বুধবার চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় জামে মসজিদ মাঠে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজায় মানুষের ঢল
চট্টগ্রামে তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। নগরীতে থমথমে পরিবেশ। চলছে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল। বিএনপি, জামায়াত-ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পৃথক পৃথক সমাবেশে দাবি উঠেছে ইসকনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন অবস্থানে। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন মঠ-মন্দির ও বৌদ্ধ বিহারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক প্রহরা মোতায়েন করা হয়েছে।
সাইফুল হত্যার প্রতিবাদে বুধবার আইনজীবীদের আদালত বর্জন কর্মসূচি পালিত হয়। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি আজ বৃহস্পতিবার আবারও পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। এর আগে বুধবার ডাকা কর্মবিরতিতে চট্টগ্রামের কোনো আদালত চলেনি। এ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে বিএনপি, জামায়াত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে সাইফুল হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি বিধানের আহ্বান জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি ইসকনকে উগ্র জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে এটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি উঠেছে।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে অ্যাডভোকেট ক্লার্ক অফিসে কিছু আইনজীবী আগুন দিয়েছেন। অপরদিকে মঙ্গলবার রাত ও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সন্দেহভাজন ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মী বলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সাইফুল হত্যাকা-কে নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অপরদিকে ইসকন সমর্থকদের হাতে নৃশংস কায়দায় নিহত চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে বুধবার অশ্রুসজল হাজার হাজার মানুষের ৪ দফা জানাজায় শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। বিকেলে মরহুমকে তার নিজ বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতির গ্রামে দাফন করা হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহানগরে ও গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়ায় জানাজায় স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। এ সময় সাইফুলের করুণ মৃত্যুতে শোকাহত মানুষের চোখ ছিল অশ্রুসজল। প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে। দ্বিতীয় দফা জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে, তৃতীয় এবং চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয় লোহাগাড়া সদরে ও চুনতিতে নিজ বাড়িতে।
এদিকে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকা-ের ঘটনায় চট্টগ্রামে সর্বত্র বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে থাকায় বড় ধরনের কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু মঙ্গলবার হত্যাকা-ের ঘটনার পর ফিরিঙ্গিবাজার ও বান্ডেল সেবক কলোনি এবং হাজারি লেনের মন্দিরে বিক্ষিতভাবে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বুধবার চট্টগ্রাম আদালতে অ্যাডভোকেট ক্লার্ক অফিসে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ কিছু আইনজীবী।
গত মঙ্গলবার সনাতনী জাগরণ জোট নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন সকালে আদালতে নাকচ হওয়ার পর তার সমর্থক ও সনাতনী সম্প্রদায়ের উচ্ছৃঙ্খল কিছু লোকজন বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণ ও সন্নিহিত এলাকাজুড়ে ব্যাপক ভাঙচুরের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওইদিন বিকেলে ওই সংঘর্ষ ছড়িয়ে যায় আদালতের পাদদেশ ও সন্নিহিত এলাকায়। এ সময় অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে কোর্ট রোডের রঙ্গম কনভেনশন সেন্টারের গলিতে গিয়েছিলেন তরুণ আইনজীবী সাইফুল। এ সময় কিছু সন্ত্রাসী তাকে ঘেরাও করে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে জখম করে। তার গলার পাশেও ছুরি চালায় সন্ত্রাসীরা। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
চিন্ময়ের অনুসারী ও ইসকন সমর্থিতরা বুধবার কোনো কর্মসূচি দেয়নি। তবে সাইফুল হত্যাকা-ে প্রতিবাদ, দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার এবং ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে জেলা আইনজীবী সমিতি, বিএনপি, জামায়াত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে পৃথক পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এসব সমাবেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ দেশে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে অভিযোগ করে অবিলম্বে দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
নিহত সাইফুলের প্রথম দফা জানাজায় চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা এবং আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে। এ জানাজায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের আমির শাহজাহান চৌধুরী, বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ, মহানগর ও জেলার জামায়াতে ইসলামী, বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও হাজার হাজার মানুষ।
সন্দেহভাজন ২৭ জন গ্রেপ্তার মামলা ৩ ॥ মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সহিংসতায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বুধবার বিকেলে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, মঙ্গলবারের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যৌথবাহিনীর অভিযানে ৩০ জনকে আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৬ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মী বলে জানা গেছে।
অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় সিএমপির কোতোয়ালি থানায় ৩টি মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর ২৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় মঙ্গলবার রাত ১১টার পর নগরীর পাহাড়তলী সরাইপাড়া এলাকা থেকে ৬ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
সিএমপি সূত্র জানিয়েছে, আটককৃতরা হলো যুবলীগ কর্মী আব্দুর রহিম, মীরসরাই মায়ানি ইউনিয়নের যুবলীগ সভাপতি মো. আবু হেনা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মমিনুল ইসলাম, মীরসরাই খৈয়াছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মামুনুর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন খান, ১৩ নম্বর মায়ানি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াছিন উল্লাহ। সিএমপি জানিয়েছে- কিছুদিন ধরে তারা চসিকের সাবেক কাউন্সিলর ছাবেরের বাসায় অবস্থান নিয়েছিল। মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে এরা একটি মিছিলের আয়োজন করার খবর পেয়ে পাহাড়তলী থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অফিসে আগুন ॥ সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকা-ের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে, চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অফিসে যেটাকে মুন্সি সমিতি নামে অভিহিত করা হয়, সেখানে আগুন দিয়েছে। এতে মূল্যবান বেশ কিছু কাগজপত্র পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ক্লার্ক সমিতির নেতারা।
বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের অভিযোগ, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন মঙ্গলবার নামঞ্জুর হওয়ার পর ইসকন সদস্যরা তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান আটকে দিয়েছিল। এ সময় মুন্সি সমিতির সদস্যদের অনেকে বিক্ষোভকারীদের খাবার পানিসহ বিভিন্ন কিছু সরবরাহ করে। এ ছাড়া মুন্সি সমিতির সদস্যরা ফেসবুকে উসকানিমূলক বিভিন্ন পোস্ট দিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের পক্ষে আরও বলা হয় এই মুন্সি সমিতির অফিস থেকে ইসকনকে সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে।
এরা আইনজীবীদের অংশ, তাই তারা এটা করতে পারে না। ফলে আইনজীবীদের মধ্যে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আইনজীবীদের পক্ষে আরও বলা হয়, মুন্সিখানার নাম দিয়ে সব ধরনের অপকর্ম এ অফিসে হয়। চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে প্রায় ১ হাজার ৮শ’ আইনজীবীর চেম্বার রয়েছে। অ্যাডভোকেট ক্লার্করা সময়মতো চেম্বারে যায় না। অপরদিকে মুন্সি সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিপন কান্তি নাথ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অফিসে রক্ষিত নথি, ব্যাংকের স্টেটমেন্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আলমারি ভেঙে বের করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার দাবি, সমিতি অফিসে মঙ্গলবার কোনো বহিরাগত প্রবেশ করেনি। এ সংগঠনে সব সম্প্রদায়ের সদস্যরা কাজ করে।
চট্টগ্রামে আইনজীবীদের আজও কর্মবিরতি ॥ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আজ বৃহস্পতিবারও পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। ফলে বিচার ব্যবস্থায় অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আইনজীবীদের এ আহ্বানে চট্টগ্রাম আদালতের সকল আইনজীবী স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে সকল আইনজীবী সাইফুল হত্যাকা-ের বিচার দাবি করে বলেছেন, অবিলম্বে ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পাশাপাশি দোষী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা আইনজীবী সমিতির নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, মঙ্গলবার উচ্ছৃঙ্খল কিছু লোক আইনজীবীসহ অনেকের যানবাহন ভাঙচুর করেছে। তারা আদালত প্রাঙ্গণে মসজিদেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালিয়েছে।
অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ম-প ভাঙচুর ॥ মঙ্গলবার আদালত এলাকায় ঘটনার পর নগরীর বেশকিছু অলিগলিতে চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এরপর সন্ধ্যার পর থেকে নগরীর রঙ্গম টাওয়ারের পাশে থাকা বান্ডেল সেবক কলোনিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় সেখানে কাঁচাঘর ও ম-প পুড়ে যায়। অপরদিকে হাজারি লেনের জয়কালী ম-প ও ফিরিঙ্গি বাজার লোকনাথ ম-পেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপরই রাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় বিভিন্ন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়। ইসকন নিষিদ্ধের দাবি হেফাজতের ॥ এদিকে ইসকনকে শীঘ্রই নিষিদ্ধ করা এবং আইনজীবী আলিফ নিহতের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
হেফাজতের বিবৃতি ॥ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামকে হত্যার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান এক যুক্ত বিবৃতিতে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন। হেফাজত নেতারা বিবৃতিতে বলেন, দেশবিরোধী বিশ্বাসঘাতক চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইসকনের কর্মী-সমর্থকরা চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে আইনজীবী সাইফুলকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ভারতের উসকানি ও মদদে এই ষড়যন্ত্রমূলক অরাজকতা তৈরি করা হয়েছে। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ইসকনের কর্মী-সমর্থকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।
সন্ত্রাসী কার্যক্রমের দায়ে হিন্দুত্ববাদী ইসকনকে অতিসত্ত্বর নিষিদ্ধ করতে হবে। মুসলমানের রক্তখোর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী এদেশে ‘হিন্দু কার্ড’ খেলে তাদের আধিপত্যবাদ কায়েম রাখতে চায়। তাদের সেবাদাস ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর থেকে ভারত উন্মাদ হয়ে আছে। সে কারণে একের পর এক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
বিএনপি নেতা গিয়াস কাদেরের বিবৃতি ॥ ইসকনকে জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন. ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলেও প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরের তাদের দোসররা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও অখ-তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ইসকনের জঙ্গি সদস্যরা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর।
এরা প্রকাশ্যে দিবালোকে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করেছে, মসজিদে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণœ রাখতে জঙ্গি সংগঠন ইসকনের কর্মকা- কঠোর হস্তে দমন করার আহ্বান জানান তিনি।
আইনজীবী হত্যায় ৩ মামলা ॥ চট্টগ্রাম আদালতে পুলিশের সঙ্গে ইসকন অনুসারীদের সংঘর্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায় মোট তিনটি মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১ হাজার ৪শ’ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। তবে কাদের আসামি করা হয়েছে এ সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কিছু জানাতে পারেননি।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ জানিয়েছেন, কোতোয়ালি থানা পুলিশ বাদী হয়ে এ তিনটি মামলা করেছে। একটি মামলার ঘটনাস্থল আদালত প্রাঙ্গণ, ওই মামলায় এজাহারনামীয় ৪৯ জনকে এবং ৬শ’ থেকে ৭শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। রঙ্গম সিনেমার হলের সামনের ঘটনায় ১৪ জনকে এজহাজারনামীয় এবং ৩শ’ থেকে ৪শ’ অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়েছে। আর কোতোয়ালি মোড় এলাকার সংঘটিত ঘটনার অভিযোগে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২৫০ থেকে ৩শ’ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তবে সিএমপির কোনো কর্মকর্তাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এসব মামলার আসামিদের নাম জানাতে পারেননি।
বুধবার আইনজীবী সাইফুলের জানাজা শেষে জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের আমির শাহজাহান চৌধুরী মঙ্গলবারের সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণকে হিন্দু হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর পরও কেন এসব তা-ব।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট পর থেকে আমি চিন্ময়সহ ইসকনের বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। মতবিনিময় করেছি চট্টগ্রামে যাতে কোনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না হয় এবং কোনো ধরনের উগ্রতা না হয় সে জন্য বারবার জনসভা ও মতবিনিময় করেছি। জেএম সেন হলে মতবিনিময় করেছি, শ্যামা পূজা উপলক্ষে মতবিনিময় করেছি, প্রবর্তকে গিয়েছি। তাদের আমি জানিয়েছি, ১৬ বছরে যা সংঘটিত হয়েছে তাতে মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দুরাও অত্যাচারিত, নির্যাতিত হয়েছে। আমি বলেছি, নতুন বাংলাদেশে একসঙ্গে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সামনের দিকে অগ্রসর হই। আমাদের আমিরও বলেছেন এ দেশে কোনো সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু বলতে কিছু থাকবে না। চিন্ময় বারবার কর্মসূচি ঘোষণা করছে।