খানা-খন্দে একাকার হয়ে গেছে।
সাগর পারের জনপদ কলাপাড়ায় গ্রামীণ জনপদের ৭৭ কিলোমিটার পাকা সড়কের চরম বেহাল দশা। খানা-খন্দে একাকার হয়ে গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নির্মিত বিটুমিনাস কার্পেটিং এ সড়কের অধিকাংশ সিলকোট উঠে গেছে। বর্ষায় পানি জমে একাকার হয়ে যায়। অধিকাংশ সড়কের কার্পেটিংএর অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই। বালু কাদামাটি বেরিয়ে গেছে। পাকা এ সড়কগুলো এখন মরনফাদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে মানুষ। দীর্ঘ দিনে মেরামত না করায় এসব সড়ক এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। তবে গ্রামের মানুষের দাবি ছয় চাকার অবৈধ দৈত্যাকৃতির যান, হামজা কিংবা ট্রলি অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই করে চলাচলের কারনে শুধু পাকা সড়ক নয়, আরও শত কিলোমিটার কাঁচা ও কয়েক কিলোমিটার হেরিংবন্ড রাস্তা ভেঙ্গে গেছে।
এলজিইডির তথ্যমতে, তিন মিটার প্রস্থ এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরনে ৮০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ব্যয় হয়। অথচ অবৈধ ছয় চাকার দৈত্যাকৃতির ওই যানের (ট্রলি-হামজা) চাকায় (নির্মাণের ৩-৬ মাসেই) পিস্ট হয়ে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সরকারের শত কোটি টাকার পাকা সড়ক ছাড়াও আরও ৫০ কোটি টাকার কাঁচা মাটির কিংবা ইটের রাস্তার সর্বনাশ করে হয়েছে। এসব রোধে নেই কোন পদক্ষেপ। ফলে সরকারের গ্রামীণ যোগাযোগের উন্নয়ন চিত্র বিবর্ণ হয়ে গেছে। সড়ক ধংসের এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
এলজিইডি সুত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলায় এলজিইডি নির্মিত পাকা-কাঁচা মোট সড়ক রয়েছে এক হাজার ৯৬৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে উপজেলা সংযোগ সড়ক রয়েছে ১০টি, যার দৈর্ঘ্য ১২০ দশমিক ১৪ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সংযোগ সড়ক রয়েছে ২৩টি। যার দৈর্ঘ্য ২২৯ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার। গ্রামীণ গুরুত্বপুর্ণ সড়ক (এ টাইপ) রয়েছে ৫১টি। যার দৈর্ঘ্য ২৪২ দশমিক ৮৬কিলোমিটার। গ্রামীণ কম গুরুত্বপুর্ণ (বি-টাইপ) প্রত্যন্ত এলাকার সড়ক রয়েছে ৪৪৫টি। যার দৈর্ঘ ১৩৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে চার শ্রেণির সড়কের মধ্যে বিটুমিনাস কার্পেটিং (পাকা) সড়ক রয়েছে ৩০৪ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার। এক শ’ সাত দশমিক ০৫ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে এইচবিবি। আরসিসি ও সিসি সড়ক রয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার। এছাড়া কাঁচা মাটির সড়ক রয়েছে এক হাজার ৫৫৪ দশমিক ৬১কিলোমিটার। ১২ টি ইউনিয়নের হিসাব এটি।
এসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মতে, ১২ ইউনিয়নের অন্তত ৯০ কিলোমিটার পাকা বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়ক খুব খারাপ হয়ে গেছে। গেছে যান চলাচল অনুপযোগী। যার মধ্যে টিয়াখালী প্রায় ১৫ কিমি, ধানখালীতে প্রায় দুই কিমি, চম্পাপুরে সাড়ে পাচ কিমি, লালুয়ায় ১০ কিমি, বালিয়াতলীতে ১১, ধুলাসারে তিন কিমি, মিঠাগঞ্জে আট, নীলগঞ্জে প্রায় সাত কিমি, মহিপুরে আড়াই, লতাচাপলীতে নয় কিমি এবং ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নে সাড়ে চার কিলোমিটার মোট ৭৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। এর মধ্যে হেরিংবন্ড ছাড়াও কাঁচা আরও এক শ’ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা রয়েছে। বর্ষাকালে হাটু সমান কাদা হয়ে যায়। লালুয়ার অধিকাংশ সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এসব সড়ক পাকা না মাটির তা পর্যন্ত বোঝার উপায় নেই বলে জানালেন ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ^াস। মিঠাগঞ্জের অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হন পর্যটকরা। কারণ পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাসহ গঙ্গামতি এলাকা এ উপজেলার অন্তর্গত। রয়েছে গোটা উপজেলায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করার অসংখ্য স্পট। যেখানে পর্যটকরা প্রতিদিন ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালক ইব্রাহীম হাওলাদার জানান, এসব বিধ্বস্ত রাস্তায় যাত্রী নিয়ে চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুকি ক্রমশ বাড়ছে। এছাড়া অটো-টমটম প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। সকলের মতামত অবৈধ ছয় চাকার দৈত্যাকৃতির যানবাহন (হামজা-ট্রলি) মূল সড়কে চলাচল বন্ধ না করলে রাস্তা মেরামত করে কোন লাভ হয় না।
কলাপাড়া এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেন জানান, বর্তমানে ১০ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান বছওে আরও আট কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, পর্যায়ক্রমে সড়কগুলো পাকাকরন করার পাশাপাশি মেরামত করা হবে। এছাড়া সড়ক নষ্ট করতে না পারে এজন্য ছয় চাকার দৈত্যাকৃতির ওই যান হামজা কিংবা ট্রলি চলাচল বন্ধে তারা কলাপাড়া এবং মহিপুর থানার ওসিদ্বয়কে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছেন। যা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধের কাচা রাস্তাও পাকাকরণের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
আর কে