ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন ভার্সিটি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ১০

আনন্দ ভ্রমণ রূপ নিল বিষাদে

নিজস্ব সংবাদদাতা, শ্রীপুর, গাজীপুর

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

আনন্দ ভ্রমণ রূপ নিল বিষাদে

পিকনিক বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু

গাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের পিকনিক বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ১০ জন আহত হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামের স্থানীয় চায়না কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মোজাম্মেল হোসেন নাঈম (২৪), মোস্তাকিম রহমান মাহিন (২২) ও জোবায়ের আলম সাকিব (২২)। এর মধ্যে মোস্তাকিম রহমান মাহিন ঘটনাস্থলেই মারা যান।

গুরুতর আহত মোজাম্মেল হোসেন ও জুবায়ের রহমান সাকিবকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া আহত ৬ জনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। নিহতরা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। 
এ ঘটনায় গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে শনিবার দুপুরে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা খাতুনের নেতৃত্বে কমিটিতে পুলিশ, পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদেরও রাখা হয়েছে। অপরদিকে, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি এবং ইলেক্ট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাকিবুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চারজনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন, রেজিস্ট্রারসহ আরও দুইজন রয়েছেন। 
স্থানীয় বাসিন্দা আফসার উদ্দিন (৭০) জানান, গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ৪৬০ জন শিক্ষার্থী ওই এলাকার মাটির মায়া রিসোর্টে ৬টি বিআরটিসি দোতলা বাস এবং তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে পিকনিকে আসেন। তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামে পৌঁছানোর পর সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া ১১ হাজার ভোল্টেজের লাইনে একটি বাস বিদ্যুতায়িত হয়। এ সময় দুই ছাত্র বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। আহতদের প্রত্যেকের শরীরের বিভিন্ন অংশে বিদ্যুতায়িত হয়ে কারও হাত, কারও পা, কারও মুখ ঝলসে যায়। 
অপর প্রত্যক্ষদর্শী শামীম আহমেদ, রুবেল মিয়া ও জাকির হোসেন জানান, ৬টি বাসের মধ্যে ৫টি বাস রিসোর্টে চলে যায়। শেষের বাসটি সড়কের পাশের ১১ হাজার ভোল্টেজের লাইনে বিদ্যুতায়িত হলে পুরো বাস বিদ্যুতায়িত হয়। এ সময় বাস থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকলে ছাত্ররা চিৎকার শুরু করে। আমরা তাদের চিৎকার শুনে বাসের কাছে যাই। এ সময় তিনজন ছাত্র বাস থেকে নেমে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। পরে বের হতে না পেরে একজনের মৃত্যু  হয়। অপর দুইজনকে শুকনা বাঁশ দিয়ে শরীর থেকে আলাদা করি। পরে বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিয়ে বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ বন্ধ করতে বললে তারা বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। তা না হলে আরও ছাত্র মারা যেত। 
তারা জানান, যে বাসটি বিদ্যুতায়িত হয়েছে সেটা নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পর তারা ওই বাসের ভেতরে মদের গন্ধ পান। এ সময় সাংবাদিকরা ভিডিও এবং ছবি ওঠানোর সময় শিক্ষার্থীরা তাদের মোবাইল এবং ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদেরকে আক্রমণ করতে এগিয়ে আসলে এলাকাবাসী বাধা দিলে তারা সরে যায়। 
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম)  খন্দকার মাহমুদুল হাসান জানান, ওই লাইনটি ১১ হাজার ভোল্টেজের ছিল। সড়কের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন ক্রস করা অবস্থায় রয়েছে। একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে দোতলা বাসটি একটু হেলে পড়ায় বিদ্যুতায়িত হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতি বছর দ্বিতল বাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পিকনিক করে থাকি। দুর্ঘটনা বলে কয়ে আসে না। দুর্ভাগ্যবশত একটা ঘটনা ঘটে গেছে। এখন কিভাবে আহত শিক্ষার্থীদেরকে চিকিৎসা করানো যায় এবং শিক্ষার্থীদের কিভাবে নিরাপদে পৌঁছানো যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তদন্ত করার পর বলা যাবে এটি দুর্ঘটনা কি না। 
শিক্ষার্থীরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, নেশাগ্রস্ত থাকার বা নেশা করার কোনো প্রশ্নই আসে না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের শিক্ষকরা ছিলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা দুর্ব্যবহার করায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এবং নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর বলতে পারব তাদের পক্ষ থেকে মামলা করবে কি না। 
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) সালমা আক্তার, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, পিকনিক বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন ছাত্রের মৃত্যুর খবর পেয়েছি।

×