ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ইসকন নিষিদ্ধের দাবি

চট্টগ্রামে আইনজীবীদের টানা দু’দিন কর্মবিরতি পালন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামে আইনজীবীদের টানা দু’দিন কর্মবিরতি পালন

সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আদালত ভবন চত্বরে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মানবব

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারও উত্তপ্ত পরিবেশ ছিল আদালত পাড়ায়। গত বুধবারের পর দ্বিতীয় দিনের মতো চট্টগ্রামের সকল আদালতে কর্মবিরতি পালন করেছেন সর্বস্তরের আইনজীবীরা। আদালতে কোনো শুনানিতে এবং কোনো আইনি কর্মকা-ে অংশ না নিয়ে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছেন তাঁরা। কালো পতাকা নিয়ে মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে। ইসকনকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে এটিকে নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়েছে।

বিক্ষোভ সমাবেশে আইনজীবী নেতারা বলেছেন, গত মঙ্গলবার পুলিশের ভূমিকা যথাযথ ছিল না। অপরদিকে সাইফুল হত্যার ঘটনার পর থেকে যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে চট্টগ্রামে। এদিকে, আইনজীবী সাইফুল হত্যার ঘটনায় আরও ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ চলমান রয়েছে। আইনজীবীদের টানা দুদিন কর্মবিরতির ফলে বিচারপ্রার্থীদেরও দুর্ভোগে পড়তে হয়। 
বুধবার পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও বৃহস্পতিবার অনেকটা স্বাভাবিক হয়। কিন্তু সনাতন সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে কাটেনি আতঙ্ক ও শঙ্কা। গণগ্রেপ্তার ও অভিযান আতঙ্কে বান্ডেল সেবক কলোনির যুবকরা বাড়িছাড়া। ফিরিঙ্গি বাজার, পাথরঘাটা এলাকার সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল নিরাপত্তার চেয়েও শঙ্কা বাড়াচ্ছে। ফলে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। 
অপরদিকে আলিফ হত্যায় এ নিয়ে মোট ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আদালত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গ্রেপ্তারকৃত সনাতন জাগরণ জোট নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এবং তৎপরবর্তী সময়ে পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের কাউকে আদালতে সোপর্দ করা যায়নি। 
অভিযানে গ্রেপ্তার আরও ৮ ॥ চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় এ নিয়ে মোট ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে গত বুধবার পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় আরও ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 
অপরদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে রাজিব ভট্টাচার্য, রুমিত দাশ, গগন দাশ, নয়ন দাশ, বিশাল দাশ, আমান দাশ, সনু দাশ ও সুমিত দাশ। এদের মধ্যে রাজিবকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাজিবকে একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে বলে জানায় পুলিশ। 
কোতোয়ালি থানা সূত্রমতে, গ্রেপ্তার ৩৫ জনের মধ্যে ১৪ জনকে আলিফ হত্যার ঘটনায় শনাক্ত করা গেছে। অন্যদের বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের সময় ছবিতে দেখা গেছে। তবে এ বিষয়ে থানার কোনো কর্মকর্তা বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। 
আইনজীবীদের কর্মবিরতি ॥ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে আদালতের কার্যক্রম। বৃহস্পতিবারও চট্টগ্রামের কোনো আদালতে কোনো শুনানি ও মামলার কার্যক্রমে অংশ নেয়নি আইনজীবীরা। সকালে জেলা আইনজীবী সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। আইনজীবীরা কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা নিয়ে প্রতিবাদ জানান। 
সেখানে আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন এবং জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা বক্তব্য রাখেন। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা দাবি করেন, মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন না হওয়ার পর পরই প্রতিবাদ শুরু হলে পুলিশ যথাযথ ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশের নীরবতা ছিল বলেই কোর্ট এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। প্রিজন ভ্যানে ইসকনের বহিষ্কৃত সন্ত্রাসী নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য রাখেন। কিন্তু কীভাবে এসব ঘটনা ঘটল তার জবাব পুলিশকে দিতে হবে। এরপর আলিফকে হামলার সময় পুলিশ ছিল না। যার ফলে এটি পুলিশের ব্যর্থতা বলেও অভিহিত করে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, এসবের পেছনে পুলিশের ইন্ধন আছে। পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। 
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় গ্রেপ্তার ও অভিযান আতঙ্ক ॥ চট্টগ্রামের পাথরঘাটা, বান্ডেল রোড, ইকবাল রোড, গুর্খা ডাক্তার লেন, বংশাল রোড, মনোহরখালী, শিববাড়ি, ফিরিঙ্গিবাজার, আন্দরকিল্লা, রহমতগঞ্জ, রাজাপুর, হাজারী লেন, হরেশচন্দ্র মুন্সেফ লেন, বক্সিরহাট, টেরিবাজার, ঘাট ফরহাদ বেগ, রুমঘাটা, দেওয়াজীপুকুর পাড়, গোসাইলডাঙ্গা এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এর মধ্যে পাথরঘাটা বান্ডেল সেবক কলোনি হলো নগরীর পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বড় আবাসস্থল। সেখানে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সনাতন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দির। গত মঙ্গলবার আইনজীবী আলিফ নিহত হয় রঙ্গম হল সংলগ্ন এলাকায়। এরপরই সেখানে অগ্নিসংযোগ করে বাসা ও মন্দির জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গণগ্রেপ্তার। ফলে গ্রেপ্তার এড়াতে বান্ডেল সেবক কলোনি এলাকার বেশিরভাগ যুবক বাড়িছাড়া। 
উপ-কমিশনার বদলি ॥ মঙ্গলবার আদালত এলাকায় যেখানে সাইফুল ইসলাম আরিফ নিহত হন সেটি ছিল সিএমপির দক্ষিণ জোন এলাকায়। সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়ার সময় ওই সহিংসতার ঘটনায় বুধবার দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার লিয়াকত আলী খানের বদলি করা হয়। তাকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) শাখায় যুক্ত করা হয়।

আর তার স্থলে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয় বন্দর জোনের উপ-কমিশনার শাকিলা সোলতানাকে। বুধবার সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ উপ-কমিশনার লিয়াকতের বদলির আদেশ দেন। সিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিয়মিত বদলির অংশ হিসেবেই তাকে বদলি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে বুধবার তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ৭৬ জন এজাহারনামীয় এবং প্রায় ১৪শ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। 
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে জামিন নামঞ্জুর করায় বিক্ষোভ করেন সনাতনী সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী-পুরুষ। এরপর দুপুরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আদালত এলাকায় গাড়ি এবং মসজিদ কমপ্লেক্সের নিচতলার আইনজীবী ভবনের জানালার কাচ ভাঙচুর হয়। সেই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে আদালতের পাদদেশে। সেখানে রঙ্গম কনভেনশন টাওয়ারের গলিতে ইটের আঘাত ও ছুরিকাঘাতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত হন। এ ঘটনায় ইসকনকে দায়ী করে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে চলছে বিক্ষোভ।

×