পৌর শহরের একমাত্র খাল দখল চলছে ফ্রি স্টাইলে
কলাপাড়া পৌরশহরের মাঝখান দিয়ে প্রবহমান খালটি এখন বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দখল-দূষণের কারণে খালটি ভরাট হয়ে সংকুচিত হয়ে গেছে। বহু জায়গায় খালের পানির প্রবহ বন্ধ। স্লুইস সংযুক্ত এই খালটির ওপর নির্ভর করে গোটা পৌরসভার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। বর্তমানে পানির প্রবহ আটকে বর্জ্য পচা গন্ধের কারণে খালের পাড়ের মানুষের ভোগান্তি চরমে। অনেক বছর আগে পৌরসভার উদ্যোগে খালটির কিছু অংশ নামকাওয়াস্তে পুনর্খনন করা হয়েছে। একইভাবে নামকাওয়াস্তে খালের দখলদারের স্থাপনা অপসারণ করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার যেই সেই অবস্থা। খালটির সীমানা চিহ্নিত করে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের পাশাপাশি খালের বর্জ্য অপসারণের দাবি সচেতন পৌরবাসীর।
আন্ধারমানকি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত কলাপাড়া পৌরশহরের মাঝখান দিয়ে এ খালটি তিনটি শাখা হয়ে গেছে। একদিকে রহমতপুর, একদিকে চিংগুরিয়া হয়ে রহমতপুর ও উপজেলা পরিষদের পেছন হয়ে টিয়াখালীর দিকে মিশেছে খালটি অপরপ্রান্ত। তিন দিক মিলে খালটি অন্তত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এবং প্রস্থ অবস্থান ভেদে ২০-৩০ মিটার।
একসময় এ খালটি দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকা-ট্রলার চলাচল করত। স্লুইসগেট হওয়ার পরে নৌচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শহরসহ আশপাশের পানি সরবরাহের একমাত্র পথ এ খালটি। পরে খালের দুইপাড় দখল করে দেদার গড়ে তোলা হয় অবৈধ স্থাপনা। যার মধ্যে অনেক বহুতল ভবনও রয়েছে। পৌরবাসী যারা খালের দুইপাড়ে বসবাস করছেন তাদের পারিবারিক সকল বর্জ্য এ খালে ফেলছেন। বাজারের বিভিন্ন বর্জ্যও খালটিতে ফেলা হচ্ছে। ফলে ভরাট, দখল-দূষণে একাকার হয়ে গেছে। বর্তমানে এতিমখানা কালভার্ট থেকে রহমতুপুর পর্যন্ত অংশ ময়লা-আবর্জনায় একাকার হয়ে আছে। পানির সরবরাহ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।
ইতিপূর্বে খালটির চিংগুরিয়া অংশের কয়েকটি বাঁধ অপসারণের ফলে সেখানকার ভোগান্তি অনেকাংশে কমেছে। খালের ওই স্থানটিকে আবার বহু বছর আগে ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ একটি চক্রের যোগসাজশে একটি মহল ৭-৮ ফুট পানি প্রবহমান খালটিকে কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত নেয়। ওই চক্র দখলের পাশাপাশি কিছু অংশে বালু ভরাটে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই অনিয়ম রোধে খালটি উন্মুক্ত রাখতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) উদ্যোগে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, খালটির পাড়ের বাসিন্দারা তাদের টয়লেটের অধিকাংশ আউটলাইন খালের সঙ্গে সংযোগ দিয়ে রেখেছে। এসব নিয়ন্ত্রণ কিংবা খালটি দখল-দূষণ বন্ধ করতে পৌরসভা কখনো আন্তরিক ছিল না। তাদের চরম উদাসীনতায় এখন খালটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
নাগরিক উদ্যোগ কলাপাড়ার আহ্বায়ক নাসির তালুকদার জানান, এই খালটির সঙ্গে কলাপাড়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। খালটি উদ্ধার এবং পানির প্রবহ সচল রাখা জরুরি প্রয়োজন। কলাপাড়া পরিবেশ ও জনসুরক্ষা মঞ্চের সদস্য সচিব মনোয়ারা বেগম জানান, কলাপাড়া শহরবাসীর বাস উপযোগী পরিবেশ বজায় রাখতে হলে খালটির সকল বর্জ্য অপসারণ করা জরুরি প্রয়োজন। কলাপাড়া পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, খালটির দখলদার উচ্ছেদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সীমানা চিহ্নিতের কাজ চলছে। এছাড়া বর্জ্য অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।