সুন্দরবনের জঙ্গলে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাত রান্না করে খাওয়াইছি। স্বামী-স্ত্রী দুই জনেই বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম যুদ্ধে যাওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ১০ মাস কাটাইছি। ১৯৭১ সালে ৯নং সেক্টর সুন্দরবন সাব-সেক্টরে বীর মুক্তিযোদ্ধা স.ম কবির আহম্মেদ মধু, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজেদ মল্লিক, বীর পল্টু চেয়ারম্যান তাদের সাথে একত্রে ছিলাম।
স্বামী মৃত. আব্দুর রহমান শেখ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক সেনা রাজাকারদের বিরুদ্ধে সেদিন যুদ্ধে নেমেছিলেন। তার পরেও সে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আসতে পারেনি। স্বামী আব্দুর রহমানের বড় কষ্ট নিয়ে মৃত্যু বরণ করেছে ১০ বছর পূর্বে। আমিও শেষ বয়সে এসে এখনও স্বপ্ন দেখছি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম থাকার। এ কথাগুলো বলতে গিয়ে অজোরে কাঁদলেন মোরেলগঞ্জের ৮৫ বছরে বৃদ্ধ জামিলা খাতুন।
জানাগেছে, উপজেলার মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাদুর তলা গ্রামের মৃত. আব্দুর রহমান শেখের স্ত্রী বৃদ্ধ জামিলা খাতুন (৮৫)। প্রান্ত বেলায় শেষ বয়সে এসেও ১০ বছর ধরে যার ভিক্ষা করে দিনযাপন করতে হচ্ছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধের ১০ মাস সুন্দরবনের জঙ্গলে থেকে বাড়িতে এসে ৩২ বছর ধরে হোটেলে হোটেলে খাবার পানি বিক্রি করে সংসার চালাতেন তিনি।
সংসার জীবনে জামিলা খাতুনের ২ ছেলের মাতা। ছোট বেলায় পিতা-মাতাকে ছেড়ে দুই ছেলেই অভাবের তাড়নায় শহরে চলে যায় বড় ছেলে আবু বকর সিদ্দিক চট্টগ্রামে দিনমজুরের কাজ করে। ছোট ছেলে জাকির শেখ ঢাকায় রিক্সা চালায়। মা জামিলা খাতুনকে প্রতি মাসে দুই ছেলেই ২ হাজার টাকা ভরণ পোষনের জন্য পাঠান।
বৃদ্ধ জামিলা খাতুন সরকারিভাবে ৭/৮ বছর ধরে শুধুমাত্র বয়স্ক ভাতা সুবিধাভোগীর আওতায় রয়েছেন। মাঠে কোন জমি নেই। স্বামীর রেখে যাওয়া ৫ কাটা বসতভিটা টুকু তার সম্বল। বসতঘরটি জরাজীর্ণ নড়বড়ে।
রবিবার বেলা ১১টায় মোরেলগঞ্জ প্রেসক্লাবে সাহায্যে নিতে এসে জামিলা খাতুনের জীবন সংগ্রামের অনেক কথাই সংবাদকর্মীদের সামনে প্রকাশ করে বলেন, দুই ছেলে মাসে ২ হাজার টাকা পাঠায়। বয়স্ক ভাতার সামান্ন্য কয়টা টাকা পাই। তাও আবার ওষুধে চলে যায়। পেট চলেনা। এই বয়সে এসে কম-কষ্টে কি রাস্তায় নেমেছি মানুষের সামনে হাত পাততে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আমার নাম কখনও কি উঠবে? স্বামী যে স্বপ্ন নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিল, আমারও কি সেই মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন থেকেই যাবে। একটু পাকা ঘরে যদি বসবাস করে যেতে পারতাম?। সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট তার আকুল আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
এ সর্ম্পকে মোরেলগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, এ উপজেলায় ইতোমধ্যে ২৫৫ জন ভিক্ষুকের তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮ জনকে বিকল্প পেশায় ফিরিয়ে নিতে একটি করে ছাগল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ভিক্ষুকদের পুনবার্সনের জন্য সরকারের নানামুখি পরিকল্পনা রয়েছে।