খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে প্রাণী হত্যার প্রতিবাদে শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জাপান গার্ডেন সিটির সামনে মানববন্ধন করে বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যর
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিতে বিষ প্রয়োগে কুকুর এবং বিড়াল হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার রাতে এই ঘটনা প্রকাশ পেলে সামাজিক মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। প্রাণিপ্রেমীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং ঘটনার বিচার দাবি করেন। কুকুর এবং বিড়াল হত্যার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনি পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্থপতি রাকিবুল হক এমিল। ইতোমধ্যে তার সংগঠনের পক্ষে আদাবর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন অভিনয় শিল্পী কাজী নওশাবা আহমেদ।
আদালতের মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান এমিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় জাপান গার্ডেন সিটিতে বিষ প্রয়োগ করে কুকুর-বিড়াল হত্যা করা হচ্ছে বলে ফেসবুকে পোস্ট করেন এক ব্যবহারকারী। এসময় সেখানকার কুকুর-বিড়ালগুলো বাঁচাতে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। এ সংক্রান্ত কিছু ভিডিও এবং ছবিও পোস্ট করেন তিনি। মুহূর্তের মধ্যে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতে জাপান গার্ডেন সিটিতে ছুটে যান অনেকে।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে জাপান গার্ডেন সিটিতে একদল বসবাসকারী ‘জেজিজি লাইফ সেফটি’ নামের ব্যানার ব্যবহার করে বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। জাপান গার্ডেন সিটির ভেতরে এ সংক্রান্ত কিছু ব্যানার-ফেস্টুন পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল- ‘সকল বেওয়ারিশ কুকুর প্রাণিপ্রেমীদের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হোক’, ‘জাপান গার্ডেন সিটির পরিছন্নতার স্বার্থে কুকুরের উচ্ছিষ্ট খাবার, মল-মূত্র কুকুরপ্রেমীদের বাসায় প্রেরণ করা হোক’, ‘বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করো, এনজিও ব্যবসা বন্ধ করো।’
রাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান একদল প্রাণিপ্রেমী। এ সময় আদাবর থানা থেকে পুলিশ কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত হন। সেখানে দেখা যায়, জাপান গার্ডেন সিটির ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সদস্যরা খোলা একটি জায়গায় বসে আছেন। কয়েকজনকে পুলিশসহ আসতে দেখে সেখান থেকে অনেকে উঠে চলে যান। ২২ নম্বর বিল্ডিং ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সেক্রেটারি শাহ নুর ভুঁইয়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এসময় তিনি আগত প্রাণিপ্রেমীদের বোঝানোর চেষ্টা করে বলেন, আমি নিজেও কুকুরগুলোকে খাবার দেই, আমার বাসা থেকেও দেয়। তাদের প্রতি এক ধরনের মায়া জন্মে গেছে। তবে এখানে কুকুরে কামড়ানোর মতো নেতিবাচক ঘটনাও আছে। এই কুকুরগুলোর কোনো মালিক নেই। অনেকে অভিযোগ দেয়- কুকুর নিয়ে, আমাদের কমিটি থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া আছে নিরাপত্তারক্ষীদের যে, কুকুর দেখলে বের করে দিতে। আমরা কুকুরকে এখান থেকে বের করে দেই। তবে আজকের ঘটনা দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেব। আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নেন।
তিনি আরও বলেন, আজকে যেটা হলো সেটির সঙ্গে আমরা একমত না। আমরা কুকুরমুক্ত এলাকা চাই, কিন্তু বিষ দিয়ে মারার পক্ষে আমরা না। সিটি করপোরেশন এসে নিয়ে যাক, এটা আমরা চাই। কারণ কুকুরের জন্য সাধারণ বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে আমাদের ওপর চাপ আছে। গত ৬-৭ মাস ধরে প্রচারণা তাহলে কারা চালাচ্ছে কুকুরের বিরুদ্ধে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনাদের মতো আরেকটা তরুণ প্রজন্ম আছে, যারা কুকুর চায় না।
বিষ প্রয়োগ করে কুকুর-বিড়াল হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে রাকিবুল হক এমিল বলেন, শুক্রবার জাপান গার্ডেন সিটির ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। ঘটনার পর আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। আমাদের মতো অনেকেই সেখান জড়ো হয়েছিল। ৩টি কুকুরের এবং একটি বিড়ালের ডেড বডি পাওয়া গেছে। বাকিগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে, আমরা পাইনি। প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হয়েছে- বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে। রাতে আমরা পুলিশসহ সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু এত মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছিল যে, কোনো একটা অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি যাতে না হয়, সেজন্য আমরা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। আমরা এই ডেডবডিগুলো ময়নাতদন্ত করব। এরপর আমরা আদালতে বিস্তারিত প্রতিবেদন নিয়ে আইনি লড়াইয়ে যাব।
এদিকে শনিবার সকালে আদাবর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন অভিনয় শিল্পী কাজী নওশাবা আহমেদ। তিনি পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের একজন সমন্বয়ক। তার অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদাবর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, অভিযোগের তদন্ত চলছে।
অপরদিকে জাপান গার্ডেন সিটির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অভিনয় শিল্পী জয়া আহসান। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে জানান, ক্ষুধার্ত কুকুরকে খাবার সেঁধে খাওয়ালো বিষ। ছয়টি কুকুর ও একটি বিড়ালকে বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলেছে জাপান গার্ডেন সিটি বিল্ডিং কমিটির লোকজন। প্রায় ৫ বছর ধরে এটি তারা চেয়েছিল। পারেনি স্থানীয় প্রাণিপ্রেমীসহ বিভিন্ন প্রাণিকল্যাণ সংস্থার প্রতিবাদে। আজ ঘটনা ঘটিয়ে দিল তারা।
এর ঠিক আগের পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, গণমাধ্যম বন্ধুদের অনুরোধ করছি, বিষয়টির গুরুত্ব দিয়ে আপনারা বরাবরের মতোই পাশে থাকুন। এই বর্বরতা মেনে নেওয়া যাবে না। এটি কেবল কুকুর হত্যা নয়, বিষ প্রয়োগে কাউকে হত্যা মানে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে মনে-প্রাণে ধারণ করা একটা সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই।
এদিকে প্রাণি হত্যার প্রতিবাদে জাপান গার্ডেন সিটি ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছে প্রাণিদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।