ছবি: সংগৃহীত
তিস্তা নদীর কয়েক দফার বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই কৃষকরা পড়েছেন নতুন দুশ্চিন্তায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর সার সিন্ডিকেটের কাছে কৃষক অসহায় হয়ে পড়েছে। ইউরিয়া, টিএসপি, ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সহ সব ধরনের সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে একহাজার ২ শত টাকার সার দুই হাজার ৪ শত টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। রবি শস্য মৌসুমে সারের এমন দামে বিপাকে পড়েছেন এ জেলার চাষিরা। চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজি, ভুট্টা আবাদের এ সময়ে অতিরিক্ত দামে প্রয়োজনীয় সার কিনতে হচ্ছে। প্রস্তুতি চলছে বোরো ধানের বীজতলা তৈরী , গমের জমি প্রস্তুতের কাজ। কৃষির এমন সময়ে জেলা জুড়ে কৃত্রিম সংকটের সিন্ডকেটে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বস্তায় অর্থেক দামের চেয়ে বেশি বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ । কৃষকদের অভিযোগ, অনেক ডিলারের কাছে টিএসপি,এমওপি সার পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের কাছে আছে সেখানে দাম বেশি। ১৩৫০ টাকার টিএসপি কমপ্লেক্স বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ২৫ শত টাকা, ১ হাজার ৫০ টাকার ডিএপি সারের বস্তা তাদের কিনতে হচ্ছে ১৭শ’ থেকে ১৮শ’ টাকায়। ১ হাজার ৩ শত পঞ্চাশ টাকার টিএসপি মরক্কো সার বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা, ১৩৫০ টাকার টিএসপি টিউনিশিয়া বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা আর মিউরেট অব পটাশ বাজার থেকে উধাও, কোন দোকানে এর দেখা মিলছে না।
এ বিষয়ে বিসিআইসি ও বিএডিসি ডিলাররা বলছেন জেলায় অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে কোনো সার বরাদ্দ দেয়নি। নভেম্বর মাসের বরাদ্দ সারের ২০ শতাংশ সার এখনো বাফার গুদামে পৌঁছায়নি। তাই সারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান,রবি শস্যের বীজ বপনের সময়কাল ১৬ই অক্টোবর থেকে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত। কিছু অসাধু বিক্রেতা আগাম সার কিনে মজুত করার সুযোগে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এ মজুতের কারণে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দাম নেয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলার আনোয়ার হোসেন বলেন, রবি মৌসুমের চাষাবাদ শুরু হতেই বাজার থেকে সার উধাও হয়েছে। ডিলাররা সরবরাহ নেই অজুহাতে কৃষকদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। গোপনে বেশি টাকা দিলে সার মিলছে। সদর উপজেলার মোগলহাট এলাকার কৃষক নুরুদ্দিন জানান,এই মৌসুমের সারের ব্যাপক চাহিদা থাকে, সারের অভাবে আমাদের রবি মৌসুমের চাষাবাদ বাধা গ্রস্ত্য হয়ে যাচ্ছে, বিক্রেতারা প্রতি বস্তা সার ৭০০ থেকে ১১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন। এ সময় সার না পেলে এর ঘানী সারা বছর টেনেও শেষ হবে না।
জানাযায়,লালমনিরহাট জেলার বিএডিসি’র ডিলার ৯২ জন । তারা অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বিএডিসি’র সার বরাদ্দ পাননি। বিভিন্ন সময় কৃষি সপ্রোসারণ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা বিএডিসি’র সার ডিলারদের বঞ্চিত করে বরাদ্দ দিয়ে দেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ডিলারদের। সেই সুযোগে বিসিআইসি ডিলাররা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দেন সারের দাম। কালীগঞ্জ উপজেলার একজন বিএডিসি ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিসিআইসি ডিলাররা সার বরাদ্দ পায় কিন্তু বিএডিসি ডিলাররা পাননা। কৃষকদের জিম্মি করে বেশি দামে বিক্রি করতেই অনেক সময় বিএডিসি’র ডিলারদের বঞ্চিত করে বিসিআইসি ডিলারদের সার দেয়া হয়। সবাই বরাদ্দ পেলে সিন্ডিকেটের সুযোগ ছিল না।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাইখুল আরেফিন জানান, সারের কোনো সংকট নেই।যে পরিমাণ সার আসছে, ডিলারদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যক্তি গুজব সৃষ্টি করে সংকট তৈরি করছেন। এসব অসাধু ব্যক্তি ও বিক্রেতার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জনকণ্ঠকে বলেন, জেলায় সারের কোন সংকট নেই। কিছু অসাধু ব্যক্তি গুজব সৃষ্টি করছেন। তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। আগামীকাল সার বিষয়ে সভা ডাকা হয়েছে। সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
শিহাব উদ্দিন