দ্বীপজেলা ভোলার মধ্যবর্তী উপজেলা লালমোহন। প্রতি বছরই এখানে ধানের বাম্পার ফলন হয। উপজেলার কৃষি অফিস এখানকার কৃষকদেরকে দিয়ে বিভিন্ন জাতের বীজ দিয়ে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করান। এজন্য কৃষকদেরকে ফ্রি বীজ, সার ও বালাইনাশক ওষুধসহ বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবছর লালমোহনের পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নে ৩ জন কৃষককে দিয়ে ২ একর এবং কালমা ইউনিয়নের ৩ জন কৃষককে দিয়ে ২ একর মোট ৪ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের আমন ব্রি ধান-১০৩ জাত চাষাবাদ করা হয়েছে।
কালমা ইউনিয়নের চাষী মো. বাবুল, মো. সেলিম ও শেখ শাদী জানান, এবছর উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় নতুন জাতের আমন ব্রি ধান-১০৩ চাষ করেছি। অফিস থেকে আমাদেরকে বিনামূল্যে ধানের বীজ, সার, কীটনাশক ও বীজ সংরক্ষণের জন্য ড্রাম প্রদান করা হয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা তাদের পরামর্শ মতো চাষাবাদ করেছি। বীজ লাগিয়েছি শ্রাবণ মাসের ৮ তারিখ এবং ভাদ্র মাসের ১৯ তারিখ থেকে এক-দেড় সপ্তাহের মধ্যে ধানের চারা ক্ষেতে রোপন করেছি।
ফলন অন্য ধানের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। ২ একর জমিতে চাষাবাদ, শ্রমিক ও বালাইনাশক বাবদ খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আশা করছি এই দুই একর জমি থেকে দেড় লাখ টাকার ধান বিক্রি করতে পারবো। এই ধানগুলো বীজ হিসেবে বিক্রি করবো। এই ধান অন্যান্য ধানের তুলনায় ১৫দিন আগেই ঘরে তোলা সম্ভব হবে। আর মাত্র ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হবে।
কালমা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র মজুমদার জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় প্রোগাম অন এগ্রিকালচারাল এ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনরশিপ এ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) প্রকল্পের আওতায় কালমা ইউনিয়নের চরছকিনা গ্রামে কমিউনিটি বীজ উৎপাদন প্রযুক্তির জন্য ২ একর জমিতে আমন ব্রি ধান-১০৩ জাত ৩ জন চাষীর মাধ্যমে চাষ করা হয়েছে। এই ধান বীজ বপন থেকে ফলন ঘরে উঠানো পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৩৩ দিন লাগে। কৃষকদের ধানের বীজ ও অনান্য উপকরণ থেকে শুরু করে নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছি। ফলন খুব ভালো হয়েছে এবং আশা করছি কৃষকগণ লাভবান হবেন।
লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হাসনাইন বলেন, দেশের জনসংখ্যার কথা চিন্তা করে আমাদের উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল আবাদ করতে হবে। কম খরচে কম সময়ে আবহাওয়ার সাথে মিল রেখে এ বছর লালমোহন উপজেলার ২টি ইউনিয়নে ৪ একর জমিতে ৬জন কৃষকের মাধ্যমে আমন ব্রি ধান-১০৩ জাত আবাদ করা হয়েছে। প্রথমবারই এ ধান চাষ করে কৃষকেরা সফল হয়েছেন। চাষীদের এ ধান বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে যাতে আগামীতে উচ্চ ফলনশীল এ ধান কৃষকেরা চাষাবাদ করতে পারে।