ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

জয়পুরহাটের বেগুনগ্রামে চিশতীয়া পীরের আস্তানায় নবান্ন উৎসব ও মেলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

জয়পুরহাটের বেগুনগ্রামে চিশতীয়া পীরের আস্তানায় নবান্ন উৎসব ও মেলা

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বেগুনগ্রামে চিশতীয়া পীরের আস্তানায়  ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব উদ্যাপন উপলক্ষে জমে উঠেছে একদিনের নবান্ন মেলা। প্রতি বছর বাংলা অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার হিসাবে ২১ নভেম্বর সকাল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত এই উৎসব পালিত হয়। হাজার হাজার ভক্ত, মুরিদ ও দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে পুরো এলাকা মুখরিত হয়। যা আধ্যাত্মিক চেতনার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। দুইতিনদিন আগে থেকেই ভক্তদের আগমন শুরু হয়।  নবান্ন উৎসবে শান্তিশৃংখলা রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন করা হয় যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। উৎসবে আগত কয়েক হাজার ভক্তের জন্য তৈরি হয় বিশাল পরিসরে ক্ষীর রান্না। আস্তানার ভান্ডার খানার তথ্য অনুযায়ী এ বছর ক্ষীর তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ১০৫ মণ চাল, ৯২ মণ গুড়, ৬৬ মণ দুধ এবং ৫০০টি নারিকেল। রান্নার জন্য ২৫০টি চুলা স্থাপন করা হয়। এর পেছনে প্রায় ৬০০ পীরভক্ত ও ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। রান্নার কাজ শেষ হলে জিকিরের মাহফিল শুরু হলে চারদিকের পরিবেশ গুঞ্জরিত হয় এবং ভাবগম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাহফিল শেষে ভক্তদের মধ্যে ক্ষীর বিতরণ করা হয়।
আস্তানার ভাষ্য মতে কুমিল্লা থেকে জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার বেগুনগ্রামে হযরত খাজা শাহ মাওলানা মো. আব্দুল গফুর চিশতী বাংলা ১৩২৮ সালে আসেন। তার প্রচেষ্টা ও পরামর্শে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় মক্তব, চশমায়ে উলুম মাদ্রাসা এবং একটি আস্তানা। মক্তব মাদ্রাসা এবং আস্তানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে কালাইসহ আশেপাশে হাজার হাজার মুরিদ তৈরি হয়।  মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসে তিনি আসেন এবং অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরে যান। তিনি ১৩৮২ সালের ১৬ শ্রাবণ ইন্তেকাল করেন। পীরের তত্বাবধানে তার অনুসারীরা প্রতি বছর নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেন। ২১ নভেম্বর বিকালে ও রাতে বেগুনগ্রামের আস্তানায় গিয়ে দেখা যায় কেউ নারিকেল ভাঙছেন, কেউ গুড় গলাচ্ছেন আবার কেউ ক্ষীর রান্নার কাজে মগ্ন। এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার ভক্ত আসতে শুরু করে। উৎসবকে ঘিরে পুরো বেগুনগ্রামে বসে একদিনের জমজমাট মেলা। রাস্তার দুই পাশে বিরাট এলাকা জুড়ে দোকানের পড়সা বসে। মেলায় বিক্রি হয় কাঠের খেলনা, হাত পাখা, শিশুদের খেলনা, নানা ধরনের মিষ্টান্নসহ নানা সামগ্রী।

×