ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

গ্রামীণ অর্থনীতিতে মাইলফলক দেবদারুতলার জলপাই হাট

স্টাফ রির্পোটার

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

গ্রামীণ অর্থনীতিতে মাইলফলক দেবদারুতলার জলপাই হাট

জলপাই দেখলেই মুখে পানি চলে আসে। আর যদি চোখের সামনে শতশত মন জলপাই দেখেন, তাহলে চোখ কপালে ওঠার মতো। এমন একটি জলপাই এর হাটের সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। ফল ব্যবসায়ীরা উত্তরাঞ্চলের দেবদারু তলার জলপাই হাট এক নামেই চেনেন।

 মৌসুম ঘিরে প্রতিদিন এই হাটে কম করেন ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার জলপাই বেচাকেনা হয়ে থাকে। গ্রামীণ কৃষকরা জলপাই গাছ রোপন করে প্রতি বছর জলপাই থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। যাকে বলা যেতে পারে  গ্রামীণ অর্থনীতির আরেকটি মাইলফলক। দেবদারু তলার জলপাই হাট। এটির অবস্থান উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরের উপরে অবস্থিত।


ভাদ্র মাস থেকে  জলপাই বাজারে আসা শুরু করে। চলবে  মাঘ মাস পর্যন্ত। সারা মৌসুম জুড়েই জমজমাট এই হাটে  চাষিদের বাগান থেকে জলপাই সংগ্রহ করে আড়ৎ দারের কাছে বিক্রি করে জীবিকা চলছে শতশত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পরিবারগুলোর। প্রতিদিন কম করে ৩০টি পিকআপে  আচার কোম্পানী সহ বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীরা  সর্ববৃহৎ এই জলপাই হাটে আমদানি করা জলপাই ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। বড় খরিদ্দার প্রাণ ও স্কোয়ার কোম্পানীগুলো।


গত দুইদিন ধরে দেবদারুতলার জলপাই হাট সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল, আকার, মান ও গুনের কারণে চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাচ্ছেন স্থানীয় চাষিরা। প্রতি কেজি জলপাই প্রকার ভেদে ২০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
হাটের আড়ৎদার আব্দুর রহিম বাদশা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ৫০ থেকে ৮০ টন জলপাই কেনা বেচা হয়ে থাকে। প্রায় হাজার খানেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জলপাই কিনে বাইরের থেকে আসা ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করেন। এসব পণ্য পরিবহনে ট্রেন ও সড়ক পথে সুবিধা থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে জলপাই কিনতে ব্যবসায়ীরা। এই হাটে পঞ্চগড় ছাড়াও পাশ্ববর্তী নীলফামারী জেলার ডোমার,ডিমলা,জলঢাকা, দিনাজপুর জেলার খানসামা ও বীরগঞ্জ উপজেলা থেকেও জলপাই বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়।
এই আড়ৎদার একটু মজার ছলে বললেন এই অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় ভাওয়াইগান আছে যা তিনি তার মোবাইলে থাকা সুইচ অন করে শোনালেন-
বাপুই চেংরারে গাছোত উঠিয়া দুইডা হা, ও মোক জলপই পাড়িয়া দে-তুইও দুইডা নেরে বাপু- মোক দুইডা দে-আরও দুইটা দেরে বাপুই আচারের বাদে...। তিনি বলেন জলপাই বেচা কেনার সাথে এই গানটিও দেবদারুতলার প্রাণ।
জলপাই বাগানি দেবীগঞ্জের আব্দুল রাজ্জাক জানালেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি জলপাই আবাদ করে বাজার জাত করে আসছেন, ঝুঁকি এবং পরিচর্যা ছাড়াই প্রতি বছরে মৌসুম কালীন সময়ে জলপাই বিক্রি করে যে অর্থ তিনি আয় করেন তা দিয়ে তার বছরের খরচ পার হয়ে যায়।
রাজশাহী থেকে জলপাই কিনতে আসা ব্যবসায়ী বশির মিয়া জানান, এই এলাকার জলপাই সাইজ স্বাদে ভালো হবার কারণে বাজারে এর চাহিদা অনেক। মৌসুমের পুরো সময় জুড়েই দেবীগঞ্জ থেকে জলপাই কিনে দেশের বিভিন্ন চালানে বিক্রি করেন তিনি। এ ছাড়া রাজশাহীর বিভিন্ন বাসাবাড়ির অর্ডার থাকে জলপাইয়ের। তাই প্যাকেট করে যার যেমন চাহিদা তাকে কুরিয়ারের মাধ্যমে প্রেরণ করে থাকি।
 কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানায় পঞ্চগড় ,নীলফামারী, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলায়  রয়েছে জলপাইর ছোট-বড় অসংখ্য বাগান। আরও নতুন নতুন জলপাইর বাগান গড়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর চাহিদা থাকায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় এলাকার চাষিদের মধ্যে বাগান গড়ে তোলার প্রবণতা বাড়ছে। জলপাই চাষে আশাতীত সাফল্য থাকায় চাষিদের এসব ফলের চাষ করতে কৃষি বিভাগের তদারকি বাড়ানো হয়েছে। বলা যেতেই পারে গ্রামীণ অর্থনীতিতে জলপাইন মাইলফলন স্থাপন করছে।

জাফরান

×