কুমিল্লায় আন্ত:নগর সূবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার ৭ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ১ জন। দ্রুতগামী ট্রেন অটোরিকশাটিকে মুখে করে অন্তত আধা কিলোমিটার নিয়ে যায়। এতে যাত্রীদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর-বাকশিমুল সড়কের রেল ক্রসিং এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চার জনই নারী। এদিকে মর্মান্তিক এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
নিহতরা হলেন, জেলার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল গ্রামের মৃত মনছুর আলীর ছেলে আলী আহাম্মদ (৭৭), মনির হোসেনের স্ত্রী শাহীনুর আক্তার (৩৩), আলী আশরাফের স্ত্রী সফরজান বেগম (৬৫), মৃত আবদুল মালেকের স্ত্রী লুৎফা বেগম (৬০), মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে অটোরিকশার চালক শাহজাহান মিয়া সাজু (৪০), খোদাইতলী গ্রামের মৃত ফজলু মিয়ার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম (৬০), একই গ্রামের মৃত আছমত আলীর ছেলে রফিজ উদ্দিন (৬৫)।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে কালিকাপুর গ্রামের নাজমুল হাসান, রেলওয়ে লাকসাম থানার ওসি এমরান হোসেন, বুড়িচং থানার ওসি আজিজুল হক, এসআই গোলাম মোস্তফাসহ স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্ত:নগর সূবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি দ্রুতগতিতে ঢাকা অভিমুখে যাওয়ার পথে রসুলপুর-রাজাপুর রেল স্টেশনের মাঝামাঝি জেলার বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর-বাকশিমুল সড়কের রেল ক্রসিং অতিক্রমের সময় কালিরবাজার থেকে বাকশিমুল অভিমুখি যাত্রীবোঝাই ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা হঠাৎ রেল লাইনে উঠে পড়ে।
এসময় দ্রুতগামী ট্রেনটির মুখে বিকট শব্দে আটকে অন্তত আধাকিলোমিটার দূরে ছিন্নভিন্ন হয়ে অটোরিকশাসহ যাত্রীরা ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে অটোরিকশাটির খণ্ড খণ্ড টুকরো ও যাত্রীদের সাথে থাকা ব্যবহৃত বিভিন্ন মালামাল রেল লাইনের পাশে এলোমেলো পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া যাত্রীদের দেহ থেকে গড়িয়ে পড়া ছোপ ছোপ রক্তে রেল লাইনের স্লিপার রঞ্জিত হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে নিহতদের বাড়িঘর হওয়ায় ঘটনার পর পর এলাকার কয়েক হাজার লোক দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। খবর পেয়ে লাকসাম থেকে রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এসময় নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে।
গুরুত্বপূর্ণ কালিকাপুর-বাকশিমুল সড়কের আশপাশে কয়েকটি বাজার ও কলেজ-মাদ্রাসা থাকলেও ওই রেল ক্রসিংয়ে কোনো গেইট বা নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় একসাথে ৭টি প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর জনগণের ক্ষোভের আগুন ফুঁসে উঠে। তারা অবিলম্বে ওই রেলক্রসিংয়ে গেইট নির্মাণ, সিগনালসহ নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের দাবি জানান।
রেলওয়ে লাকসাম থানার ওসি এমরান হোসেন জানান, নিহতদের পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশগুলো স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রেলওয়ে রসুলপুর স্টেশনের স্টেশনমাস্টার প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী বাদী হয়ে রেলওয়ে লাকসাম থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিভিশনাল ম্যানেজার এবিএম কামরুজ্জামান জানান, ঘটনার তদন্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন, সহকারী কমান্ডেন্ট, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারী সিগনাল ইঞ্জিনিয়ার। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, রেল ক্রসিংটি আনঅথারাইজড ছিল। হঠাৎ করে অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে লাইনের উপর উঠে যাওয়ায় এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের রেল ক্রসিংয়ে গেইট ও প্রহরী নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে।