ানুল মুসলিমিন ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন। এ সময় ইসকন সমর্থকদের হাতে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার দৃষ্টান্ত বিচার দাবি করেন তারা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে থেকে তৌহিদি মুসলিম জনতার ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে।
এ সময় ছাত্র জনতা ও বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিরা বিভিন্ন স্লোগানে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে পৌর শহরের প্রধান সড়ক পদক্ষিণ করে রেলগেট এলাকায় জড়ো হন। পরে সেখানে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা। সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তারা বলেন, ইসকন একটি জঙ্গি সংগঠন। দেশের পরাজিত শক্তি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশকে ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
এর অংশ হিসেবে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে ইসকন। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তাকে গৃহযুদ্ধ বাঁধানোর অপপ্রয়াস ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে? তাই ইসকনকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকা-ে জড়িতদের বিচারের দাবি জানান বক্তারা। একইসঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদী ও তাদের প্রভুদের পাতানো সাম্প্রদায়িক উস্কানির ফাঁদে পা না দিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বক্তারা।
ভৈরব ॥ ভৈরবে ইসকনের একটি প্রার্থনালয় ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। একদল দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে স্লোগান দিয়ে প্রার্থনালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে। শুক্রবার বিকেল ৫টায় শহরের রানীর বাজার সংলগ্ন এলাকায় ইসকন ভক্তদের পরিচালিত নামহট্ট নামের প্রার্থনালয়টির প্রধান দরজা ভেঙে দুর্বৃত্তরা ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় পূজা করার সকল জিনিসপত্র ভাঙচুর করে তারা। প্রার্থনালয়ের ভেতরে থাকা ঢোল, গীতা বই, প্রার্থনার মৃদঙ্গ, কাশি-করতাল, দেওয়ালে টানানো পূজারীদের একাধিক ছবি ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার সময় প্রার্থনালয়ের দায়িত্বে থাকা কেউ উপস্থিত ছিলেন না। প্রায় ১০ মিনিটব্যাপী তা-ব চালিয়ে ভাঙচুর লুটপাট করার পর দুর্বৃত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে ঘটনার খবর পেয়ে প্রার্থনালয়ের ভক্তরা এসে এসব দেখতে পায়।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন, ভৈরব সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর সানজেদুল ইসলাম, থানার অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহিন, পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি চন্দন কুমার পাল, গোপাল জিওর মন্দিরের সভাপতি বাবু দুলাল চন্দ্র সাহা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো, রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলামসহ দলের নেতারাও ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন করে প্রশাসন ও পুলিশকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করেন। ঘটনার পর ভৈরব বাজারের অসংখ্য হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজন প্রার্থনালয়টি দেখতে ভিড় জমান।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের পার্লামেন্টে আলোচনা নিয়ে প্রশ্ন ॥ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, আমাদের বাংলাদেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের দেশ নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টে আলোচনা হবে কেন? আমরা কি স্বাধীন দেশের নাগরিক নই? তিনি আরও বলেন, হিন্দুরা এ দেশের নাগরিক, তাদের ভালোমন্দ আমরা দেখব। এটা নিয়ে অন্যদেশে আলোচনা হবে কেন?
শুক্রবার দুপুরে ঐতিহাসিক চরমোনাই মাহফিল ময়দানে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত ছাত্র গণজমায়েতের প্রধান অতিথির বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সকল দলকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ইসলাম, দেশ ও মানবতার পক্ষে আওয়াজ তুললে বাতিলরা পালাতে বাধ্য হবে। গণজমায়েতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমেদ বলেন, যারা দখলবাজি করছে, এরা আধা পাগল। এদের চিকিৎসার জন্য একটি মেন্টাল হসপিটাল তৈরি করা জরুরি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, একটি সরকার পরিবর্তন করা সহজ, তবে আদর্শ ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা তত সহজ নয়। গণজমায়েতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল বশর আজিজীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক নাসির উদ্দীন, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নেছার উদ্দীন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট বরকত উল্লাহ লতিফ, অ্যাডভোকেট হাছিবুল ইসলাম, জিএম রুহুল আমীন, শেখ ফজলুল করীম মারুফ, শরিফুল ইসলাম রিয়াদ প্রমুখ।