কঠিন বাস্তবতার শিকার হয়েছেন অল্প বয়সেই তরুণ জিহাদ। ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে যেতে হয়েছে কৃষি কাজে, বেচতে হয়েছে সার, তবুও থেমে থাকে নি তারপর চলা, কঠিন পরিশ্রম আর অধ্যবসায় দিয়ে নওগাঁ গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
তার পথচলা মসৃণ ছিল না, তবু থেমে থাকেননি তিনি । জীবিকার তাগিদে পড়ালেখার খরচ যোগাতে নেমেছেন এখন চা বিক্রেতা হিসেবে!চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন বিভাগে সুযোগ পাওয়া জিহাদ এখন ক্যাম্পাসে চা বিক্রি করেন।
জিহাদের দোকানের নাম মার্চেন্ট অব সিইউ। গত ২৬ অক্টোবর এটি চালু হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শাটল ট্রেনের স্টেশন রয়েছে, সেখানে চেয়ার-টেবিল পেতে চা বিক্রি করেন। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে কাজ। দিনে প্রায় ৭০ কাপ চা বিক্রি করেন তিনি। এতে ২৫০-৩০০ টাকা লাভ থাকে বলে জানালেন। এখানে ৮ ও ১০ টাকায় ‘উত্তরবঙ্গের ঘরানার’ চা পাওয়া যায়। প্লাস্টিকের বদলে কাগজের কাপে চা পরিবেশন করেন জিহাদ।
জিহাদ আলীর জন্ম নওগাঁর রানীনগরের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। বাবা কৃষক, মা গৃহিণী। টানাটানির সংসার। এমন অবস্থায় জিহাদকেও কাজে নামতে হয়। কখনো নিজেদের জমিতে, কখনো অন্যের জমিতে কাজ করেছেন। জমিতে উৎপাদিত সবজি বাজারে নিয়ে বিক্রিও করেছেন।
বাবার সাথে মাঠে কাজ করতেন জিহাদ পড়ালেখার প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বাড়িঘর ছেড়ে শহরতলির একটি মেসে ওঠেন। সেখানে থেকে চলে পড়ালেখা। কিন্তু এই আগ্রহ তৈরি হয়েছিল কীভাবে? জিহাদ বলেন, ‘মায়ের ইচ্ছাটাই বড় ছিল। মা চাইতেন, ছেলে পড়ালেখা করে শহরে থাকবে। সেখানে উন্নত জীবন কাটাবে। তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতেই অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া। পরিবারের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে সব সময়।
সেই জিহাদ এ বছর রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছেন। ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে। তবে সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। আগে সংসারের হাল ধরতে নানা কাজ করতেন জিহাদ। এখন পড়ালেখার খরচ জোগাতে চায়ের দোকান দিয়েছেন।
নতুন পরিবেশ আর নতুন ব্যবসা নিয়ে ভালোই সময় কাটাচ্ছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।
জাফরান