পাটখড়ি বিক্রির জন্য জড়ো করা হয়েছে
দেশের পাট আবাদের অন্যতম জেলা হিসেবে খ্যাত টাঙ্গাইল। এ জেলার চরাঞ্চলের প্রধান ফসল পাট। বেলে দোআঁশ মাটির কারণে চরাঞ্চলই পাট চাষের উপযোগী। ইতিপূর্বে সোনালি আঁশ পাটের ন্যায্য মূল্য না পাওয়াতে পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কৃষক। এতেও লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। পাটখড়ির ভালো দাম পাওয়াতে চাষিরা আবার উৎসাহী হয়ে উঠেছে পাটচাষে।
পাট থেকে পাটখড়ি সাধারণত গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হতো। পরিবারের রান্নার জ্বালানি, ঘরে বেড়া, ঘরের সিলিং ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করত। যার কারণে চাহিদা ছিল কম। কিন্তু এখন এই পাটখড়ি দেশের বাইরে রপ্তানির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। যার কারণে মূল্য বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। এতে কৃষক বেজায় খুশি।
জেলার ভূঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতির যমুনা তীরবর্তী বাজারগুলো জমজমাট হয়ে উঠেছে পাটখড়ি কেনা-বেচায়। ছোট ছোট পাইকাররা কিনে নিয়ে দিচ্ছে বড় পাইকারকে। সে দিচ্ছে দেশের চারকোল কারখানাগুলোতে। এতে করে যেমন কৃষক পাচ্ছে ন্যায্য মূল্য তেমনি কর্মসংস্থান হচ্ছে অনেক মানুষের।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, পাটখড়িকে ছাই বানিয়ে রপ্তানির পথ দেখান ওয়াং ফেই নামের চীনের এক নাগরিক। সে থেকে চারকোল বা ছাই উৎপাদনের কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানার পাটখড়ির ছাই রপ্তানি হচ্ছে। ব্যতিক্রম এ পণ্যের রপ্তানি দিন দিন বাড়ছে। আর সে কারণে বাড়ছে ছাই উৎপাদনের কারখানাও।
বাংলাদেশ থেকে পাটখড়ির ছাইয়ের প্রধান আমদানিকারক দেশ হচ্ছে চীন। তাইওয়ান, ব্রাজিলেও এটি রপ্তানি হচ্ছে। এর বড় বাজার রয়েছে মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ব্রাজিল, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে। আর এ পাটখড়ির ছাই থেকে কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনপণ্য, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ইত্যাদি পণ্য তৈরি হয়।
জানা গেছে, বিশেষ চুল্লির মাধ্যমে পাটখড়ি পুড়িয়ে ছাই করা হয়। কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে ফরিদপুর, জামালপুর, ঝিনাইদহ, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, লালমনিরহাট ও রাজবাড়ীতে। এ ছাড়া ছাই উৎপাদনের কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব, বহির্বিশ্বে ছাইয়ের ভালো চাহিদা রয়েছে এবং সহজেই আন্তর্জাতিক বাজার ধরা যাবে। এ কারখানায় বিদ্যুৎ বেশি লাগে না, কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগের পরিমাণও খুব বেশি নয়। তা ছাড়া কাঁচামাল পাওয়া যায় সহজেই।
উপজেলার রুলিপাড়া গ্রামে পাট চাষি আয়নাল মন্ডল জানান, পাট চাষে যে খরচ হয় তা পাট বিক্রি করে ওঠে। আর পাটখড়ি বিক্রি হয় পাটের চেয়ে বেশি দামে তাতে আমাদের লাভ থাকে।
গোবিন্দাসী হাটে পাটখড়ির ব্যাপারি হাসমত আলী জানান, গ্রামে গ্রামে ঘুরে পাটখড়ি কিনে ব্যাপারির কাছে বিক্রি করি। বড় ব্যাপারিরা বিভিন্ন চারকোল কারখানায় বিক্রি করে। আমি এ ব্যবসা করে ভালোই চলছি।