জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এএসএম আমানুল্লাহ ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে অর্থ সহায়তা তুলে
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষার্থীর পরিবারকে ৮ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান দিয়েছে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৩ লাখ এবং জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ সময় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, এখনো অনেকে রয়েছে রাষ্ট্র কাঠামোতে তারা চায় না এই অভ্যুত্থান টিকে থাকুক। মঙ্গলবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে প্রত্যেক পরিবারের কাছে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের তাদের হাতে চেক হস্তান্তর করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সারজিস আলম বলেন, আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এখনো বিভিন্ন জায়গায় ব্যত্যয় দেখি। কারণ বিগত ১৬ বছরে এ সুবিধাভোগীরা ছিল। এখনো তারা বিভিন্ন চেহারায়, বিভিন্ন রূপে ঘাপটি মেরে আছে। না হয় গিরগিটির মতো রূপ পাল্টে রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হচ্ছে এখন বিভিন্ন সিস্টেমে আমরা যাই। রাষ্ট্র কাঠামোর যৌক্তিক দাবি নিয়ে, ওই মানুষগুলো এখনো তাদের জায়গা থেকে বিভিন্ন অবহেলা দেখায়। আমরা যখন শহীদ পরিবার ও সহযোদ্ধাদের ফাইল নিয়ে সচিবালয়ে যাই, আমাদের টেবিলে-টেবিলে গিয়ে সামনে দাঁড়াতে হয়। এখনো অনেকে রয়েছেন রাষ্ট্র কাঠামোতে, তারা চায় না এ অভ্যুত্থান টিকে থাকুন।
তিনি বলেন, আমরা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি বিভাগে যাচ্ছি। একটি প্রোগ্রাম নিয়ে শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ। প্রতি সপ্তাহে শনিবার আমরা আমাদের শহীদ পরিবারের সদস্য যারা রয়েছেন তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তাদের সামনে গিয়ে যখন দাঁড়াই তখন একটি জিনিস মনে হয়, এ সময় দেশের রাষ্ট্র কাঠামোর পরিচালনার জন্য যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরও প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত একদিন শহীদ পরিবারের সামনে ৩০ মিনিটের জন্য হলেও দাঁড়ানো উচিত।
তিনি আরও বলেন, আজকের এ বাংলাদেশে আমাদের শুনতে হয় সেই কালপ্রিট, সেই নরপিশাচরা যখন প্রশ্ন তুলে বলে, স্নিগ্ধ আর মুগ্ধ এক ব্যক্তি। তখন আমাদের মনে হয় সেই নরপিশাচরা এত বড় হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে, ওদের প্রত্যেককে প্রতিদিন শহীদ পরিবারের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া উচিত। নরপিশাচদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। প্রায় দুই হাজার মানুষকে খুন করার সেই ফ্যাসিবাদী দোসরদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। প্রায় অর্ধ লাখ মানুষকে রক্তাক্ত করা, শত শত ভাই-বোনকে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখতে না দেওয়া। শত-শত বীর যোদ্ধা রয়েছে যারা আর নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। শত শত বীর যোদ্ধা আছে তারা আর কোনোদিন নিজের বাবা-মা ও স্ত্রীকে নিজের হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে পারবে না। সেই নরপিশাচদের আমাদের সহযোদ্ধাদের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া উচিত।
সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন এবং যারা আহত হয়েছেন, তাদের ঋণ আমরা কখনো শোধ করতে পারব না। গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া আহত শিক্ষার্থীদের সবধরনের ফি মওকুফ করেছি। যদিও এটি তাদের ত্যাগের কাছে অত্যন্ত নগণ্য।
তিনি আরও বলেন, দেশের নাগরিক বিশেষ করে যুবসমাজের প্রতি কোনো সরকার কত নির্মম হতে পারে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার তা দেখিয়েছে। তিন কলেজের সংঘর্ষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাস্তায় অযৌক্তিক আন্দোলনকারীদের কতজন ছাত্র আর কতজন অছাত্র তা চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সোমবারের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি আমাদের শহীদদের যেন ভুলে না যাই, এর জন্য কলেজে গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতি কর্নার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দুই হাজার তাজা প্রাণ এবং অসংখ্য আহত যোদ্ধার অঙ্গহানির বিনিময়ে আমাদের স্বৈরাচার শাসকের পতন ঘটেছে। আমাদের অভ্যুত্থানের গল্পগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের পাঠসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। আমরা যেন তাদের ভুলে না যাই, এজন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় জুলাই-আগস্টের গণহত্যার গল্প পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ২৫ শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকা ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।