ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

উৎসব মূখর পরিবেশে শনিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন।। ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন তারেক রহমান

নিজস্ব সংবাদদাতা, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: ১৬:৪৮, ২২ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৬:৪৮, ২২ নভেম্বর ২০২৪

উৎসব মূখর পরিবেশে শনিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন।। ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন তারেক রহমান

দীর্ঘ ১৪ বছর পর আগামীকাল শনিবার উৎসব মূখর পরিবেশে হতে চলেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন। এ সম্মেলনকে ঘিরে জেলাজুড়ে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সম্মেলন সফল ও সার্থক করতে দিনরাত কাজ করে চলছেন বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মী। সম্মেলনের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সভাপতি পদে ১জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ২জন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৪ জন প্রার্থীর প্রার্থীতা চূড়ান্ত হয়েছে। সভাপতি পদে একজন প্রার্থী হওয়ার জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক  সম্পাদক পদের অপর ৬ জন প্রার্থীরা ছুটে চলেছেন  জেলার ৮০৮ জন কাউন্সিলর ভোটারদের কাছে। সমর্থন চাচ্ছেন সকলের নিকট। সাধারণ সম্পাদক পদে ১ জন ও সাংগঠনিক পদে ৩ জন প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলায় অনুর্ধ্ব ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অবশিষ্ট নেতা কাউন্সিলরদের সমর্থনে নির্বাচিত হবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর বঙ্গজ বিস্কুট ফ্যাক্টরি চত্বরে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে হাজী মোজাম্মেল হক সভাপতি ও সহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর দলের সংকটকালীন মুহূর্তে মাহমুদ হাসান খান বাবুকে আহ্বায়ক ও শরীফুজ্জামান শরীফকে সদস্য সচিব করে ২ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এরপর ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি আহ্বায়ক-সদস্য সচিব একই রেখে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন, আন্দোলন-সংগ্রাম, মামলা, হামলা, গ্রেপ্তারের কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করতে পারেনি জেলা বিএনপি। খানিকটা দেরিতে হলেও এবার জেলা বিএনপি বড় আয়োজনে সম্মেলন করতে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ইতিহাসে কোনো খোলা ময়দানে এতবড় আয়োজনে সম্মেলন এই প্রথম। গত ১৪ নভেম্বর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। আগামীকাল ২৩ নভেম্বর শনিবার জেলা বিএনপির কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে এ তিনটি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে জেলা ও উপজেলা শহর, শহরতলী ও গ্রামের আনাচে কানাচে পোস্টার,  ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। এতে কেউ কেউ নিজের আবার কেউ কেউ তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে দোয়া ও সমর্থন চাচ্ছেন। বিশেষ করে পোস্টার, ছোট-বড় বিলবোর্ড, ব্যানারে ছেয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গা শহর। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সাঁটানো বিভিন্ন  ব্যক্তিগত পোস্টার-বিলবোর্ড-ব্যানার। এতে নিজের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের ছবি শোভা পাচ্ছে। জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহীদ হাসান চত্বর, চৌরাস্তার মোড়, স্টেশন রোড, কলেজ রোড, রেল বাজার, টাউন ফুটবল মাঠ, নতুন বাজার, হাসপাতাল রোড,  হাসপাতাল চত্বর সহ বিভিন্ন এলাকায় লাগানো হয়েছে পোস্টার, বিলবোর্ড ও ব্যানার।
গত ১৪ নভেম্বর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। আগামীকাল ২৩ নভেম্বর জেলা বিএনপির সম্মেলনে এ ৩টি পদে প্রত্যক্ষ ভোট গ্রহণ করা হবে। সভাপতি পদে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় উপ-কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান খান বাবু। সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। এদের একজন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান শরীফ এবং অপরজন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিলিমা রহমান ওরফে মিলি বিশ্বাস । সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন ৪ জন প্রার্থী।  তারা হলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সফিকুল ইসলাম পিটু, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ মিল্টন ও জেলা যুবদলের অর্থ সম্পাদক মোমিনুর রহমান।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলনের কাউন্সিলর মুন্সী আওরঙ্গজেব বেল্টু বলেন, ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবে এটা খুবই আনন্দের বিষয়। গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচিত হলে,তারা আমাদের মূল্যায়ন করবে। নির্বাচিত নেতারা বিএনপিকে শক্তিশালী করবে। মানুষের পাশে দাঁড়াবে। দলের থেকে প্রাপ্য তাদের নেতা-কর্মীদের হাতে পৌঁছে দেবে। নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করবে,এমন নেতাই আমাদের প্রয়োজন।
সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী খালিদ মাহমুদ মিল্টন জানান, এর আগে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়নি। আমি নির্বাচনে একজন প্রার্থী। আশা করি নির্বাচনে বিজয়ী হবো। সম্মেলন সফলভাবে শেষ হবে বলে আমি আশা করি।
জেলা বিএনপির কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মিলিমা রহমান বলেন,বিএনপি একটি সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। আর এ রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ১৭ বছর স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ মতে আমরা গণতান্ত্রিক ধারায় বিএনপিকে গড়ে তুলতে চাই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন। সে কারণে নির্বাচনকে আমরা জরুরী বলে মনে করি। নিজের ঘরের মধ্যে যদি আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি তবে ইনশাল্লাহ আমরা দলের মধ্যেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ২০২২ সালে জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি কেন্দ্র অনুমোদন করে। ইতোমধ্যে জেলার ৪১টি ইউনিয়নের ৩৬৯টি ওয়ার্ড কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে শেষ করা হয়েছে। সম্মেলনে প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচন করা হয়। পৌর কমিটিও সম্মেলন করে গঠন করা হয়েছে। জেলায় এই প্রথম প্রত্যক্ষ ভোট ও স্বচ্ছ ব্যালটের মাধ্যমে আগামীকাল ২৩ নভেম্বর জেলা বিএনপির নেতা নির্বাচিত হবেন । জাতীয়তাবাদী দল শহীদ জিয়ার আদর্শের দল। আমরা গণতন্ত্র বিশ্বাস করি। আর এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিক নির্দেশনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা কাউন্সিল শেষ করবো। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের অত্যচার-নির্যাতনের পর এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে। সম্মেলনে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। উদ্বোধন করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কাউন্সিলে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কমিশনার এ্যাডভোকেট শাজাহান মুকুল বলেন, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে ৩টি পদে ৭ জন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। তবে  সভাপতি পদে প্রতিন্দন্দ্বী না থাকায় মাহমুদ হাসান খান বাবুই হচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি। ৮০৮ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নেতা নির্বাচিত করবেন।
আগামীকাল ২৩ নভেম্বর সম্মেলন সুন্দর ভাবে শেষ হবে এবং ত্যাগী পোড়খাওয়া নেতাদের দিয়ে কমিটি উপহার দিবে এমনটাই প্রত্যাশা জেলার সর্বস্তরের বিএনপি নেতা-কর্মীদের।

×