ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন পরিবারের সদস্যরা
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বারবার এ দেশের জনগণ সুশাসনের পরিবর্তে দুঃশাসনের কবলে নিষ্পেষিত হয়েছে। অনেক সময় আমরা হারিয়েছি, আর সময় হারানো যাবে না। এখন জরুরি ভিত্তিতে ঐক্য সৃষ্টি করে, সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের ৩৪ তম প্রয়াণ বাষির্কীতে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেছেন। ড. কামাল হোসেনের লিখিত বক্তৃতা পড়েন গণফোরামের মিজানুর রহমান।
ড. কামাল হোসেন বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ৩ জোটের যে ঐতিহাসিক রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করতে পরবর্তী সরকারগুলো ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণেই জনগণ গণতন্ত্রের পরিবর্ত স্বৈরতন্ত্রের শাসন লক্ষ্য করছে। আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে যে, এবার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা যেন কোনো অশুভ শক্তির দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হয়। বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাসদের সহসম্পাদক রাজেকুজ্জামান, ডা. মুশতাক হোসেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, আমি সরাসরি বলতে চাই এটা কোনো প্রো-অ্যাকটিভ গভর্নমেন্ট না। প্রো-অ্যাকটিভ গভর্নমেন্ট হলে একের পর এক ইসকন বা এরকম ঘটনা ঘটত না। এগুলো কিভাবে করে। ড. কামাল হোসেন শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১৯৯০-এর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মাইলফলক ঘটনা শহীদ ড. মিলন হত্যাকা-। ’৯০-এর ২৭ নবেম্বর সংঘটিত এই হত্যাকা-কে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অগ্ন্যুৎপাতের মতো বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার পতনের পর দেশের আপামর জনগণ প্রত্যাশা করেছিল যে, এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে, মানুষ তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। কিন্তু বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য এবং রুগ্ন রাজনীতির কারণে মানুষের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় অচিরেই। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ৩ জোটের যে ঐতিহাসিক রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছিল তা বস্তাবয়ন করতে পরবর্তী সরকারগুলো ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণেই জনগণ গণতন্ত্রের পরিবর্ত স্বৈরতন্ত্রে শাসন লক্ষ্য করছে।
ড. কামাল হোসেন বলেন, নূর হোসেনের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় ’২৪-এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আরেক স্বৈরশাসকের বিদায় নিতে হয়েছে। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে প্রায় দেড় সহস্রাধিক শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ডা. মিলন, নুরসহ জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার যে কারণে জীবন দিয়েছেন তাদের স্বপ্নের আকাক্সক্ষার গণতন্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সেই আত্মত্যাগ সার্থক হবে। আমাদের এখন অঙ্গীকার করতে হবে যে, এবার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা যেন কোনো অশুভ শক্তির দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হয়।
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, শেখ হাসিনা হাজার হাজার লোক হত্যা করেছে। এত জঘন্যকাজ বাংলাদেশ তো নয়ই পৃথিবীতেও নাই। শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাসেও কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। তাদের টার্গেট কি। প্রধান বিচারপতি অপসারণে কেন আদালতে লোকজন ঢুকল। জাতীয় পার্টিতে আগুন, সচিবালয়ে ছাত্রদের বিক্ষোভ কেন হলো। এখন সরকারকে প্রধান টার্গেট ঠিক করতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা সবাই তিন জোটের রূপরেখার কথা ভুলে গেছি। তিন জোটের রূপরেখায় আচরণে কি লেখা ছিল। রূপরেখায় ছিল আমরা কেউ সাম্প্রদায়িকতা করব না। করলে তা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশাসন পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে। মোদি সরকার এবং ভারতের এক শ্রেণির মিডিয়া যেভাবে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, বাংলাদেশের বিরোধিতা, গণঅভ্যুত্থানের বিরোধিতা বা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধী যে আগ্রাসী ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে, কোনোভাবেই এই দেশের মানুষ রাজনৈতিক দল ছাত্র-জনতা সে ফাঁদে পা দিতে পারি না।