সাইফুল ইসলাম আলিফ
রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পু-রীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করার ঘটনায় মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকাজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘর্ষ চলাকালে একজন আইনজীবী প্রাণ হারিয়েছেন। তার নাম সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫)। তিনি হাইকোর্টবারের সদস্য ছিলেন। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সংঘর্ষ চলাকালে অন্য কয়েক আইনজীবীসহ প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ৬ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার নিন্দা জানিয়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমান আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে তাদের কর্মী দাবি করে এ হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সাইফুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় আজ চট্টগ্রামের সকল আদালতে আইনজীবীরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে। এতে অংশগ্রহণকারীরা এ হত্যার জন্য ইসকন ও সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটকে দায়ী করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর তার অনুসারীরা মধ্যে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা আদালত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্যে বাধা প্রদান করে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরে একটি মিছিল এসে চড়াও হলে তা ত্রিমুখী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
সোমবার সনাতনী জাগরণ জোটের মুখমাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা থাকায় মঙ্গলবার সকালে নিয়ে আসা হয় সিএমএম আদালতে। তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসার খবরে সনাতনী সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ আদালত প্রাঙ্গণে জমায়েত হতে থাকেন। এ সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র্যাব ও এপিবিএন সদস্য মোতায়েন করা হয়। সকাল ১০টার পর চিন্ময়কে আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে আসার পর সনাতনী সম্প্রদায়ের সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
‘জয় শ্রীরাম’ ‘জয় শ্রীরাম’ নামে মুহুর্মুহু স্লোগান দিয়ে তার মুক্তির দাবি জানিয়ে আদালত এলাকাকে প্রকম্পিত করা হয়। এ অবস্থায় পুলিশের কড়া প্রহরায় চিন্ময়কে হাজির করা হয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির ৬ষ্ঠ বিচারক কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে। চিন্ময়ের জামিনের জন্য ৫১ আইনজীবী আদালতে হাজির হন। এ সময় আদালত পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আইনজীবী ও উৎসুক জনতার ভিড়ে আদালত ও বাইরে ভিন্ন আবহের সৃষ্টি হয়।
আদালতে তার পক্ষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার খবরে আদালত প্রাঙ্গণে প্রায় ৩ ঘণ্টা প্রিজন ভ্যানের সামনে বিক্ষোভ করেন সনাতনী সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী পুরুষ ও সাধু সন্ন্যাসীরা। পরে পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সনাতনী সম্প্রদায়ের বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করেন। এরপর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় সনাতনী জোটের এ নেতাকে। এ সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় বেশকিছু যানবাহন ভাঙচুর হয়, আহত হয় কয়েকজন। আদালত প্রাঙ্গণে আসা সাধারণ মানুষ ভয়ে দিগি¦দিক ছুটে পালাতে থাকে।
চিন্ময়কে কড়া নিরাপত্তায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পরও বিকেল ৩টা নাগাদ চট্টগ্রাম আদালতের আশাপাশের এলাকায় সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করে উত্তেজিতদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাতে থাকে। এ সময় কিছু ইটপাটকেল আদালত প্রাঙ্গণের মসজিদে গিয়ে পড়লে মসজিদের জানালা ও দরজার কাঁচ ভেঙে যায়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
মসজিদের মুসল্লিরা বেরিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া করে। পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন, রঙ্গম কনভেনশন হল এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সনাতনী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আরও বেড়ে যায়। এ সময় চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ উত্তেজনাকর পরিবেশ পরিস্থিতি এড়াতে রঙ্গম কনভেনশন হল গলিতে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালান। সেখানে সনাতনী সম্প্রদায়ের উচ্ছৃখল লোকজন তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, তার গলায় ছুরি চালানো হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন। নিহত সাইফুলের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায়। তিনি এলাকার জালাল উদ্দিনের পুত্র বলে জানা গেছে।
চিন্ময়ের আইনজীবীর বক্তব্য ॥ চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর পক্ষের আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ সাংবাদিকদের জানান, এই মামলা ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমরা জামিন আবেদন করেছি। শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। আমরা আইনজীবীরা কারাগারে উনার ডিভিশন ও ধর্মীয় বিধান পালনের দুটি আবেদন করেছিলাম। আবেদন দুটি মঞ্জুর করেছেন আদালত। আদেশে আমরা সংক্ষুব্ধ। মহানগর দায়রা জজ আদালতে মিস মামলা করেছি।
আদালত পরিস্থিতি ॥ চিন্ময় দাসকে এজলাসে হাজির করা হলে সমবেত আইনজীবীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় চিন্ময় দাস হাত জোর করে আইনজীবীদের স্লোগান দিতে নিষেধ করেন। তাকে এজলাসের সামনের দিকের বেঞ্চে নিয়ে বসানো হয়।
বিচারক বলেন, উনাকে চট্টগ্রামের বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উনার কাস্টডি ওয়ারেন্ট দিতে হবে। এ সময় চিন্ময়ের পক্ষের আইনজীবীরা সবার বিরুদ্ধে কাস্টডি ওয়ারেন্ট দেওয়ার দাবি তোলেন এবং জামিন শুনানি করার আহ্বান জানান।
তখন বিচারক বলেন, উনার প্রতি আপনাদের আবেগকে আমি শ্রদ্ধা করি। জামিন শুনানি করা যাবে কিনা তা জানতে হবে। এ সময় বিচারক এজলাস থেকে নেমে যান। পরে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ও আইনজীবীরা আবার বিচারক হাজির হওয়ার জন্য এজলাসে অপেক্ষা করতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিচারক আবার এজলাসে আসেন এবং জামিন শুনানির নির্দেশ দেন।
এ সময় চিন্ময় ব্রহ্মচারীর পক্ষে আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা জামিন শুনানি করেন। চিন্ময় দাস নিজেও বক্তব্য রাখেন।
আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা জানান, আইনজীবীরা জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর কারাগারে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস যাতে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করতে পারেন সে বিষয়ে আদেশ চান। আদালত এ বিষয়ে কারাবিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
প্রিজনভ্যান আটকে বিক্ষোভ ॥ চিন্ময় কৃষ্ণকে জামিন না দেওয়ায় আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন সনাতনী সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী-পুরুষ। এ সময় আদালত ভবনের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন সনাতনী সম্প্রদায়ের আইনজীবীরাও। সেখানে শিশু, সাধু ও সন্ন্যাসীরা ছিলেন। আদালতের নিরাপত্তায় সকাল থেকে পুলিশ-বিজিবি মোতায়েন করা হলেও তাদের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি।
চিন্ময় যা বললেন ॥ বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার কথা বলে প্রিজনভ্যান থেকে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন চিন্ময় ব্রহ্মচারী। তিনি বলেন, আমরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করেছি। রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে আমরা নই। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের আশা দেখা দিয়েছে- আমরা সনাতনীরা তার অংশ। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ৮ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালাবেন। আবেগকে শক্তিতে পরিণত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবেন। দেশের স্থিতিশীলতাকে প্রাধান্য দিবেন- এটা আশা করছি। রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হয় বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্ট হয়- এমন কিছু করবেন না।
বিক্ষোভকারীদের ছাত্রভঙ্গ ॥ সনাতনী সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ সামাল দিতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আনা হয় বেলা আড়াইটার দিকে। এরপর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে আদালত এলাকায় থাকা বিক্ষোভাকারীদের লাঠিচার্জ ও বেশকিছু সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের মাধ্যমে ছত্রভঙ্গ করে প্রায় ৩ ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম আদালত থেকে চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে পুলিশের একটি গাড়িতে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সনাতনী জোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে কারাগারে উদ্দেশে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে পথে গাড়ি আটকানো এবং পুলিশের প্রতি বিক্ষোভ করতে থাকেন সনাতনী নারী-পুরুষরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেন।
আইনজীবী সাইফুল কেন টার্গেট॥ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়ার পর চট্টগ্রামের আদালত চত্বরে সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ইসকন থেকে বহিষ্কৃত এ চিন্ময়ের অনুসারী দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে। চট্টগ্রামে খুব বেশি। মূলত তাকে গ্রেপ্তার, জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় চিন্ময় সমর্থকরা ব্যাপকভাবে বিক্ষোভ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে জড়িতরা এলোপাতাড়ি ভাঙচুর ও হামলা চালায়। কিন্তু চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ কেন হত্যাকা-ের শিকার হলেন তা নিয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পক্ষের কেউ সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে তিনি আদালত প্রাঙ্গণ ছেড়ে সন্নিহিত রঙ্গম কনভেশনের গলি হয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার পরনে সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট ছিল। ছিল না কোর্ট ও টাই। তারপরও উচ্ছৃঙ্খল একদল যুবক সাইফুলকে কেন টার্গেট করে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত ও গলায় ছুরি চালনা করল তার কোনো উত্তর মিলছে না। মূলত তিনি কি কারও টার্গেটের শিকার হলেন কিনা এ নিয়ে নানা প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানা গেছে, আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ চলার পাশাপাশি এর পাদদেশে কোর্ট রোড এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান ছিল। কিন্তু রঙ্গম কনভেনশন গলির সম্মুখে পুলিশ বা কোনো সংস্থার লোকজন ছিল না। ঘটনার সময় গলির ভেতরে বাইরে চিন্ময়ের অনুসারীদের অবস্থান ছিল সীমিত। এরা গলির ভেতরে বাইরে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছিল। আইনজীবী সাইফুল বিকেল ৪টার দিকে রঙ্গম কনভেনশন গলির ভেতরে যাওয়ার সময় কয়েকজন অজ্ঞাতনামা উচ্ছৃঙ্খল যুবক ধরে ফেলে, উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে।
এ সময় সাইফুলের সঙ্গে থাকা আরেক আইনজীবীও আহত হয়। উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা কোনো ধরনের প্রশ্ন বা কিছু জানার চেষ্টা না করেই ছুরিকাঘাত করতে থাকে। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে এক পর্যায়ে সাইফুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তার গলায় ছুরি চালায় উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা। ফলে রক্তক্ষরণে তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় চলে যান। এ সময় তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রঙ্গম কনভেনশন গলি তৎসংলগ্ন পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন এলাকায় কোনো পুলিশ ছিল না। পুলিশ ছিল আদালত ভবনের প্রবেশমুখে, জেলা পরিষদ ভবন এবং আদালতের বদিউল আলম স্মারক ব্রিজ এলাকায়। অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে আদালত চত্বরে। আদালত প্রাঙ্গণের অনতিদূরে রঙ্গম কনভেনশন গলি। রঙ্গম গলিতে বেশ কিছু আইনজীবীর চেম্বার রয়েছে। নিহত আইনজীবী সাইফুল হয়তো তার কোনো সিনিয়রের চেম্বারে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার আগেই তাকে মৃত্যু হানা দেয়। আইনজীবীদের অনেকে জানিয়েছেন, শান্ত স্বভাবের ছিলেন সাইফুল ইসলাম। মঙ্গলবার আদালতে চিন্ময়কে আনা ও জামিন নামঞ্জুর হওয়ার ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তারপরও তাকে কেন নৃশংসভাবে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুন করা হলো তা নিয়ে আইনজীবী মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আইনজীবী হত্যার নিন্দা প্রধান উপদেষ্টার ॥ আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এ হত্যাকা-ের তদন্ত এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীকে ধৈর্য ধারণ এবং কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত কর্মকা-ে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি চট্টগ্রামের সব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসহ বন্দরনগরীতে নিরাপত্তা জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
দেশী-বিদেশী ইন্ধনের কথা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ॥ ইসকন নিয়ে দেশী-বিদেশী ইন্ধন থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। মঙ্গলবার সিলেট সার্কিট হাউসে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেনে, আমার মনে হয়, বাইরেও হয়তো কিছু ইন্ধন আছে এবং দেশেও দু-একটা পার্টি আছে, তাদের দিক থেকে হয়তো কিছু ইন্ধন আছে। আবার যাদের আমরা ব্যান করে দিছি, তাদের দিক থেকে হয়তো কিছুটা ইন্ধন আছে।
দলীয় কর্মী দাবি জামায়াত আমিরের ॥ চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে জামায়াতের কর্মী দাবি করে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে মঙ্গলবার দুপুরে যে নৃশংস হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে তা অত্যন্ত জঘন্য এবং নিন্দনীয় অপরাধ। একটি গোষ্ঠী পতিত স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশকে অস্থির করার জন্য ক্রমাগতভাবে দুরভিসন্ধি ও অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা উসকানিমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থির করে তুলতে চায়। দেশপ্রেমিক জনগণ তাদের দুরভিসন্ধির ব্যাপারে পরিপূর্ণ সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ। তাদের অপচেষ্টা অতীতে যেমন ব্যর্থ হয়েছে, আগামীতেও ব্যর্থ হবে ইনশা আল্লাহ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের জন্য তার আত্মত্যাগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমার দলীয় সহকর্মী, ছাত্র-জনতা এবং দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি যে কোনো উসকানিতে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরার জন্য আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। কোনো অবস্থাতেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
হাইকোর্টে বিক্ষোভ ॥ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রামে আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতাকর্মীরা সুপ্রিম কোর্টবার ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি সুপ্রিম কোর্টের মাজার গেট, কদম ফোয়ারা প্রদক্ষিণ করে বার কাউন্সিলের গেট দিয়ে আবার আদালত অঙ্গণে এসে শেষ হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে আলিফের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি ॥ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতির প্রতি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ওই বিবৃতির জবাবে হতাশভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়Ñ ‘বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত হতাশ এবং গভীর মনোব্যথার সঙ্গে উল্লেখ করেছে যে, শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করার পর থেকে কিছু মহল শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে। বাংলাদেশ সরকার মনে করে যে, এ ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি কেবল তথ্যের ভুল উপস্থাপনাই নয়, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনারও বিপরীত। বিবৃতিটি সব ধর্মের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান সম্প্রীতি এবং এ বিষয়ে সরকার ও জনগণের প্রতিশ্রুতি ও প্রচেষ্টার প্রতিফলন ঘটায় না।
ঢাবিতে গায়েবানা জানাজা ॥ চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) গায়েবানা জানাজা আদায় করেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় এ জানাজার আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে রাত নয়টার দিকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, আজ চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করছে। আমরা প্রশাসনের কাছে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আজ শোক ও সম্প্রীতি সমাবেশ ॥ চট্টগ্রামে আদালত প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ইসকন সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় আইনজীবীর মৃত্যুতে আজ বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শোক ও সম্প্রীতি সমাবেশ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এই সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে। এতে অংশগ্রহণকারীরা এ হত্যার জন্য ইসকন ও সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটকে দায়ী করে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর তার অনুসারীরা মধ্যে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা আদালত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্যে বাধা প্রদান করে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরে একটি মিছিল এসে চড়াও হলে তা ত্রিমুখী সংঘর্ষে রূপ নেয়। রঙ্গম সিমেনা এলাকায় গলায় ছুরিকাঘাতে খুন হন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ। এতে আদালত পাড়ায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আইনজীবীরা। এরপর সাধারণের মধ্যেও ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠে। সন্ধ্যার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয় নিউমার্কেট এলাকায়। সেখানে শত শত ছাত্র জনতা অংশ নেন। আইনজীবী হত্যার জন্য তারা ইসকনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা ও সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব এবিএম এমরান বলেছেন, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যা নিয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। কাউকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ দেওয়া যাবে না। আমরা কারও ফাঁদে পা দেব না। সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
হত্যার প্রতিবাদে চবিতে বিক্ষোভ ॥ চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার প্রতিবাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এই বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শেখ হাসিনার দালালেরা দেশে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দিতে চাচ্ছে। পতিত এই স্বৈরাচারের ইঙ্গিতেই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই এই অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনা। তারা আরও বলেন, আইনজীবী সাইফুলকে যারা হত্যা করেছে আগামী ২৪ ঘণ্টার ভিতরে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে ছাত্রসমাজ আবারও জেগে উঠবে।
আইনজীবীদের কর্মবিরতি আজ ॥ নিহত আইনজীবী সাইফুলকে হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি আজ সকল আদালতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। সমিতি আহূত এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের আইনজীবীরা সব ধরনের মামলা পরিচালনা থেকে আজ বিরত থাকবেন। নিহত আইনজীবী সাইফুলের জানাজা আজ সকালে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও জানান, তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
চার সাংবাদিকের মোটরসাইকেল ভাঙচুর ॥ চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া চার সাংবাদিকের মোটরসাইকেল ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন-সিইউজে। মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরকে ঘিরে সৃষ্ট অপ্রীতিকর ঘটনা চলাকালে চার ফটোসাংবাদিক আমাদের সময়ের আবু সাঈদ মো. তামান্না, দেশ রূপান্তরের আকমাল হোসেন, বিডিনিউজের সুমন বাবু ও সারাবাংলার শ্যামলনন্দীর পার্কিং করে রাখা মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জে ৮ দফা দাবিতে মানববন্ধন ॥ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা। মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন পালন করেছে। এ সময় তারা শহরের চাষাঢ়া বিজয়স্তম্ভে গিয়ে সমাবেশ করে।
সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল ॥ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ যুব ঐক্য ও ছাত্র ঐক্য পরিষদ সাতক্ষীরা জেলার আয়োজনে মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বরিশালে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ॥ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে বরিশালে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে সদর রোডে অবস্থান নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
ঝালকাঠিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ॥ বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ মুখপাত্র শ্রী পদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে ডিবি কর্তৃক গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং তার মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সাড়ে ৩টায় ঝালকাঠি শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়ে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ ॥ লক্ষ্মীপুরে শ্রীপদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সম্মিলিত জাগরণ জোটের ব্যানারে সোমবার রাতে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহরে অবস্থিত শ্রী শ্রী শ্যাম সুন্দর জিঁউর আখড়ার সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার সেখানে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
খুলনায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ ॥ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও হাটহাজারীর পু-রীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের খুলনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাগরণ মঞ্চ। মিছিল সমাবেশ ঘিরে সংগঠনটি ৪-৫ জন দুর্বৃত্তদের হামলা, লাঞ্ছনা ও হুমকির শিকার হয়েছেন বলে সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে প্রথমে নগরীর পিকচার প্যালেস মোড় ও পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করে।