কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের গুরুত্বপূর্ণ ২৬টি সড়কের প্রায় ৮০ কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশায় যাতায়াতে এলাকাবাসীকে চরম দূর্ভাগ পোহাতে হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর বেহাল দশায় সড়কগুলো সংস্কার না করায় উপজেলার যোগাযোগ ব্যাবস্থা কার্যত ভেঙ্গে পড়েছে। অধিকাংশ ছোট-বড় সড়ক গত ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সংস্কার না করায় এলাকাবাসীকে চরম ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এমন অনেক সড়ক রয়েছে, যে সড়কগুলো গত ১০ বছরেও সংস্কার কাজ করা হয়নি। এসব সড়কগুলোতে পা বাড়ালেই অসংখ্য খানা-খন্দক দেখা যায়। বিশেষ করে, বর্ষাকালে বিধ্বস্ত সড়কগুলো দিয়ে যাতায়াতে সবচাইতে বেশি দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে উপজেলার ছোট-বড় গুরুত্বপূর্ণ ২৬টি সড়কের প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশার চিত্র উঠে এসেছে। এসব সড়কগুলো দিয়ে এলাকাবাসীকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এল জি ই ডির) আওতায় নির্মীত ছোট-বড় গুরুত্বপূর্ণ এসব সড়কের অধিকাংশ সড়কে পা বাড়ালেই বিধ্বস্ত সড়কের হাতছানি চোখে পড়ে। বিধ্বস্ত সড়কগুলোতে ইট-সুরকি এবং কার্পেটিং উঠে ছোট-বড় খানা-খন্দকের সৃষ্টি হয়ে খানা-খন্দক দিয়ে ছোট-বড় যানবাহন এবং পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। সড়কগুলোর একেকটি খানা-খন্দক ছোট-বড় যানবাহন এবং পথচারীদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ফলে সড়কগুলো দিয়ে পথচারীসহ ছোট-বড় সব ধরণের যানবাহনকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায় সময় দূর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। এছাড়া ছোট-বড় খানা-খন্দক দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, মালবাহী ট্রাক, ট্রাকটর, মাইক্রোবাসকে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ছোট-বড় খানা-খন্দকে পড়ে যানবাহন নষ্ট হচ্ছে। সড়কগুলো দিয়ে যাতায়াতে অসুস্থ রোগীদের আরো অসুস্থ হতে হয়।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, নাঙ্গলকোটের বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়কের খারাপ অবস্থার মধ্যে অনেকগুলো সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আবার অনেক সড়কের সংস্কার কাজ অনুমোদন, টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন এবং বিভিন্ন প্রজেক্টে দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বরাদ্ধ সাপেক্ষে সংস্কারের কাজ করা হবে ।
সরেজমিনে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, নাঙ্গলকোট-মাহিনী সড়ক, অলিপুর-মন্তলী সড়ক, শান্তিরবাজার-পিপড্ডা সড়ক, ছুপুয়া-শান্তির বাজার সড়ক, রাজারবাগ-মান্দ্রা সড়ক, বাইয়ারা-মান্দ্রা সড়ক, হাসানপুর-কানকিরহাট সড়ক, ঘোড়াময়দান টাওয়ার থেকে গোহারুয়া ২০ শষ্যা হাসপাতাল সড়ক, মানিকমুড়া বাজারের উত্তর দিক থেকে আটিয়াবাড়ি সড়ক, চাঁন্দগড়া-বটতলী সড়ক, তালতলা-বাইয়ারা সড়ক, বাঙ্গড্ডা-চারজানিয়া সড়ক, মৌকরা-মোড়েশ্বর সড়ক, বটতলী-দৌলখাঁড় সড়ক, কাশিপুর-মুরগাঁও সড়ক, মন্নারা-চৌকুড়ি সড়ক, ফতেহপুর-তিলিপ সড়ক, আলিয়ারা-গোমকোট সড়ক, বাসন্ডা-বেল্টা সড়ক, ঝাটিয়াপাড়া-বেল্টা-বাসন্ডা সড়ক, মাহিনী-কুকুরিখিল সড়ক, মৌকরা-নারান্দিয়া সড়ক, চৌকুড়ি-সাতবাড়িয়া সড়ক, নাঙ্গলকোট-মেরকোট সড়ক, মেরকোট-তুঘরিয়া সড়ক, মাধবপুর-নাঙ্গলকোট স্টীল ব্রিজ সড়ক, মেরকোট-লুদুয়া সড়ক, খাঁটাচৌ (ডিপজল) থেকে গোমকোট বাজার হয়ে আলিয়ারা সড়ক।
এভাবে প্রত্যেকটি সড়কের বিভিন্ন্স্থানে ইট, সুরকি এবং কার্পেটিং উঠে বেহাল দশা বিরাজ করছে। ফলে সড়কগুলো দিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ ছোট, বড় সবধরণের যানবাহনকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা দিদারুল আলম বলেন, বাইয়ারা-মান্দ্রা সড়কটি গত প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত সংস্কার না করায় এলাকাবাসীকে চরম দূর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। পাটোয়ার গ্রামের ভেন্ডার জাহাঙ্গীর আলমবলেন, নাঙ্গলকোট-খিলা সড়কটির বিভিন্নস্থানে কার্পেটিং ও ইট, সুরকি উঠে সড়কটি যাতায়াতে একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রকৌশলী অহিদুর রহমান সিকদার বলেন, নাঙ্গলকোটের বিভিন্ন সড়কের সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলো সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। অনেকগুলো সড়কের সংস্কার কাজ অনুমোদন ও টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া অনেক সড়ক বিভিন্ন প্রজেক্টে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বরাদ্ধ সাপেক্ষে সংস্কারের কাজ করা হবে।
কুমিল্লা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ড: মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে রাস্তা ঘাটের যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে সেটি সেনামতের জন্য দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক মাসের মধ্যে একনেকে পাস হবে। একনেকে পাস হলে আমরা মেরামতের কাজ শুরু করে দেব।