মানিকগঞ্জের ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলায় আলো ছড়ানোর বদলে মুখ থুবড়ে পড়েছে সড়কে স্থাপন করা হয় সোলার বাতিগুলো। ঘিওর ও দৌলতপুর দুটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় পাশে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয়েছিল সৌরবিদ্যুতের স্টিক বাতিগুলো। এসবের অবস্থা এখন নিবু নিবু।
আবার অনেক লাইট স্ট্যান্ডসহ উধাও হয়ে গেছে। কোথাও উপড়ে পরে আছে রাস্তার পাশে। বেশির ভাগ বাতি নষ্ট হয়ে গেলেও সারানোর উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউই। ফলে রাতের অন্ধকারে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে স্থানীয় লোকজনের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের উপজেলা পরিচালনা ও উন্নয়ন প্রকল্প স্থানীয় সরকার বিভাগের সহযোগিতায়, উপজেলা পরিষদের বাস্তবায়নে ও এলজিইডি এর কারিগরি তত্ত্বাবধানে এবং জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ২০১৬-১৭ এবং ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে দুই দফায় দু উপজেলার ১৫ টি ই্উনিয়নের সড়কে স্থাপন করা হয় ৫১২ টি সোলার সড়কবাতি।
ঘিওরে পান্না রুরাল ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এবং দৌলতপুর উপজেলায় ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট নামের প্রতিষ্ঠান এসব সড়ক বাতি স্থাপন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে।‘সোলার হোম স্ট্রিট লাইট’ নামের প্রকল্পে প্রতিটি সড়কবাতি স্থাপনের ব্যয় ধরা হয় ৫৬ হাজার ৪শত টাকা। সে হিসেবে ৫১২ টি সড়ক বাতি স্থাপনে প্রকল্পের ব্যয় হয় ২ কোটি ৮৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮শত টাকা।
বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সন্ধ্যার পর বেশির ভাগ সড়কবাতি জ্বলছে না। কিছু সড়কবাতি মিটিমিটি আলো দিয়ে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যেই নিভে যাচ্ছে। রাস্তার পাড়ে পড়ে আছে স্ট্যান্ড, নেই বাতি। ঘিওরের মাইলাগি, গোলাপনগর বেপারী পাড়া, বটতলা মোড়, পয়লা, বড়টিয়া বাজারে, বানিয়াজুরী – জাবরা সড়কে একাধিক বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এই সোলার বাতিগুলো শুধু স্থাপন করেই যেন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব শেষ!
উপজেলা সদরের স্কুল শিক্ষক জাভেদ আলী বলেন, নিম্নমানের সোলার সড়ক বাতি ক্রয় ও স্থাপন করায় অল্প দিনে সোলারের আলোর ক্ষমতা কমে গেছে। বাতিগুলো এখন আর আগের মত আলো দেয় না, জ্বলে টিপটিপ করে ।তেরশ্রী এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান ও জিসান বলেন, অনেক বাতি বিকল হয়ে গেছে, কিছু ভেঙে মাটিতে পড়েছে ও কয়েকটি উধাও হয়ে গেছে। এছাড়া অনেক বাতি গাছের থাবায় অন্ধকারে। যেন বাতির নিচে অন্ধকার। দেখার কেউ নেই!
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা এক সোলার প্যানেল প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক জানান, এসব সৌরবাতি বসানোর প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল প্রত্যন্ত গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মোড় আলোকিত করা। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে এ উদ্দেশ্য খুব একটা কাজে দিচ্ছে না।
‘সোলার হোম স্ট্রিট লাইট’ প্রকল্পের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পান্না রুরাল ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মোঃ আতিক মুঠোফোনে বলেন, নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে ৩ বছর ওয়ারেন্টি ও দেখভালের চুক্তির মেয়াদ শেষ। এছাড়াও গত বছর আমি এই প্রতিষ্ঠানের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। তাই এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।
ঘিওর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। তবে বিষয়টি অবগত আছি। ইতিমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে দ্রুত সড়ক বাতি সংষ্কার করা হবে।