আজ ২০ নভেম্বর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ দিবস। এই দিনে যুদ্ধে শহীদ হন ১১ মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর ছিল পবিত্র ঈদুল ফিতর। ভোর হয় হয় অবস্থা মসজিদ থেকে মোয়াজ্জিনের ফজরের আযানের ধ্বনি আসছে। কেউ ঘুমের ঘোরে অচেতন আবার কেউবা তৈরী হচ্ছে ফজর নামাজ আদায় করতে। ঠিক এমনি সময়ে দাউদকান্দি উপজেলার গোয়ালমারী-জামালকান্দি এলাকা হানাদার পাক বাহিনীর মর্টার সেলের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে।
গোয়ালমারীতে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। সেই ক্যাম্পে হামলা করাই ছিল পাক হানাদারদের মূল উদ্দেশ্য । ঈদের দিনে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে সহজেই মুক্তিযোদ্ধাদের গায়েল করা যাবে ভেবে পাক সেনারা হামলা করেছিল এই দিনে গোয়ালমারীতে। এ দিকে মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পেরেছিলেন ঈদের দিনে পাক সেনাদের গোয়ালমারী এলাকায় আক্রমনের খবর। পাক সেনাদের মর্টার এবং রাইফেলের গুলির আওয়াজ শুনেই মুক্তিযোদ্ধারাও শুরু করে পাল্টা আক্রমণ। শুরু হয় উভয় পক্ষের সম্মুখ লড়াই। রণক্ষেত্রে পরিনত হয় গোয়ালমারী বাজার এবং জামালকান্দি এলাকা।
ভোর সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত একটানা ১৫ ঘন্টা যুদ্ধ চলে । দাউদকান্দি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য পশ্চিম দিকের কালীর বাজার এবং মোলাকান্দি এলাকা দিয়ে এগিয়ে আসেন মতলবের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল অদুদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরাট বাহিনী। দাউদকান্দি এবং মতলবের মুক্তিযোদ্ধাগন পাক হানাদার বাহিনী উত্তর দিকে পিছু হটে তাদের দাউদকান্দি সদরস্থ ডাক বাংলো ক্যাম্পে ফিরে যেতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শেষ দিকে উত্তর দিক থেকেও ঘিরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধারা। কেউ বলেন এ যুদ্ধে ৭০ জন পাক সেনা নিহত হয়েছে। পরদিন সকালে জামালকান্দি, লামছড়ি, দৌলদ্দি, কালাইরকান্দি, ডুনি নছরুদ্দি ও গোয়ালমারী এলাকায় ধানের মাঠ, খাল বিল এবং ডোবা নালায় পাক সেনাদের মৃত দেহ ভেসে উঠে। এ দিকে এ যুদ্ধে শহীদ হন সুন্দলপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমীন এবং রফারদিয়া গ্রামের মোস্তাক আহমেদ।
এছাড়া শহীদ হন জামালকান্দি গ্রামের আব্দুর রহমান সরকার, সামছুন্নাহার ও তার কন্যা রেজিয়া খাতুন, সাইদুর রহমান ও আছিয়া খাতুন। কামাইরকান্দি গ্রামের গিয়াসউদ্দিন, সোনাকান্দা গ্রামের শহীদ উলাহ, রফারদিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম এবং গোয়ালমারী বাজারের ইয়াসমীন পাগলিনী। এই দিনটির কথা স্বরণ হলে এখনও এলাকাবাসীর গা শিউরে উঠে৷