জমিজমা সংক্রান্ত দাপ্তরিক কাজে সরকারি ফি কম হলেও ভূমি অফিস কেন্দ্রিক দালাল চক্রের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সেবা গ্রহিতাকে কয়েকগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হতো।
সরকার নির্ধারিত নামজারির ফি খুব সামান্য হলেও একেকটি নামজারি করতে কয়েকগুন বেশি টাকা গুনতে হতো সেবা গ্রহিতাদের।
এজন্য ভূমি অফিসের নাম শুনলে সাধারণ মানুষের মনে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করতো। এমন পরিস্থিতিতে দালালের দৌরাত্ম রোধ ও ভূমি সেবা জনগনের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে ভূমির নামজারিতে অভিনব এক সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধণ করা হয়েছে জেলার গৌরনদীতে।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে সেবাকুঞ্জ নামের উদ্বোধণ হওয়া অভিনব ওই কার্যক্রমের মাধ্যমে একদিনেই জমির নামজারি করে দেওয়া হচ্ছে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে।
বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হলেও সরেজমিনে দেখা গেছে, একদিনেই নামজারি সম্পন্নের বাস্তব চিত্র। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সেবাকুঞ্জ পরিদর্শন করে সেবা গ্রহিতাদের হাতে তুলে দিয়েছেন একদিনে সম্পন্ন হওয়া ই-নামজারির কাগজপত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে মো. রাজিব হোসেন যোগদানের পর ভূমি অফিস থেকে দালালের দৌরাত্মরোধ এবং সেবাগ্রহিতাদের শতভাগ হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়াই ভূমি সেবা প্রদানের লক্ষে সেবাকুঞ্জ স্থাপন করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু আবদুল্লাহ খান সেবাকুঞ্জ উদ্বোধনের পর থেকে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সেবাকুঞ্জে অবস্থান করেন সহকারি কমিশনার (ভূমি)। সেখানে ই-নামজারির জন্য আবেদন করা ব্যক্তিদের সামনেই কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে একদিনে সম্পন্ন হয় সেবাগ্রহিতাদের কাঙ্খিত নামজারি।
একাধিক ভূমিসেবা গ্রহিতারা জানিয়েছেন, যেখানে নামজারির জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও বহুগুন টাকা খরচ করার পরেও দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাতে হতো। সেখানে সকালে আবেদন করার পর দুপুরের মধ্যেই নামজারি করে দেওয়া সত্যিই বিরল ঘটনা।
এ সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে ভূমিসেবা কেন্দ্রীক দালালের দৌরাত্ম থাকবে না। এরকম সেবা দেশের অন্যান্য উপজেলাগুলোতে চালু হওয়া দরকার।
সার্বিক বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজিব হোসেন বলেন, গৌরনদী উপজেলায় যোগদানের পর কয়েকদিনের পর্যবেক্ষনে জানতে পারি অফিসের সাথে সাধারণ সেবাগ্রহিতাদের সংশ্লিষ্টতা একেবারে নেই বললেই চলে।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী একেকটা নামজারির জন্য পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকা বা অনেক ক্ষেত্রে আরো বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কাগজপত্র সঠিক থাকার পরেও অফিসে টাকা দেওয়া লাগবে বলে হয়রানি করা হতো সেবা প্রত্যাশিদের। এজন্য একজন দালালকে সাতদিনের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছিলো।
এরপরেও রোধ করা যাচ্ছিলোনা দালালের দৌরাত্ম। বিষয়টি চরম আকার ধারন করেছিলো। যেকারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় সেবা প্রত্যাশিদের অফিসমূখী করার লক্ষে এবং নির্ভয়ে যাতে আমার কাছে আসতে পারে সেজন্য অফিসের নিচে সেবাকুঞ্জ স্থাপন করা হয়েছে।
জমির সকল কাগজপত্র সঠিক থাকা সাপেক্ষে প্রতি বৃহস্পতিবার একদিনে নামজারি করে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়।
যাদের দাখিলকৃত কাগজপত্র ত্রুটিপূর্ণ তাদেরকে পরামর্শ প্রদান করা হয়। এ কর্মসূচীর আওতায় গত এক মাসে ১৩৩টি নামজারি সম্পন্ন করা হয়েছে এবং চার শতাধিক সেবাগ্রহীতাকে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
সপ্তাহের অন্যান্য দিনে অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, একেকটা নামজারির জন্য ২৮দিন সময় নির্ধারিত হলেও সেবাকুঞ্জের মাধ্যমে সঠিক কাগজপত্র দিয়ে আবেদনের পর একদিনের মধ্যেই নামজারি পেয়ে যাচ্ছেন সেবাগ্রহিতারা।
যা গৌরনদীবাসীর জন্য ভূমি সেবায় এক নবদিগন্তের সূচনা সৃষ্টি হয়েছে। এ সেবা কার্যক্রমের ফলে দালালের দৌরাত্ম যেমন রোধ হবে, তেমনি সেবাপ্রত্যাশিদের অর্থ সঞ্চয় ও ভোগান্তি কম হবে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, একদিনে আবেদন, একদিনেই নামজারি গৌরনদী উপজেলা প্রশাসনের একটি প্রশংসনিয় উদ্যোগ। শুধুমাত্র সরকারি ফি দিয়ে নামজারি করে দেওয়ায় সেবাপ্রত্যাশিরা ব্যাপক সন্তুষ্ট। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
পর্যায়ক্রমে এ সেবা জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এসআর