ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

স্বাস্থ্য সেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে!

নিজস্ব সংবাদদাতা,ফটিকছড়ি

প্রকাশিত: ১০:০২, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

স্বাস্থ্য সেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে!

উপজেলা ফটিকছড়ি স্বাস্থ্য সেবা

২৭ নভেম্বর -দেশের বৃহত্তম  উপজেলা ফটিকছড়ির  স্বাস্থ্য সেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। উপজেলার বিভিন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়নে স্বাস্থ্য সেবায় জনদূর্ভোগ লাঘব করতে অধিকাংশ স্থানীয় দাতাদের জায়গায় নির্মিত ৫৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২০টির অবস্থা খুবই করুন। কোন কোন ক্লিনিকে রীতিমত চিকিৎসক না যাওয়ায় রোগীরা সারাক্ষণ অপেক্ষা করে চলে আসতে বাধ্য হয়। ঔষধ না পাওয়া, চিকিৎসকের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষাসহ নানা কারণে এ উপজেলার চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ২৫/৩০ বছর আগে নির্মিত জরাজীর্ণ ভবনে চালানো হচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক উপজেলার বাগান বাজার,নারায়নহাট, ভূজপুর ও খিরাম ইউনিয়নের দূর্গম এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত বলে জানা যায়। এই নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট উপরি মহলে লিখিত ভাবে জানালেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। মূলত গ্রামীন জনগনের স্বাস্থ্য সেবার জন্য এসব ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়। এগুলো দেখার জন্য যে স্ব স্ব ক্লিনিক এলাকার ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কমিটি আন্তরীকতার সহিত  দেখলে  ক্লিনিক গুলোর ছোট ছোট সমস্যার সমাধান সম্ভব হতো।

জানাগেছে,উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় ৫৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। জনসংখ্যা বিবেচনায় ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলির অবস্থান। এর মধ্যে সুয়াবিল ইউনিয়নের শোভনছড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকে গত ৫ বছর ধরে,লেলাং ইউনিয়নের রায়পুর কমিউনিটি ক্লিনিক,ধর্মপুর ইউনিয়নে আমতলি সামশুদ্দিন কমিউনিটি ক্লিনিক ও নাজিরহাট পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের ছাপা-লায়লা কমিউনিটি ক্লিনিকে গত এক বছর ধরে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) নাই। ফলে ওই সব ক্লিনিকে সেবা কার্যক্রম চলে সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন। তাও অন্য ক্লিনিকের সিএইচসিপি দিয়ে চালানো হচ্ছে। যে ক্লিনিক থেকে সিএইচসিপি নিয়ে আসা হচ্ছে সেসব ক্লিনিক চালানো হচ্ছে স্বাস্থ্য সহকারী দিয়ে।এসব কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে বিদ্যুৎ সুবিধা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন গুলোতে দেখা দিয়েছে নানান সমস্যা,যা এখন ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। দেখলে মনে হয় দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত ভবন। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলছে ফটিকছড়ির স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। 

এদিকে, ফটিকছড়িতে কর্মরত ৫৫ জন সহ সারা দেশের সিএইচসিপি গণ গত ৬ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।  

বর্তমানে প্রতিটি ক্লিনিকের জন্য দৈনিক ২২ পদের ঔষুধ বরাদ্ধ রয়েছে। সরবারহকৃত ঔষুদের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু ঔষুদের চাহিদা বেশী থাকলেও তা পর্যাপ্ত না। 

সূত্র মতে,উপজেলার প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন পৌরসভার কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন গুলোতে স্ব স্ব ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। ফটিকছড়ি পৌর সভার উত্তর রাঙ্গামাটিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো: হেলাল উদ্দীন বলেন,অত্র ওয়ার্ডের রোগী তো আছেই,সে সাথে পাশ্ববর্তী ওয়ার্ড থেকে ও রোগী আসার কারনে সরকারী ভাবে পাওয়া ঔষধ দ্রূত শেষ হয়ে যায়।ফলে ঔষধ সংকট দেখা দেয়। তবে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী ঔষধ সরবরাহ করা গেলে সেবা আরো প্রসারিত হতো। তিনি আরো বলেন,উপজেলার ৫৫ জন সহ সারা দেশের প্রায় ১৪ হাজার সিএইচসিপি'র গত ৬ মাস যাবৎ বেতন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছ। 

দাতঁমারা ইউনিয়নের বাসিন্দা মুহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আয়তনের চেয়ে বড় এ ইউনিয়নে চিকিৎসা সেবা খুবই কম মানুষে পাচ্ছে। ইউনিয়নের হেয়াঁকো সরকার পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে সপ্তাহে ৫দিন  চিকিৎসক আসেন। তবে ঔষুধ সীমিত 
হওয়াতে বাহির থেকে ও ঔষধ ক্রয় করে রোগিরা। 

লেলাং ইউনিয়নের বাসিন্ধা মুহাম্মদ ফরিদুল আলম জানান,  প্রায়শঃ এখানকার কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকে। খোলা থাকলে প্রচুর রোগী হয়। তিনি জনবহুল লেলাং ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিদিন খোলা রেখে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে জানান। 
ধর্মপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের অবস্থিত  আজাদী বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা প্রাপ্তি রীতা দাশ জানান,সিকিৎসক

প্রায়ই দেরীতে আসেন। অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। ২টার পর গেলেতো চিকিৎসককে  পাওয়াই যায়না। ফিরে যেতে হয় অনেক রোগীকে। 

এই নিয়ে উক্ত কমিউনিটি ক্লিনিকের সভাপতি স্থানীয় মেম্বার আবুল হাসেম জানান, সিএইচসিপির বাড়ি দূরে হওয়াই উনার আসা-যাওয়াই একটু দেরী হয়। স্থানীয় কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে ভালো হতো। এছাড়া সেবা নিয়ে রোগীরা সন্তুষ্টু বলে তিনি জানান।

জানতে চাইলে ক্লিনিকের কমিউনিট হেলথ কেয়ার প্রোভাউটার মুহাম্মদ ফরহাদ উদ্দিন জানান,ঔষুধ ও জনবল সংকটসহ উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে বিভিন্ন মুখী সমস্যা রয়েছে।  ৬মাস ধরে সিএইচসিপিগণ বেতন পাচ্ছে না। অথচ  ক্লিনিক গুলোতে গ্রামীণ পর্যায়ের জনসাধারণের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ফলে নানাবিধ সমস্যার কারণে স্থানীয়দের কাছে ক্লিনিক গুলোর বদনাম হচ্ছে। 

জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ আরেফিন আজিম জানান, দৈনিক গড়ে ৫০-৬০জন রোগী উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সেবা নিচ্ছেন। এতে রোগীরা সন্তুষ্টু। জরাজীর্ণ ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং সিএইচসিপি নিয়োগের ব্যাপারে আমি চিটি পাঠিয়েছি আশাকরি খুব শিঘ্রই কাজ হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো আমার তদারকিতে আছে। এরপরও যে সব কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে; তা আমি কঠোর হাতে দমন করবো।  


 

আর কে

×