ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ইতিহাস বদলে আসিফ মাহমুদের সেই জ্বালাময়ী ভাষণ

প্রকাশিত: ০২:০৯, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

ইতিহাস বদলে আসিফ মাহমুদের সেই জ্বালাময়ী ভাষণ

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। ছবি: সংগৃহীত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের নিদর্শন দেখিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। যিনি পরিবারের সদস্যদের অজান্তে এই আন্দোলনে যোগ দেন, যে ছাত্র আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, রাষ্ট্রের কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।

আসিফ মাহমুদ সজীব তার আন্দোলন জীবন শুরু করেছিলেন পরিবারকে অবহিত না করে। আন্দোলনের প্রথমদিকে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী শহীদ হওয়ার পর তার পরিবার জানতে পারে যে তিনি এই আন্দোলনের একজন প্রধান সংগঠক। পরিবার তাকে বাড়ি ফিরে আসতে অনুরোধ করলেও, আসিফ তাতে সাড়া দেননি। তিনি বলেন, “আমার অনেক ভাই-বোন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন, আমি আন্দোলন থেকে ফিরে আসবো না। হয় গুলি খেয়ে মরবো, না হয় আন্দোলন সফল করে ঘরে ফিরবো।”

তবে আসিফের এই অটল মনোবল, দেশপ্রেম এবং আন্দোলনের প্রতি অঙ্গীকার আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে ২০২৪ সালের ৪ জুলাই, যখন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে এক শক্তিশালী ভাষণ দেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুর দিকে, তিনি বলেন—"আমাদের সংবিধানের ২৯ নং অনুচ্ছেদের মূল কথা হলো সুযোগের সমতা বাধাগ্রস্থ করা যাবে না। রাষ্ট্র চাইলে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর জন্য সুযোগের সমতায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটাতে পারে কিন্তু সেটা কোনভাবেই পাঁচ শতাংশে বেশি নয়।"

এই ভাষণে আসিফ মাহমুদ আরও উল্লেখ করেন, "সংবিধানের কোথাও বলা নেই যে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি বা চতুর্থ-পঞ্চম প্রজন্মকে কোটা দিতে হবে। এছাড়া, পোষ্য কোটার নামে কর্মকর্তার ছেলে কর্মকর্তা হবে, আর কৃষকের ছেলে কৃষকের থেকে যাবে—এটা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।" তিনি পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা করেন যে, এই বৈষম্যকোটার সংস্কারের জন্য আন্দোলন চলবে, যতদিন না এটি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়।

আসিফ মাহমুদ আন্দোলনের সময় তার সাহসিকতা ও আদর্শের মাধ্যমে তরুণ সমাজের মধ্যে এক নয়া ভাবধারা সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর ভাষণ ছিল জনগণের প্রতি এক চ্যালেঞ্জ, যেখানে তিনি বলেছিলেন, "ঝড় হোক, বৃষ্টি হোক, প্রয়োজনে শরীর থেকে রক্ত ঝরুক—তবুও আমরা রাজপথ ছাড়বো না, যতক্ষণ না আমাদের দাবি পূর্ণ হয়।"

এভাবেই, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়ার ভাষণ, আন্দোলন এবং দৃঢ় প্রত্যয় দেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় তৈরী করেছে। তার ঐতিহাসিক ভাষণ শুধু কোটা সংস্কার আন্দোলনের দিকে নজর আকর্ষণ করেনি, বরং দেশের নাগরিক অধিকার, সমতা এবং ন্যায্যতার প্রতি গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। আজও, তার সেই ভাষণ ও আন্দোলন নতুন প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা।

নুসরাত

×