কেশবপুরের বারুইহাটি চৌরাস্তার রোমান ব্রিকস্ ইটভাটাটি বুধবার সকালে আংশিক ভেঙ্গে দিয়েছে পরিবেশ অদিদপ্তর। ইতোপূর্বে একাধিকবার ভাটাটির সকল কার্যক্রম পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এবছর আবারও ভাটার কার্যক্রম শুরু করে। গত মঙ্গলবার এলাকাবাসী রোমান ব্রিকস্ বন্ধসহ ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পরিবেশ উদেষ্টা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ করে। এরপর বুধবার সকালে পরিবেশ অধিদপ্তর বুল্ডোজার দিয়ে রোমান ব্রিকস্রে আংশিক ভেঙ্গে দেয়। ভাটার চিপনি ভাঙ্গা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারী নুর আলী মোড়ল। তিনি জানান, ভাঙ্গার সময় ভাটা মালিকের সাথে কথা বলে সামান্য ভেঙ্গে তারা চলে গেছেন। আমাদের সেখানে যেতেও দেয়া হয়নি। বুধবার সকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের পরিচালক সাদিকুুর রহমান, উপ-পরিচালক এমদাদুল হক ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমান নেতৃত্বে ইটভাটাটির আংশিক ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। পরিচালক বা উপপরিচালকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কেউ ফোন রিসিভ করেনি।অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার বারুইহাটি গ্রামে চৌরাস্তায় রোমান ব্রিকস্ ইটভাটাটি গত ২৫ অক্টোবর থেকে আবারও তাদের কার্যক্রম শুরু করে। একাধিকবার ভাটাটির সকল কার্যক্রম পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া হলেও ভাটা মালিক সিদ্দিকুর রহমান পতিত সরকারের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়ার কারণে প্রশাসনকে বৃদ্ধাআঙ্গুল দেখিয়ে ভাটাটি নিদ্ধিধায় চালিয়ে আসছিল। এলাকার ভুক্তভুগীরা প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানী ও মারপিট করা হতো। যশোর কোর্টে ওই মামলা চলমান রয়েছে। এলাকার ৩ ফসলী কৃষি জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে এলাকার কাঁচা ও পাকা রাস্তা নষ্ট করে মাটি বহনকারী ৮/১০টি গাড়ীতে করে বিরতিহীনভাবে আনা নেওয়া করা হচ্ছিল। যার ফলে এলাকার শিক্ষার্থী ও পথচারীরা জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করছে। তাছাড়া বায়ু দুষণ ও শব্দ দুষণের মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে মোবাইল ফোনে অভিযোগ দিলেও কোন বাবস্থা গ্রহণ করা হয়নি অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছিল কৃষি জমিতে আইন বহির্ভূতভাবে "মেসার্স রোমান ব্রিকস্" ইট ভাটাটি পরিচালনা হওয়ায় ভাটাটির বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক একটি জনস্বার্থমূলক মামলা (৩৩৭২/২০২২) দায়ের করেন। উক্ত মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে ২৬ এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখে মহামান্য আদালত "মেসার্স রোমান ব্রিকস্ ইট ভাটাটির অননুমোদিত ও অবৈধভাবে স্থাপন ও পরিচালনা প্রতিরোধে বিবাদীগণের ব্যর্থতা সংবিধান দেশে প্রচলিত আইন ও আদালতের ২৩ জানুয়ারী-২০১৯ তারিখে প্রদত্ত রায়ের লংঘন বিধায় কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও আইনগতভাবে ভিত্তিহীন ঘোষণা করা হবে না। একই সাথে ইটভাটাটি বর্তমান স্থান থেকে অপসারণ ও বারুইহাটি মৌজায় কৃষি জমি, ফসল ও কৃষকের অধিকার রক্ষর নির্দেশনা বিবাদীগণের উপর কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত। কিন্তু ভাটা মালিক সকল আইন অমান্য করে নিজের ইচ্ছামতো গায়ের জোরে ভাটাটির কার্যক্রম চলমান রেখেছিল।মেসার্স রোমান ব্রিকস্ ইট ভাটাটি বন্ধসহ ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ দূষণরোধে ভুমিকা রাখার পাশাপাশি কৃষকেরা ৩ ফসলী কৃষি জমিতে সুষ্ঠ পরিবেশে চাষাবাদ করতে পারে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মঙ্গলবার এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা, পরিবেশ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের উপ-পরিচালক ও কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। গত ১৯ নবেম্বর বেলার পক্ষ থেকে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে যশোর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অনুরোদ করে।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর রোমান ব্রিকস্রে কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় হয়। তবে ভাঙ্গার ব্যাপারে তাকে জানানো হয়নি।
কেশবপুরের আলোচিত রোমান ব্রিকস্ আংশিক ভেঙ্গে দিয়েছে প্রশাসন
শীর্ষ সংবাদ: