আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বাদল
দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাত, হত্যা, হামলা, নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে একাধিক মামলার আসামি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন বাদল ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। এতে করে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাবশালী বোরহান উদ্দিন বাদল বিগত শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহারে মত্ত হয়ে উঠেন। তার নেতৃত্বে ২০১৪ সালে ভাটারা ইউনিয়নের দোপাদহ এলাকায় মাহমুদুল আলম খানের ছেলে সুজন নামের এক যুবককে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ২০১৬ সালে ভাটারা গ্রামের প্রতিবন্ধী হাসনা নামের এক নারীকে কুপিয়ে হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চলতি বছরের প্রথম দিকে স্থানীয় পারপাড়া এলাকার সুরুজ আলীর ছেলে খোকন নামের এক যুবককে ফুলবাড়িয়া রেলক্রসিংএ হামলা করে কুপিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটেছে।
ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনায়ও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অভিযোগ। টিআর, কাবিখার দুর্নীতি, দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির টাকা আত্মসাৎসহ ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুদকের মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন বোরহান উদ্দিন বাদল। বোরহান উদ্দিন স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় ভাটারা ইউনিয়নে তার ভয়ে কেউ কথা বলতে পারতেন না।
অনেক অসহায় লোকের জমি জোর করে দখল করেছেন। ভুক্তভোগীরা প্রতিবাদ করতে গেলে প্রাণে মেড়ে ফেলার হুমকি দিতেন। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশের মাধ্যমে হয়রানি করতেন।
সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ বাহিনীর সাথে ছিল তার গভীর সম্পক। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি। এতে করে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। জনগণ তাদের নাগরিক বিভিন্ন সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
জনরোষের মুখে ইউপি সদস্যরাও যেতে পারছেন না পরিষদে। এতে করে জন্মসনদ, মৃত্যুনিবন্ধন, নাগরিক সনদ ও ট্রেড লাইসেন্সসহ পরিষদের সকল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ইউনিয়নবাসী। নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত ইউনিয়নবাসীতে বোরহান উদ্দিন বাদলের অপসারণ ও তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে ভাটারা ইউনিয়নে মাঝে মধ্যে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়ে থাকে।
স্থানীয় দোপাদহ এলাকার মাহমুদুল আলম খান বলেন জানান, আমার ছেলে সুজনের কাছে ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বাদল চাঁদা দাবি করলে আমার ছেলে আইনের আশ্রয় নেয়। ওই ঘটনার জেরে চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ছেলেকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটেয়ে হত্যা করেছে।
আমি এর বিচার দাবি করছি। স্থানীয় পারপাড়া এলাকার অবিরন বলেন, আমার ছেলে খোকনকে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে।
এ ব্যাপারে আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করছি। ভাটারা ইউপি সদস্য আজাফফর হোসেন রাজা বলেন, চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বাদল ও ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম হিলুল এবং মিজান নামের এক ব্যক্তি পরিষদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত।
তারা ইউপি সদস্যদের সিল বানিয়ে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেছেন। বিগত বছরের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের ২৬৩ জন শ্রমিকের ডিজিটাল লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত সিম কার্ড তাদের কাছে রেখে শ্রমিকদের পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য হেপি খাতুন ও আছিয়া বেগম জানান, বিগত দুই বছর ধরে ইউপি সদস্য হলেও কোথায় কোন প্রকল্পের কাজ হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। কোন প্রকল্প পাস করতে আমাদের স্বাক্ষর লাগেনি। টিআর, কাবিখা প্রকল্পের বিষয়েও আমরা জানি না। যারা পরিষদের হরিলুটের সাথে জড়িত তারাই পালিয়েছে। এখন ভোগান্তিতে পড়েছে ইউনিয়নবাসী।
শহিদ