গাজীপুরে ৬ষ্ঠ দিনের মতো বুধবারেও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে চক্রবর্তী এলাকায় ওই মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এদিকে, বাসের ধাক্কায় আহত এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর গুজবে একইদিন ওই মহাসড়ক অবরোধ করেছে হামিম গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিকরা। সকাল থেকে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ অব্যহত থাকায় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকরা জানায়, গাজীপুর মহানগরের সারোবো এলাকাস্থিত বেক্সিমকো ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্কে বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলোর শ্রমিকরা গত অক্টোবর মাসের বেতন ভাতা পাওনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার দিন তারিখ নির্ধারণ করে আশ্বাস দিলেও শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করেনি। এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তারা ওই বকেয়া ভাতা পরিশোধের দাবিতে শুক্রবার বাদে গত বৃহষ্পতিবার হতে প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চক্রবর্তী এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে আসছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকেও ওই দাবিতে পার্কের শ্রমিকরা চক্রবর্তী এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। দুপুর পৌণে দুইটার দিকে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলেও ঘন্টাখানেক বিরতির পর বিকেল পৌণে ৩টার দিকে পুনঃরায় ওই এলাকায় সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে শিল্প ও থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনঢ় থেকে সড়কের উপর অবস্থান করতে থাকে। বিকেল ৫টার দিকে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ চলছিল।
তারা আরো জানান, বেক্সিমকো লিমিটেডের শ্রমিকদের অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের লক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগ যৌথভাবে অর্থঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কাশিমপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা হতে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে অবরোধ করে। দুপুরে এক ঘন্টা বিরতির পর শ্রমিকদের অবরোধ বিকেল ৫টার দিকেও অব্যহত রয়েছে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা বলছে, দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস না পেলে তারা মহাসড়ক ছেড়ে যাবে না। তবে শিল্প ও থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। আন্দোলনরত শ্রমিকরা গত সাপ্তাহিক ছুটিরদিন শুক্রবার বাদে বৃহষ্পতিবার হতে প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চক্রবর্তী এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে আসছে। মঙ্গলবারেও রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত তারা সড়ক অবরোধ করে রাখে।
অপরদিকে, কারখানায় যাওয়ার পথে বাসের ধাক্কায় আহত এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর গুজবে একইদিন (বুধবার) ওই চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করেছে হামিম গ্রুপের দ্যাটস ইট নিটওয়্যার কারখানার শ্রমিকরা।
কাশিমপুর থানার ওসি ও শ্রমিকরা জানান, বুধবার সকাল ৬টার দিকে হামিম গ্রুপের জিরানী এলাকার দ্যাটস ইট নিটওয়্যার কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে কারখানায় যাচ্ছিলেন। এসময় ওই কারখানার সামনে বাসের ধাক্কায় এক নারী শ্রমিক আহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে সকাল পৌণে ৭টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার সামনে ওই সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এসময় তারা ফ্লাইওভার নির্মাণ ও কারখানার অব্যবস্থাপনা দূর করাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।