তুলশীগঙ্গা নদী পুনঃর্খননে দুই উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের আমন চাষের নিরাপত্তা ফিরেছে
তুলশীগঙ্গা নদী পুনর্খনন করায় ২৮ বছর পর সুফল পাচ্ছে জয়পুরহাটের কৃষকরা। এখন তাদের মুখে হাসি। বছর বছর আমন ফসল না পাওয়ার দুঃখ তাদের ঘুচেছে। ১৯৯৫ সালে নদীর উভয় তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হলেও নদী খনন না হওয়ায় সুফল পাননি কৃষকরা। গভীরতা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর পানি মাঠে ঢুকে প্লাবিত হয়ে নষ্ট হতো এলাকার হাজার হাজার হেক্টর আমন খেত। সেই থেকে নদী খননের দাবি ছিল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের। অবশেষে তুলশীগঙ্গা নদী পুনর্খনন করার পর পাল্টে গেছে এলাকার সেই চিত্র। খননের পর ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বর্ষার পানি দ্রুত নদী পথে অপসারিত হওয়ায় নদীর দুই তীরে ফসলের মাঠগুলোতে এখন চাষ হচ্ছে আমন ধান। প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে এবার আমন ধান চাষ করতে পেরে খুশি এলাকার কৃষকরা। নদী তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নদী পুনর্খননের ফলে উভয় তীরের জমিতে চলতি মৌসুমে ব্যাপক হারে আমন ধান চাষ হয়েছে। বিশেষ করে জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া, ধারকী, সোটাহার, সতিঘাটা, ক্ষেতলালের বটতলী, ইকরগাড়া, আটি দাশড়া, হাওয়ার বিল, দেওগ্রাম এবং আক্কেলপুরের হাসতা বসন্তপুর, জাফরপুর ও অনন্তপুর মাঠে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে গত বছর থেকে আমন ধান চাষ করছে কৃষকরা। অথচ নদীর গভীরতা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে গত ২৮ বছর ধরে নদীর দু’পাশের এসব মাঠের হাজার হাজার হেক্টর জমি বর্ষার পানিতে ডুবে থাকায় আমন ধান চাষ করতে পারেনি কৃষকরা। খননের ফলে ফলে বর্ষার পানি নদী পথে দ্রুত অপসারিত হওয়ায় বর্তমানে প্লাবিত হচ্ছে না ফসলের মাঠ। ফলে খুব সহজেই আমন ধান চাষ করতে পারছে তুলশীগঙ্গা নদীর দু’পারের কৃষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ১৯৯৫ সালে তুলশীগঙ্গা নদীর ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলা অংশের উভয় তীরে দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। একই সঙ্গে নদীর পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে ফসল সেচের জন্য তিন থেকে পাঁচ জল কপাট বিশিষ্ট ১৪টি স্লুইসগেটও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে স্লুইসগেটের যন্ত্রাংশ চুরি যাওয়ার পাশাপাশি নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বর্ষা মৌসুমে ¯ুøইসগেটগুলো অকেজো থাকে। ফলে বর্ষায় নদী উছলে পানি ঢুকে পড়ে মাঠে। এতে এলাকার ছয়-সাতটি মাঠ প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার হেক্টর চাষের আমন খেত ডুবে যেত। পানিবন্দি হয়ে পড়ত নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর হাজার হাজার মানুষ। অনেক সময় প্রবল স্রোতে পানিবন্দি থেকে গ্রামগুলোকে রক্ষা করতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও কেটে ফেলতে হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের। বাঁধের সুফল পেতে নির্মাণের পর থেকে তুলশীগঙ্গা নদী পুনর্খননের দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। অবশেষে ২০২০ সালে জেলার পাঁববিবির বহরমপুর থেকে আক্কেলপুরের দক্ষিণ গণিপুর পর্যন্ত তুলশীগঙ্গা নদীর ৫৪ কিলোমিটার অংশ পুনর্খননের উদ্যোগ নেয় জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড। যেখানে ব্যয় হয় ৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তুলশীগঙ্গা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর দু’পাশের কয়েকটি বিল বর্ষার পানিতে জলাবদ্ধ হয়ে থাকত। এতে জেলার বিশাল অঞ্চলজুড়ে আমনসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতো। এজন্য নদীর জয়পুরহাটের ৫৪ কিলোমিটার অংশ পুনর্খনন করা হয়েছে। ফলে এখন জলাবদ্ধতা বা বন্যার আশঙ্কা দূর হওয়ায় কৃষকরা বর্তমানে আমন ফসল চাষ করতে পারছে। এছাড়া নদীতে চাহিদামতো পানি থাকায় শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি রবি ফসলেও সেচ দিতে পারবে।