ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সিলেটে ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল

বদরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২২ নভেম্বর ২০২৪

সিলেটে ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল

৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিলেট।

চারজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে পুরো ৫০ শয্যার হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। বেকার পড়ে রয়েছে অপারেশন থিয়েটার। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল। রোগী থাকলেও নেই চিকিৎসক। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। এতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।বেহাল এই হাসপাতালটি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৪ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

 

হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, গড়ে প্রতিদিন এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন ৩ থেকে ৪ শতাধিক মানুষ। গত ১ বছর ধরে চিকিৎসক সংকট থাকায় প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ৫০ শয্যার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৩১ জন চিকিৎসকের সমম্বয়ে চলার কথা থাকলেও বাস্তবে মাত্র ৪ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি। ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ব্যবহার হয় না চিকিৎসক ও নার্সদের কোয়ার্টার। চিকিৎসক না থাকায় কোয়ার্টার এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালটিতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু, এ্যানেসথেসিয়া, গাইনি এন্ড অবস, কার্ডিওলজি, অর্থো সার্জারী, চক্ষু, ইএনিটি, চর্ম ও যৌন, সার্জারি, মেডিসিন, মেডিকেল অফিসার (৩ জন), ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার প্যাথলজি, ইনডোর মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল সার্জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার হোমিও দেশজ, মেডিকেল অফিসার ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (৮ জন) চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। সংকট রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির র্কমচারীর। সাতজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী জায়গায় আছেন একজন। ফলে সময়মতো পরিষ্কার না হওয়ায় হাসপাতালে দূর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। চিকিৎসক সংকট থাকায় যে কোনো রোগী এলেই জরুরি বিভাগ থেকে তাদের স্থানান্তর করা হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গুরুতর রোগী স্থানান্তর নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় দরিদ্র পরিবার গুলো।

স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা না হওয়ায় মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন অনেক রোগী। জনবল সংকটে এখন বন্ধ রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় মা ও নবজাতকের চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র, জরুরি প্রসূতি সেবা (ইওসি), বিকল হয়ে পড়ে আছে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ২২ লাখ টাকায় কেনা ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন।

সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটঊর্ধ্ব জয়নব বিবি, মরিয়ম আক্তার, কহিনুর বেগম, ইতি রানী চন্দ্র, লোকমান হোসেন, রুহুল আমিনসহ একাধিক রোগী আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের কস্টের কথা আমরা কোথায় বলবো? কার কাছে বলবো? এর আগেও দুইদিন এসেছি। কিন্তু ডাক্তার দেখাতে পারিনি, বলেছে সকাল সকাল আসতে। আজ সকাল ৯ টায় আসছি ডাক্তার দেখাবো বলে। কিন্ত এখন বেলা ১১ টার বেশি বাজে কোন ডাক্তার এখন পর্যন্ত চেম্বারে আসেনি। কালকে শুনলাম এতোবড় এই হাসপাতালটিতে মাত্র চারজন ডাক্তার আছেন। এরকম একটি হাসপাতালে ৪ জন ডাক্তার কি করবে? ৪ ডাক্তার কয় জায়গায় যাবে? কোথায় চিকিৎসা দিবে।

এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কর্মকর্তা ডাঃ সারোয়ার আহমদ বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসকের ব্যাপক সংকট রয়েছে। মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যা হাসপাতাল চালানো অনেক কঠিন বিষয়। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের জন্য হাসপাতাল পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মাত্র ৪ জন চিকিৎসক মিলে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে হচ্ছে। ফলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি জানান, সিলেট জেলার অন্য হাসপাতালগুলোর চেয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ বেশি। প্রায় ৬ মাস ধরে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের মধ্যেও সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। জনবল সংকট ও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম চিকিৎসক রয়েছেন’। ইতিমধ্যে আমরা আমাদের জেলা সিভিল সার্জন মহোদয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি জানিয়ে ডাক্তার সংকট নিরসনের জন্য একাধিকবার আবেদন পাঠিয়েছি।’

এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন বর্তমানে সিলেট জেলার সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তার সংকট আছে। তারমধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশি চিকিৎসক সংকট। গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। আমরা বারবার নতুন করে চিকিৎসকের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) বরাবর আবেদন / চিঠি পাঠিয়েছি। এছাড়াও মোবাইলে বিষয়টি জানানো হয়েছে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে চিকিৎসক সংকট কেটে যাবে।

এমএম

×