ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২১ নভেম্বর ২০২৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

রাজধানীতে বৃহস্পতিবার ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালকদের অবরোধে ভোগান্তিতে পড়ে কমলাপুরে ট্রেনের যাত্রীরা

শহর ঢাকা কেমন যেন বিগড়ে গেছে। জনমনে এক ধরনের অশান্তি। অসন্তোষ। বিশেষ করে সড়কে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। অবস্থা এতই নাজুক যে, ঘর থেকে বের হওয়ার আগে সাতবার ভাবতে হচ্ছে। কোন পথে কী দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে কেউ বলতে পারছে না। এমনকি অনেক হিসেব করে বের হওয়ার পরও ফেঁসে যেতে হচ্ছে। কারণ এখন প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। প্রতিবাদী অবস্থান মিছিল মিটিং অবরোধ ইত্যাদি লেগেই আছে। সবই হচ্ছে রাজপথে। কর্মসূচি ঘিরে হাঙ্গামা বেধে যাচ্ছে যখন তখন।

কখনো বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। কখনো যৌথবাহিনীর লাঠিচার্জ। মার খেয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ইত্যাদি করতেও দেখা যাচ্ছে। এসবের প্রভাবে রাস্তাঘাট সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে পড়ছে। হয়ত এক জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, প্রভাব পড়ছে অন্য এলাকাগুলোতেও। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির চাকা ঘুরছে না। জরুরি প্রয়োজনে মাইলের পর মাইল পায়ে হাঁটতে হচ্ছে। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ মিলছে না নগরবাসীর।      গত কিছুদিনের চিত্র তুলে ধরলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার দাবিতে দিনের পরদিন সমাবেশ হয়েছে শাহবাগে। নীলক্ষেত সায়েন্সল্যাব এলাকায় বিক্ষোভ করেছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ভর্তিতে লটারি প্রথা বাতিল করতে হবে- এই দাবিতে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দখলে নিয়েছিল মিরপুর সড়ক। পঙ্গু হাসপাতাল এলাকা ঘিরে রেখেছিল জুলাইয়ে আহত চিকিৎসা বঞ্চিতরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে মহাখালী এলাকা অবরোধ করেছিল তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজ এবং সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষও লম্বা সময় ধরে চলেছে। আর সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাস্তায় নেমে এসেছিলেন  ব্যাটারিচালিত রিক্সা শ্রমিকরা। তাদের রিক্সার ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে, চালকরা বলছেন, না খেয়ে মরতে হবে তাদের।

তাই বাঁচার দাবি নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে সমবেত হতে শুরু করেন তারা। এর পরের ঘটনাবলি কারও অজানা নয়। লাঠি চার্জ, গাড়ি ভাঙচুর, ফুলের টব ছুড়ে মারা ইত্যাদি চলেছে বিকেল পর্যন্ত। আর রাজধানী অচল ছিল প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত। এমনকি সারাদেশ থেকে আসা ট্রেন ঢাকায় ঢুকতে পারেনি। তার আগে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলাকালে ট্রেনে ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল। এতে অবোধ শিশুসহ একাধিক যাত্রী মারাত্মক জখম হয়েছেন। অর্থাৎ, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় কবে সব দাবি দাওয়া পূরণ হবে মানুষের ? কবে শান্ত হবে সবাই ? কবে শান্তি ফিরবে জনজীবনে ? এই প্রশ্নগুলো জরুরি হয়ে সামনে এসেছে। নাগরিকরা উদ্বিগ্ন। 
হতদরিদ্রদের জন্য শীতবস্ত্র চাই ॥ রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। দুপুর ছাড়া বাকি সময় অনুভূত হচ্ছে হালকা শীত। সাধারণ মানুষ, নিশ্চিত বলা যায়, পুরোপুরি শীত নামার অপেক্ষা করছেন। নতুন ফ্যাশনের জামা জুতা প্রস্তুত করে রেখেছেন অনেকেই। কেউ কেউ পরছেনও। কিন্তু মনে করিয়ে না দিলেই নয় যে, ঢাকার হতদরিদ্রদের কাছে শীত সবার আগে আসে। রাস্তার ধারে, ফুটওভার ব্রিজে শুয়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষ এরই মাঝে ভোগান্তিতে পড়ে গেছেন। এরই মাঝে ভোগান্তিতে পড়ে গেছেন। শীতবস্ত্র নেই তাদের।

একটু খেয়াল করলে চোখে পড়বে, ভাগ্যবঞ্চিতরা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। শীত বাড়লে ভোগান্তি আরও বাড়বে। তার আগে আমরা কি পারি না, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে? শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করতে পারি না তাদের জন্য ? হ্যাঁ, এই ধরনের উদ্যোগ অনেকেই গ্রহণ করেন। তবে দেরি করে ফেলেন। এবার তেমনটি না হোক। কারণ এবার শীত বেশি পড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।  
শীতবস্ত্র নেই তাদের। একটু খেয়াল করলে চোখে পড়বে, ভাগ্যবঞ্চিতরা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। শীত বাড়লে ভোগান্তি আরও বাড়বে। তার আগে আমরা কি পারি না, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে? শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করতে পারি না তাদের জন্য ? হ্যাঁ, এই ধরনের উদ্যোগ অনেকেই গ্রহণ করেন। তবে দেরি করে ফেলেন। এবার তেমনটি না হোক। কারণ এবার শীত বেশি পড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

×