গাজীপুরে থামছেই না শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ। মঙ্গলবারেও বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের চক্রবর্তী এলাকায় সকাল হতে ফের অবরোধ করে রেখেছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। এছাড়াও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্থানীয় ডরিন ফ্যাশন লিমিটেডের তিনটি ও আইরিশ কারখানার শ্রমিকরা।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়া ডরিন কারখানা খুলে দেওয়া ও কয়েক কর্মকর্তার অপসারনের দাবিতে ডরিন কারখানার এবং শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে আইরিশ কারখানার শ্রমিকরা এ আন্দোলনে অংশ নেয় এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের চার কারখানার শ্রমিকরা। প্রায় সাড়ে ৯ঘন্টা পরও সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকেও মহাসড়ক অবরোধ অব্যহত রেখেছে শ্রমিকরা।
এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, কারখানা ও গাড়ি ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৩ শ্রমিককে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে যৌথবাহিনী।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকরা জানায়, গাজীপুর মহানগরের চক্রবর্তী এলাকাস্থিত বেক্সিমকো ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্কে বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কারখানাগুলোর শ্রমিকরা অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে শুক্রবার বাদে গত বৃহষ্পতিবার হতে প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে আসছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকেও ওই দাবিতে পার্কের শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী চক্রবর্তী এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
প্রায় একই সময়ে একই এলাকায় অবস্থান নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ওই মহাসড়ক অবরোধে অংশ নেয় স্থানীয় ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। এসময় ডরিন ফ্যাশন লিমিটেডের ৩ কারখানা ডরিন গার্মেন্টস লি., ডরিন অ্যাপারেলস ও ডরিন ওয়াশিং এর শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়া কারখানা খুলে দেওয়া ও কয়েক কর্মকর্তার অপসারনের দাবিতে এবং শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে আইরিশ কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে।
এতেই ওই সড়কের উভয়দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে শিল্প ও থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনঢ় থেকে সড়কের উপর অবস্থান করতে থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৯ঘন্টা ধরে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ চলছিল।
এদিকে কাশিমপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, আগেরদিন সোমবার ওই মহাসড়ক অবরোধকালে আন্দোলনরত বেক্সিমকো ও ডরিন কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে অংশ না নেয়ায় তারা ওই এলাকার অ্যামাজন নিটওয়্যার নামের একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে। এসময় দু’পক্ষের শ্রমিকদের মাঝে বাকবিতন্ডা ও সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী আমাজন কারখানা ও বিগবস কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুইটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও চক্রবর্তী এলাকায় ৫ টি ট্রাক ভাংচুর করে। বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ওই ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করে ২৩ শ্রমিককে মঙ্গলবার ভোরে আটক করে যৌথবাহিনীর সদস্যরা। পরে তাদেরকে কাশিমপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটককৃতদের অধিকাংশই বেক্সিমকো ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিক।
শিল্প পুলিশ জানায়, কাশিমপুর থানার পানিশাইল এলাকার ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড নামের তিনটি কারখানা গত ১ নভেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। গত রবিবার কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হলেও দুপুরের পর ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। পরে কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে রাতে গেইটে নোটিশ টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে ওই নোটিশ দেখতে পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এসময় তারা কারখানা খুলে দেওয়ার এবং কয়েক কর্মকর্তার অপসারণের দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা চক্রবর্তীর পাশ^বর্তী জিরানী এলাকায় অবস্থান নিয়ে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের অবরোধ সৃষ্টি করে। মঙ্গলবারেও তারা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। এছাড়াও শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে ও ছাটাইকৃতদের পুনঃনিয়েগের দাবিতে আইরিশ কারখানার একইদিন বিক্ষোভ ও একই এলাকায় সড়ক অবরোধ করে।
শিল্প পুলিশ আরো জানায়, বেক্সিমকো ইন্ডস্টিয়াল পার্কের পোশাক ও সিরামিক কারখানাগুলোতে প্রায় এক চল্লিশ হাজার কর্মী রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের পর গত কয়েক মাস ধরে শ্রমিকরা নিয়মিত বেতনভাতা পাচ্ছে না। প্রতিমাসেই আন্দোলন করে তাদের বেতন আদায় করতে হচ্ছে। কারখানাগুলোর শ্রমিকদের গত অক্টোবর মাসের বেতন ভাতা পরিশোধের একাধিকবার তারিখ নির্ধারণ করেও পরিশোধ করা হয়নি। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
এর জেরে শ্রমিকরা সাপ্তাহিক ছুটিরদিন শুক্রবার বাদে বৃহষ্পতিবার হতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫দিন ধরে সকাল হতে রাত পর্যন্ত কারখানার পার্শ্ববর্তী চক্রবর্তী এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ আসছে। এতেই ওই সড়কের উভয়দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জিএমপি’র কাশিমপুর থানার ওসি আরো জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে ও ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া ডরিন কারখানা খুলে দেওয়া ও কয়েক কর্মকর্তার অপসারনের দাবিতে এবং শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে আইরিশ কারখানার শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকাল ৮টা হতে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে অবরোধ করে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকেও শ্রমিকদের অবরোধ অব্যহত রয়েছে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা বলছে, দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস না পেলে তারা মহাসড়ক ছেড়ে যাবে না। তবে শিল্প ও থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।
এর আগে মহানগরীর মোগরখাল এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস গ্রুপের ৫টি কারখানার শ্রমিকরা বন্ধ করে দেওয়া তাদের কারখানাগুলো খুলে দেওয়া এবং বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে ৯নভেম্বর সকাল হতে টানা তিনদিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। স্মরণকালের এ অবরোধের কারণে ভয়াবহ যানজটের ফলে স্থবির হয়ে পড়ে গাজীপুরের জনজীবন। এর প্রভাব পরে উত্তরাঞ্চলের সবক’টি সড়ক ও মহাসড়কে ও ব্যবসা বাণিজ্যে।
এসআর