নদী ভাঙন
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে ’হাত বদল’ আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা। তীব্র নদী ভাঙনের মধ্যেও চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।
ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে চরাঞ্চলের একমাত্র হাইস্কুল, মুজিব কেল্লা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু সংখ্যক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়েছে অনেক ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা। এতে ভাঙ্গন আতংকে রয়েছে নদী পারের সাধারণ মানুষ। অবৈধ ড্রেজার বন্ধ ও ভাঙ্গন রোধে সম্প্রতি মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভাগীরা। প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের যমুনা নদীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় পরিচয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা করেছে। এ কাজে এবার আওয়ামীলীগ না থাকলেও সক্রিয় হয়েছে বিএনপি নামধারীরা। বরাবরই রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু-মাটি উত্তোলন করে মোটা টাকায় বিক্রি করছে।
বালুমহালের সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক সূত্র জানায়, দেশের প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যেই শিবালয়ের পদ্মা-যমুনার বিভিন্ন অংশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ চলছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দলীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে হরদম। এতে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা যেন রয়েছেন নিরব।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি রাজনৈতিক দলের পদ-পদবীধারীরা বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি বা অন্য কোন অপরাধ করলে দল তার দায়ভার নেবে না। কেউ অন্যায় অনিয়ম করলে তার দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার তেওতার আলোকদিয়া এলাকায় যমুনা নদীতে দেশীয় তৈরি কাটার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে বালু মাটি। বিগত সরকারের আমলে এ এলাকায় বালু উত্তোলনের কারণে দেখা দিয়েছে নদী পাড় ভাঙ্গণ।
বিলীন হয়ে গেছে হাজার-হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসত বাড়িসহ নানা স্থাপনা। বাড়ি-ঘর হারিয়ে হাজারও মানুষ হয়েছেন নিঃশ্ব। চরশিবালয় ও আলাকদিয়ায় সরকারের ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প ১ ও ২, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রুস্তম আলী হাওলাদার উচ্চ বিদ্যালয়, ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কেল্লা, মধ্যনগর ও চরবৈষ্টমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এর পরও আলোকদিয়ার কাছে যমুনা নদীতে চলছে অবৈধ ড্রেজার। ভাঙ্গণের ভয়ে শঙ্কিত নদী সিকস্তি এলাকার মানুষ। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক, শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তোভাগীরা একত্রিত হয়ে করেছে মানববন্ধন কর্মসুচি।
ভাঙ্গন কবলিত আলোকদিয়া চরাঞ্চলের বাসিন্দা ফরিদ মিয়া বলেন, যারা নদী থেকে মাটি তোলছে তারা দলীয় প্রভাবশালী । আমরা এদের কিছু বলতে পারি না। আপনারা লেখার মাধ্যমে যদি কিছু করতে পারেন। নদীর মাঝে ৭ নং টাওয়ারের আশপাশ এলাকায় কাটার মেশিন দিয়ে দফায়-দফায় মাটি কাটছে। এরা আমাদের গ্রামটি শেষ করে দিচ্ছে। আমাদের এ গ্রামটি দীর্ঘ দুই মাইল লম্বা ছিলো। বর্তমানে তা হাফ-কিলোমিটারও নাই। অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার কারণে গ্রামের বাকী অংশও কখন যেন নদীত চলে যায়। এ ছাড়া রাহাতপুর, চরবৈষ্টমী, টেংগুরহাটা ও আশ্রয়ণ প্রকল্প সবই নদীতে চলে গেছে।
এ গ্রামের খায়র মোল্লা বলেন, আলাকদিয়ার পাশে মুজিব কেল্লার একটু ভাটিত যমুনা নদীতে কাটার লাগানা হয়েছে। এর আগেও অবৈধভাবে মাটি কাটা হয়েছে। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করেছে। তার পরও বন্ধ হয়নি মাটি তোলার কাজ। এভাবে চলতে থাকলে চরের জমিজমা উঠবে না। আমরাও চাষাবাদ করতে পারবো না। এতে খাদ্যের ঘাটতি হবে।
স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ প্রশাসন ম্যানেজ নদীর মাটি উত্তোলন করায় গ্রামের পর গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন শুধু মাত্র হাত বদলের মাধ্যমে একই কায়দায় মুষ্টিমেয় নেতাকর্মীরা তাদের পকেট ভারি করার জন্য এমন কাজ আবার শুরু করেছে। যা দেখার যেন কেউ নেই।
শিবালয় উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বেলাল হোসেন এ বিষয়ে জনকন্ঠকে বলেন, যমুনা থেকে মাটি কাটার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে, এমন কর্মযজ্ঞ চললে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শহিদ