ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে সোয়া সাত কোটি টাকার সেতু অকেজো

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

টাঙ্গাইলে সোয়া সাত কোটি টাকার সেতু অকেজো

সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী গ্রামের ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মাণ করা সেতুতে ওঠার সড়ক না থাকায় হেঁটে পারাপার

সোয়া সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না সেতুটি। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী গ্রামের ধলেশ্বরী নদীর ওপর এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাত কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে পোড়াবাড়ী-কাতুলী সড়কের ধলেশ্বরী নদীর ওপর ১০০ মিটার চেইনেজে ৯০ মিটার গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ পান মেসার্স তাপস ট্রেডার্স নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সেতুটির কাজ বিগত ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে সেতুটির মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ করেছে ঠিকাদার। সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির দুপাশের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়নি। সেতুর পাশে দিয়ে পোড়াবাড়ী, ছিলিমপুর, কাতুলী ও মাহমুদনগর ইউনিয়নের যাওয়ার কাঁচা রাস্তা। বর্ষার সময় সেই কাঁচা রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে যায়। এদিকে কাঁচা রাস্তা থেকে সেতুতে উঠতে প্রায় ২৫ ফিট উঁচু করে মাটি ভরাট করতে হবে। এছাড়া সেতুতে চলাচলের মতো কোনো উপায় নেই।
খারজানা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, ব্রিজ আছে রাস্তা নাই। ব্রিজের দুপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়নি। আমরা বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করি। স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ব্রিজ করে রেখেছে কিন্তু দুপাশে মাটি দিচ্ছে না। দুপাশের ঢালু জায়গা বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে যায় উঠতে অনেক কষ্ট হয়। কৃষক আফজাল মণ্ডল বলেন, এই ব্রিজটা যদি হয় তাহলে আমাদের সব দিক দিয়েই সুবিধা। ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে সঠিক সময়ে যেতে পারবে। নৌকার জন্য বসে থাকতে হবে না। পোড়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এই সেতু এভাবে পড়ে আছে। ঠিকাদার এখানে আসেন না। কোনো খোঁজখবরও নেন না। তিনি যদি ঠিকমতো কাজ করতেন তাহলে দুই বছর আগেই এই সেতু দিয়ে মানুষ যাতায়াত করতে পারত। ইউনিয়নবাসীর দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস তাপস ট্রেডাসের ঠিকাদার শরীফ মাহমুদ বলেন, আমি আমার দিক দিয়ে সম্পূর্ণভাবে এবং সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত। রাস্তার জমি আমাকে বুঝিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, জমি সংক্রান্ত কারণে জটিলতা ছিল। এটাও আমরা সম্পূর্ণ করেছি এবং জমি অধিগ্রহণ হয়ে গেলে অ্যাপ্রোচের কাজ হয়ে যাবে।
যশোরে লিচুতলায় ভৈরব
নদের ব্রিজে ধস

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস থেকে জানান, যশোর শহরের বারান্দিপাড়া লিচুতলার ভৈরব নদের ব্রিজের মাটি ধসে যাওয়ায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দিনের চেয়ে রাতে চলাচল বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অথচ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই।যশোর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব বারান্দিপাড়া। এই ওয়ার্ডে লিচুতলায় ব্রিজ দিয়ে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ফতেপুর ইউনিয়নের ঝুমঝুমপুর এলাকায় যাওয়া আসা করে। আবার ঝুমঝুমপুর এলাকাবাসীও একই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করে। অথচ ব্রিজের পূর্বপাশের রাস্তার বেশ কিছু অংশ ভৈরব নদে ধসে গেছে। আরেক অংশ দেবে গেছে। এতে করে ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রিক্সা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল চলাচল করছে।
এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হালিম শিপলু জানান, বারান্দিপাড়ার লিচুতলা ব্রিজ দিয়ে আমরা ফতেপুর ও ঝুমঝুমপুর এলাকায় যাই। এটি দিয়ে তাড়াতাড়ি আসা যাওয়া করা যায়। কিন্তু ব্রিজের পূর্ব পাশের রাস্তার কিছু অংশ ধসে গেছে। বাকি অংশ দিয়ে ইজিবাইক ও অটোরিক্সায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করি। এটা সংস্কার করা জরুরি। কারণ রাতে ব্রিজ থাকে অন্ধকার। ওই সময় চলাচল করা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ব্রিজের পূর্বপাশের অংশ আরও ভেঙে গেলে আমাদের চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। ব্রিজ দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে দক্ষিণ পাশ দিয়ে আড়াই কিলোমিটার ঘুরে ফতেপুর ও ঝুমঝুমপুর এলাকায় যেতে হবে।
মোহাম্মদ আলী নামে ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা জানান, ব্রিজের পূর্ব পাশের রাস্তার বেশ কিছু অংশ ধসে পড়ায় প্রাইভেটকার, পিকআপ অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখানকার কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে। অ্যাম্বুলেন্সের পরিবর্তে ইজিবাইকে করে নিতে হবে।
এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা জায়েদ হোসেন জানান, বারান্দিপাড়া লিচুতলা ব্রিজ দিয়ে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ কিনা আমার জানা নেই। সরেজমিনে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, প্রকৌশলী পাঠিয়ে ব্রিজের পূর্বপাশে ধসে পড়া রাস্তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

×