.
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশখ্যাত গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া ফেরিঘাট চলছে জোড়াতালি দিয়ে। কাগজে-কলমে ৭টি ঘাট থাকলেও বাস্তবে নেই। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় রয়েছে ৪টি ফেরিঘাট। ৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ফেরিঘাট চলে জোড়াতালি দিয়ে। ৭ নম্বর ফেরিঘাটের পাশে রয়েছে নাব্য সংকট। পন্টুনে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি পার্কিং রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকেন নীরব।
সরেজমিন দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে এবং ঘাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনি চিত্র দেখা ও জানা যায়।
ঘাট সংশ্লিষ্টরা জানান, দৌলতদিয়া পারে ৭টি ফেরিঘাট রয়েছে। তবে ১, ২, ৫ ও ৬ নম্বর ফেরিঘাট দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ। ১ ও ২ নম্বর ফেরিঘাট ৩ বছরের অধিক সময় বন্ধ রয়েছে। ৫নং ফেরিঘাট ২ বছর ধরে বন্ধ অবস্থায় রয়েছে, ৬নং ঘাট শুকনো মৌসুমে বন্ধ রাখা হয়। ৩ ও ৪ নম্বর ফেরিঘাট চলে জোড়াতালি দিয়ে। পন্টুনগুলোর মাত্র একটি পকেট রয়েছে। অর্থাৎ এক সঙ্গে একটি ফেরি ভিড়তে পারে। ৭নং ফেরিঘাটের পন্টুনের পাশে নাব্যর কারণে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করছে। গুরুত্বপূর্ণ এই ফেরিঘাটের পন্টুনে ৩টি ফেরি রাখা সম্ভব। তবে নাব্যর কারণে একটি পকেট বন্ধ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বন্ধ ঘাটগুলো বিলুপ্ত না করার বিশেষ কারণ রয়েছে। যে কারণে প্রয়োজন না থাকার পরও অকেজো ফেরিঘাটগুলো কাগজে-কলমে সচল রয়েছে। সচল দেখিয়ে প্রতিবছর মেরামতের নামে বরাদ্দকৃত টাকা পকেটে নেয় বিআইডব্লিউটিএ অসাধু কর্মকর্তারা।
এদিকে সচল ফেরিঘাটগুলো সার্বক্ষণিক থাকে অনিরাপদে। ফেরি আসার পূর্বে অসংখ্য অটোরিক্সা পন্টুনে দাঁড়িয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে। পন্টুনে ঝুঁকি নিয়ে পার্কিং করা গাড়িগুলো যে কোনো সময় নদীতে পড়ে যেতে পারে। যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ে এবং ফেরিতে গাড়িগুলো উঠা-নামায় অতিরিক্ত ব্যয় হয়। একাধিক অটোরিক্সা চালক বলেন, পন্টুনে গাড়ি রাখা ঝুঁকি। তবে এ যাবত কেউ কোনোদিন বাধা দেয়নি। যে কারণে আমরা যাত্রীদের নেওয়ার জন্য পন্টুনে চলে আসি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (আিইডব্লিউটিএ) দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, নদীর পানি কমে আসায় ফেরিঘাটের পন্টুনগুলো নিচে নামানো হয়েছে। ঘাটের পাশে অসংখ্য ডুবোচর এবং নাব্যর কারণে ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করা হচ্ছে। ১,২ ও ৫ নম্বর ঘাট দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে। ঘাটগুলো বন্ধ থাকলেও যানবাহন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পন্টুনে ঝুঁকি নিয়ে অটোরিক্সা থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (আিইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যে) মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জনান, ফেরিঘাটে লাগানোর সময় স্থানীয় অটোরিক্সাগুলো পন্টুনে রাখে। এতে বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জনবল সংকট থাকার কারণে দেখভাল করা সম্ভব হয় না। তবে নৌপুলিশ ঘাটে আসলে হয়তো পন্টুনে অকারণে গাড়ি আসা বন্ধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমান ১৫টি ছোট বড় ফেরি চলাচল করছে। মাত্র ৩টি ঘাট সচল রয়েছে। নাব্য সংকটের কারণে ৭ নম্বর ফেরিঘাটে ড্রেজিং চলমান রয়েছে।
দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) এমরান হোসেন তুহিন বলেন, দৌলতদিয়ায় সব ফেরি ও লঞ্চ ঘাটে পুলিশ টহলে থাকে। তবে পন্টুনে গাড়ি ওঠা-নামার দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিসির। ঘাটে ফেরি না থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে পন্টুনে গাড়ি পার্কিং রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত পন্টুনে গাড়ি রাখা বাধা দিয়ে থাকি।’