ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

শীত বাড়ার আগেই প্রস্তুতি রাজধানীবাসীর

পোশাকে উষ্ণতার খোঁজ, শপিংমল থেকে ফুটপাতে কেনাকাটা 

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

পোশাকে উষ্ণতার খোঁজ, শপিংমল থেকে ফুটপাতে কেনাকাটা 

শীত বাড়ার আশঙ্কা আছে এবার। বার্তা পেয়ে আগেভাগেই শীতবস্ত্র কেনায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন রাজধানীবাসী।

শীত নিয়ে উচ্ছ্বাস নতুন কিছু নয়। বাঙালি এই ঋতুর প্রতি ভীষণ দুর্বল। সময়টা উপভোগ করার চেষ্টা করেন সবাই। তবে এবার শীত একটু বেশি পড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। পূর্বাভাসের সঙ্গে বাস্তবেরও বেশ মিল পাওয়া যাচ্ছে। এরই মাঝে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে এসেছে। ফলে সবার গায়েই উঠে গেছে শীতবস্ত্র। রাজধানী শহরেও প্রভাব পড়েছে শীতের। হাল্কা শীতবস্ত্র গায়ে না দিয়ে কেউ আর ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সকালে সন্ধ্যায় এবং রাতে পরার জন্য ভারি  শীতবস্ত্রও সঙ্গে রাখছেন কেউ কেউ। এভাবে আনুষ্ঠানিক শুরুর আগেই শীতের ফ্যাশন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। 
মার্কেট শপিংমলেও বাহারি শীতবস্ত্র। অন্যসব কেনাকাটা ভুলে শীতবস্ত্রে উষ্ণতা খোঁজার চেষ্টা করছেন ক্রেতা। বৃহত্তর শপিংমল বসুন্ধরার উদাহরণ টানা যেতে পারে। সেখানে অধিকাংশ পোশাকের দোকানে দেশী-বিদেশী শীতবস্ত্রের পসরা। কিছু বিদেশী আউটলেটে এমন বস্ত্রও দেখা গেল যেগুলো মূলত শীতপ্রধান দেশে ব্যবহার হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কেন? উত্তরে শোরুমের ম্যানেজার মাসুদুর রহমান বলছিলেন, দেশেও এবার তীব্রতর হতে পারে শীত। সে ভাবনা মাথায় রেখেই সংগ্রহ সাজিয়েছি আমরা। যারা রাতের বেলায় লম্বা সময় বাইরে কাটাবেন তাদের এই শীতবস্ত্রগুলো বিশেষ কাজে আসবে। বিক্রিও আশানুরূপ বলে জানান তিনি। 
শাহীন নামের এক তরুণ ক্রেতা বলছিলেন, হালকা শীতে পরার মতো জামাকাপড়ই বাসায় বেশি। তবে এবার শীত বাড়ার কথা শুনেছি। তাই ভারী জ্যাকেট কিনলাম। কয়েক দিন গায়ে দিতে পারলেই শখটা মিটে যাবে বলে জানান তিনি!        
শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে আবার দেশীয় পোশাকের পসরা। ঋতু ভিত্তিক বিভিন্ন পোশাক পাওয়া যায় মার্কেটটিতে। এখন শীতবস্ত্রই প্রধান। নিত্য উপহার এবং কাপড়ই বাংলা নামের দুটি ব্র্যান্ডের শো রুমে গিয়ে দারুণ সব চাদর চোখে পড়ল। এসব চাদরে প্রিয় কবিতার পঙ্ক্তি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো চাদরে রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দের হাতের লেখা! উন্নত রুচির ক্রেতারা আগ্রহ নিয়ে চাদরগুলো কিনছেন। সাবিহা মুনতাহা নামের এক ক্রেতা বলছিলেন, শীত মোকাবিলায় এই ধরনের চাদরই তার পছন্দ। কারণ চাদরে এক ধরনের মায়া থাকে। তাছাড়া বেশি শীত বা কম শীতেও ব্যবহার করা যায়।  
অবশ্য শীতের প্রস্তুতিটা অধিক টের পাওয়া যায় ফুটপাতে নামলে। ঢাকার বেশিরভাগ ফুটপাতের ছবি এরই মাঝে পাল্টে গেছে। সাধারণ পোশাক বাদ দিয়ে দোকানিরা শুধু শীতবস্ত্র বিক্রিতে ব্যস্ত। গুলিস্তানের ফুটপাতগুলোতে ব্যাপক হাঁকডাক দিয়ে লোক জড়ো করছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারাও দুই হাতে কাপড় ঘাঁটছেন। ঘাটছেন। দর কষাকষি করছেন। তার পর কিনে বাড়ি ফেরা। পুরো ব্যাপারটিতে এক ধরনের উৎসব উৎসব ভাব আছে।  
হারিস নামের এক বিক্রেতা বলছিলেন, ‘একইবার তো সেইরকম শীত নামতাছে। আরও নামুক। নামলেই ধরেন যে আমরার লাভ। সস্তায় ভালো জিনিস দেই। যারা কিনে তারারও লাভ। এ জন্যই বেশি ভিড়।’ 
আগেভাগে শীতের জামা কেনার কারণ জানতে চাইলে খাইরুল মুন্সী নামের এক প্রবীণ বললেন, আমরা তো গরিব মানুষ। শীতের মধ্যেও কাজ করতে হয়। আগেভাগে শীত এসে ধরে ফেলে। তাই কেনাকাটাও করতে হয় আগেভাগে।    
শুধু পোশাক নয়, জুতোও বিক্রি হচ্ছে দেদার। জুতো বলতে ক্যাডস। ফার্মগেটে বাটার শো রুমে গায়ে গা লাগা ভিড়। শোরুমের সামনেই ফুটপাত। সেখানেও প্রচুর ক্যাডস সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে চলছে বেচাকেনা। 
সব মিলিয়ে শীতের প্রস্তুতি পর্বটা ব্যাপকভাবেই দৃশ্যমান হচ্ছে। আর কদিন পর পৌষ। পৌষের প্রথম দিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শীতের শুরু হবে। ততদিনে নিশ্চয়ই আরও জমে উঠবে কেনাকাটা।

×