চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীতে ভাঙনের মুখেও অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নদী পাড়ের মানুষ। তাদের দাবি, এতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধ। পাশাপাশি হুমকিতে রয়েছে মোহনা পার্ক, কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিন দেখা গেছে, পদ্মার পাড় ঘেঁষেই ভারতীয় সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জের রানীনগর-দুর্লভপুর এলাকায় বালু তুলতে দেখা গেছে। এতে ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে বহু ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি। ভাঙনের কবলে নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে সদর উপজেলার আলাতুলী ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক এলাকা। ঘরছাড়া হয়েছে হাজারো মানুষ। পদ্মার বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বাঁধের কিছু অংশ ইতিমধ্যেই ভেঙে গেছে। এমন অবস্থাতেও বন্ধ হয়নি নদীর পাড় ঘেঁষে এই বালুর কারবার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আবাসিক এলাকায় পদ্মার পাড়ে অবৈধভাবে এ বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) অভিযোগ দিলেও সুরাহা হয়নি। উল্টো বাধা দিতে গেলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। শাহজাহানপুর ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা আফসারুল আলম জানান, নদীর ধারে বালু তোলার কারণে বাঁধের নিচে গর্ত তৈরি হচ্ছে। এতে বাঁধের ব্লক সরে যাচ্ছে। একই এলাকার মাওলানা কাউসার আলী জানান, নদীর ধারে ২০২১ সালে সরকারিভাবে নির্মিত মোহনা পার্কও রয়েছে ভাঙনের আশঙ্কায়। বালু তোলা বন্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আলাতুলি ইউনিয়নের আব্দুর রাকিব জানান, এক জায়গা ইজারা নিয়ে অন্য জায়গা থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এতে ইউনিয়নটির প্রায় অর্ধেক এলাকা ইতিমধ্যেই বিলীন। এসময় এলাকার বয়োঃবৃদ্ধি নবীর আলীর প্রশ্ন করে বসেন, ৩৫০ কোটি টাকার বাঁধ বাঁচানো জরুরি, নাকি সোয়া পাঁচ কোটি টাকার আয়?
সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান জানান, এক মাস আগে বালুমহাল ইজারা বাতিল, অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েও কাজ হয়নি।
অভিযুক্ত বালু উত্তোলনকারী বকুল হোসেনের দাবি, প্রায় ১৬ বছর আগে জেলা প্রশাসক ও পাউবোসহ সংশ্লিষ্টরা হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের মাধ্যমে রানীনগর এলাকাটি সিলেক্ট করে দীর্ঘদিন ধরে ইজারা দিয়ে আসছে। সে আলোকে দাদু ভাই কন্সট্রাকশনের পক্ষে আমি চলতি বাংলা ১৪৩১ সালে এক বছরের জন্য ৫ কোটি ২০ লাখ টাকায় বালু তোলার অনুমোদন পেয়েছি। সে মোতাবেক আমরা সরকারি নীতিমালা মেনে ঢাল প্রসেস পদ্ধতিতে বৈধ বালু মহল ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করছি।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছমিনা খাতুন জানান, স্থানীয়দের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে জনস্বার্থ, ফসলি জমি, রক্ষা বাঁধ, পার্ক হুমকিতে থাকলে বালু উত্তোলন বন্ধের আশ্বাস দেন তিনি।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবিব বালু তোলার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে জানান, বাঁধে কিছুটা ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাজেট পেলে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।