চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপির কাঁধে এখন অনেক দায়িত্ব। এদেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা, আকাক্সক্ষা বিএনপিকে নিয়ে। এজন্য মানুষের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী নেতাকর্মীদের আচরণ করতে হবে। তৈরি হতে হবে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের ঐতিহাসিক টাউন ফুটবল মাঠে জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বুঝতে হবে জনগণ কী চায়। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সব সংস্কার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বারা সম্ভব নয়। তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তারপর নির্বাচিত সরকার বাকি সংস্কার করবে।
তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, দলের মধ্যে গণতান্ত্রিকভাবে ভোটাভুটির পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত হবে। নেতৃত্বের শূন্যতা দূর হবে। নীতি-আদর্শ মেনে দলের কর্মী তৈরি করতে হবে। এক মাস নয়, দুই মাস নয়, ছয় মাস নয়, দুই বছর আগে সংস্কারের জন্য ভূমিকা রেখে ৩১ দফা দিয়েছিলাম, যে প্রক্রিয়া এখনো চলমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, নির্বাচন যত দেরি হবে, দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র তত বৃদ্ধি পাবে। যেই স্বৈরাচারকে দেশের জনগণ জীবন দিয়ে, সংগ্রাম করে বিতাড়িত করেছে, সেই স্বৈরাচার বসে নেই। তারা তাদের দেশী-বিদেশী প্রভুদের সঙ্গে নিয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে।
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে দেশের সবাই যেসব সংস্কারের কথা বলছেন, এগুলো সত্যিকার অর্থেই বাস্তবায়ন সম্ভব, যদি প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন। এর বাইরে সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সেজন্য জনপ্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন প্রয়োজন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, নির্বাচন যত দেরি হবে, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসুবিধা তত কমে যাবে। কৃষকসহ সবাই যেসব সমস্যায় রয়েছেন, সেসব সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। একটি নির্বাচন দিয়েই সম্ভব দেশের সব সমস্যা ধীরে ধীরে সমাধান করা।
যে দেশের রাজনীতি রুগ্ন সেদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই রুগ্ন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকার দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এগুলো আবার জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হলে নাগরিকের ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করতে হবে।
তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। গণঅভ্যুত্থানে ব্যক্তি পরিবর্তন হয়েছে, বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি।
সম্মেলন উদ্বোধনকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এদেশে ফ্যাসিবাদের জনক শেখ মুজিবুর রহমান। তার হাত ধরেই অর্থাৎ তার নেতৃত্বেই এদেশে হত্যা, লুণ্ঠন এবং অপরাজনীতি শুরু হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বদলে গণতন্ত্র হত্যা করে সব দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে একটি রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে একটি বদ্ধ কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল।
এসময় তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবের উত্তরসূরি ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত বাস্তবায়নকারী শেখ হাসিনা গত ১৭ বছর এদেশের জনগণের ঘাড়ে অবৈধভাবে চেপে বসে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে অবরুদ্ধ করে অসংখ্য খুন-গুম, ব্যাংক লুট এবং অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করছিল। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে বাংলাদেশকে দেউলিয়া এবং চরম দারিদ্র্যের শেষ সীমায় পৌঁছে দিয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, দেশকে দেশী ও বিদেশী চক্রান্তের মোকাবিলা করে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। আর এটা করতে হলে অবিলম্বে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার।
সম্মেলনের শুরুতে উদ্বোধক বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্য নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পবিত্র কুরআন ও গীতা পাঠ করা হয়। এরপর সম্মেলনের উদ্বোধকসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বিগত দিনে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন জেলা বিএনপি নেতা ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কু-ু ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুণ, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ।
সম্মেলনে সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা। বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহজাহান খান, সাধারণ সম্পাদক মোমিন মালিথা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবু তালহা, জেলা জাসাসের সভাপতি সেলিমুল হাবিব, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশিদ ঝন্টু, জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক তবারক হোসেন, জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী রউফুন নাহার রিনা, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, দর্শনা থানা বিএনপির সভাপতি খাজা আবুল হাসনাত, জীবননগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন খাঁন খোকন, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রোকন, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান লিপ্টন, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিলিমা রহমান বিশ্বাস, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু প্রমুখ।
সম্মেলনের একপর্যায়ে জেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের যেসব নেতাকর্মী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের হাতে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর বঙ্গজ বিস্কুট ফ্যাক্টরি চত্বরে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে হাজী মোজাম্মেল হক সভাপতি ও সহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর দলের সংকটকালীন মুহূর্তে মাহমুদ হাসান খান বাবুকে আহ্বায়ক ও শরীফুজ্জামান শরীফকে সদস্য সচিব করে দুই সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এরপর ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি আহ্বায়ক-সদস্য সচিব একই রেখে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।