টেকনাফের নাজির পাড়ার বাসিন্দা জোবায়ের ও নজুমউদ্দিনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের।গেল ২৯ শে মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায় পাওনা টাকার জের ধরে নজুমদ্দিনের নেতৃত্ব ফিরোজ, কায়েস,মাসুৃদ,মাছন সহ বেশ কয়েকজন মিলে ফিল্মি স্টাইলে ঘরে ঢুকে জুবায়েরকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে চট্রগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায় জুবায়ের।
সে দিনের ঘটনার আদ্যপান্ত জানিয়েছেন জুবায়ের পরিবারের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ঘটনার দিন নিহত জুবায়ের হত্যাকারী কারা তার মা, ভাই, ভাইয়ের ছেলে ও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। মাত্র ৮০০ টাকার জন্য বন্ধুর গুলিতে বন্ধু নিহত এই সংবাদ পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসে কে বা কারা জুবায়েরকে গুলি করে হত্যা করে, কিন্তু ঘটনার দুইদিন পরে নিহত জুবায়ের এর মা বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ্য করে টেকনাফ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন মামলা নং ০২.জি আর ১৮০/২৪, মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হককে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই তৎকালীন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসমান গণির নেতৃত্বে শুরু হয় পুলিশি অভিযান। জুবায়ের হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অপরাধে ঘাতক নজুম উদ্দিনের আপন মামাতো ভাই মাসুদ এবং মো: হোসনকে আটক করে টেকনাফ থানা পুলিশ। তাদের দুজনকে আদালতে সোপর্দ করার পর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় মাসুদ ও হোছন।
এদিকে আদালতের ১৬৪ ধারার জবানবন্দির দুটি নথি আসে আমাদের হাতে। যেখানে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়,২৯ মার্চ নজুমদ্দিন ও ফিরোজ মাসুদের বাড়িতে এসে মাসুদের চাচা কায়েসের সঙ্গে কথা বলে মাসুদের হাতে তুলে দেয় ধারালো অস্ত্র এবং নজুমদ্দিন ও ফিরোজের হাতে দুটি পিস্তল ছিলো বলে জবানবন্দি দেয় মাসুূদ। এরপর কায়েস হাতে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পরে তারা। মাঝপথে যুক্ত হয় হোছন সহ মোট ৫ জন।
নতিতে আরও উল্লেখ করা হয় নিহত জুবায়েরের সঙ্গে কায়েসের পূর্ব শত্রুতা থাকায় প্রতিশোধ নিতে তাদের গন্তব্য জুবায়ের বাড়ির দিকে ছিল। এরপর ফিরোজ জুবায়ের বাড়ির সামনে ফাঁকা গুলি ছুড়ে,
নজুমদ্দিন, কায়েস, ফিরোজ, হোছন, জুবায়ের বাড়িতে ডুকে বেরিয়ে এসে নজুমদ্দিন বলে জুবায়েরকে শেষ করে দিয়েছি। মো: হোছনও আদালতে ১৬৪ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকান্ডে কতজন জড়িত ছিল স্বীকার করেছে এবং নজুম উদ্দিনের গুলিতে নিহত হয়েছে মর্মে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে।
একদিকে আলোচিত জুবায়ের হত্যাকান্ডে সরাসরি কারা জড়িত তা নিয়ে আটক আসামিরা আদালতে দিয়েছে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধামে প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখেও উঠে এসেছপ কে বা কারা গুলি করে হত্যা করেছে জুবায়েরকে।
কিন্ত এই ঘটনায় আলোচনায় না থাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হককে করা হয় জুবায়ের হত্যাকান্ডের ১নং আসামি। কিন্তু আদালতে দুই আসামির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি এবং সে দিনের প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখেই ছিলো না এই ইউপি সদস্যের নাম।
অনুসন্ধানে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর জুবায়ের হত্যা মামলার রহস্য। নজুম উদ্দিনের গুলিতে নিহত জুবায়ের এর মা এবং মার্কিন হত্যাকারী ছিদ্দিকের আত্মীয় হয়।
আত্মীয়তা নিশ্চিত করেন নাজির পাড়ার প্রবীন মুরব্বি আবুল কাসেম।আবুল কাসেম বলেন,জুবায়ের এর মা মাবিয়া খাতুন ও ছিদ্দিক তারা আপন মামাতো ফুপাতো ভাই বোন।
উল্লেখ্য, ছিদ্দিক ২০১৫ সালের আলোচিত মার্কিন হত্যার ৩ নাম্বার আসামি। নিহত আজিজুল হক মার্কিনের আপন ছোট ভাই এনাম মেম্বার, ছিদ্দিক ও এনাম মেম্বারের মধ্যে দীর্ঘদিনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দন্দ্ব থাকায় জুবায়ের হত্যা মামলাতে অভিযুক্ত করেছে বলে অনুসন্ধানে উঠে আসছে।
টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উসমান গণির সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল ছিদ্দিকের। অভিযোগ আছে ওসি উসমান গনিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নিহত জুবায়ের এর মাকে রাজি করিয়ে এনাম মেম্বার সহ আরও কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করেছে ছিদ্দিক। নিহত জুবায়ের যদি বেঁচে থাকতো এনাম মেম্বার সহ নিরপরাধ যাদেরকে আসামি করেছে সেটি কোনদিন হতোই না বলে মতামত ব্যক্ত করেন অত্র এলাকার মাদ্রাসা দারুল কোরআন এর শিক্ষক হাফেজ জসিম উদ্দীন। কারণ নিহত জুবায়ের এলাকার শান্ত সৃষ্ট এবং একজন ভালো ফুটবলার ছিলেন। এলাকার সবাই জুবায়েরকে ভদ্র ছেলে হিসেবে জানতো।
বর্তমান টেকনাফ থানা থেকে কক্সবাজার এসপির অধীনে উক্ত আলোচিত মামলার তদন্ত হওয়ায় অত্র এলাকার মানুষ প্রত্যাশা করছে নিহত জুবায়ের সঠিক বিচার পাবে এবং হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটন হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।
আলোচিত জুবায়ের হত্যাকান্ড মামলার অধিক তদন্তের জন্য পুলিশ প্রধান ও চট্টগ্রাম ডিআইজি, কক্সবাজার এসপির কাছে আবেদন করে স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হক এনাম।
ডিআইজি উক্ত মামলার আটক দুই আসামির ১৬৪ ধারা জবান বন্দি, পত্র পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে মামলাটি কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা শাখায় হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন। বর্তমান জুবায়ের হত্যা মামলা কক্সবাজার জেলা ডিবি পুলিশ তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার বলছেন, এই মামলায় যাতে কেউ হয়রানি না হয়- সে বিষয়ে সুষ্টভাবে তদন্ত করতে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জাফরান