ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

টাঙ্গাইলে যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

যথাযোগ্য মর্যাদায় টাঙ্গাইলে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে মওলানা ভাসানীর মাজারে রবিবার সকাল সাড়ে ৭টার সময় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দের নেতৃত্বে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, প্রোভোস্ট, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, অফিস প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। বিশ^বিদ্যালয় অফিসার্স অ্যসোসিয়েশন, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতি, ভাসানী পরিষদ ও বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও পৃথক পৃথকভাবে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া সকাল ৮ টায় তবারক বিতরণ ও বাদ যোহর বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হয়।
টাঙ্গাইলের সন্তোষে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, যে মানুষটির (মওলানা ভাসানীর) জন্ম না হলে আমরা আজকে বাংলাদেশের নাগরিক হতাম না। মওলানা ভাসানীর জন্ম না হলে এ ভুখন্ডে পাকিস্তানের জন্ম হতো না, আর পাকিস্তান না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। বাংলাদেশ না হলে আজকে আমাদের এই অবস্থা হতো না। সেই বুজুর্গ মওলানার অনাদর দেখে খুব কষ্ট লাগে, খুব খারাপ লাগে।
বঙ্গবীর বলেন, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে একটা মারাত্মক পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তনে মানুষ খুব আশা করেছিল। কিন্তু গত তিন মাসে মানুষ আশার মতো কোন ফল পায় নাই। সাধারণ মানুষের যে উপার্জন তারা বাজারে যেতে পারছে না, স্ত্রী-পুত্র পরিবার নিয়ে ভালোভাবে খেতে পারছে না। তিনি বলেন, যারা সরকার চালাচ্ছেন তাদেরকে অনুরোধ করবো, তারা যেন দেশের মানুষের কথা বিবেচনা করেন। ক্ষমতা কারও জন্য চিরস্থায়ী নয়। যারা ছিলেন তাদের জন্য যেমন নয়, আজকে যারা এসেছেন তাদের জন্যও চিরস্থায়ী নয়। এজন্য দেশের মানুষের কথা চিন্তা করুন- দেশের মানুষকে সম্মান করুন। অতীতকে সম্মান করুন। যাদের এই দেশের জন্য অবদান আছে তাদেরকে যথাযথযোগ্য সম্মান দিয়ে রাষ্ট্র চালাবার চেষ্টা করুন। অতীতকে বর্জন করে, অস্বীকার করে, যদি কেউ পরিবর্তনের সুফল পেতে চায়- তাহলে আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে। দু’দিন পরে তাদেরকেও একই ফল ভোগ করতে হবে।  
বঙ্গবীর আরও বলেন, এই দেশের মানুষ চায় গণতন্ত্র, চায় ভোটাধিকার, শেখ হাসিনার এই রকম ন্যক্কারজনক পতনের প্রধান কারণ- তিনি মানুষের ভোটাধিকারকে সম্মান করেন নাই। পরপর বেশ কয়েকবার মানুষকে সঠিকভাবে ভোট দিতে দেন নাই। যার ফল শেখ হাসিনা ভোগ করছেন। দীর্ঘ সময় মানুষকে ভোটাধিকার ছাড়া রাখলে এ রকমই হয়। এখন যারা ক্ষমতায় আছে তাদের পরিণতি খুব ভালো হবে না- এটা আমার বিশ্বাস।
এ সময় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সখীপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র সানোয়ার হোসেন সজীবসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
রবিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপি আয়োজিত স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি শেখ হাসিনা সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, এখন কেউ কেউ বলছেন হঠাৎ করে তিনি ঢুকে পড়বেন। আমরাও তো চাই আসেন, ঢুকে পড়েন। বিএনপির নেতাকর্মীরা জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। মওলানা ভাসানী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে শ্রদ্ধার এবং সন্মানের। তাকে চিনেছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। তাকে চিনেছিলেন বলেই শহীদ জিয়াউর রহমান তার আদর্শ গ্রহণ করেছেন। আমাদের নেতা শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ঘোষক কৃষকদের কাছে গিয়ে কাঁদার মধ্যে কৃষকের কথা শুনতেন। যেমন শুনতে মওলানা ভাসানী।
তিনি বলেন, আগামী দিন হচ্ছে বিএনপির দিন। যারা এ দেশটাকে ১৬-১৭ বছর ধরে লুটে-পুটে খেয়েছেন আর মানুষের উপর জুলুম করেছেন তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার দিন। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি। আপনারা সংস্কার করেন, আমরা সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু এমন সময় নিবেন না, যাতে মানুষ ধৈর্য্যহারা হয়। মানুষের ধৈর্য্য থাকতে থাকতে নির্বাচন দেয়ার তাগিদ দেন তিনি। বিএনপি করা কি অপরাধ। আমাদের অনেক নেতাকর্মী এখনো জেলখানায়। বিএনপির যারা বাইরে আছে ৬০ লক্ষ আসামী বিএনপির। দুই থেকে আড়াই লক্ষ মামলা। আমরা অন্তর্র্বতী সরকারকে সমর্থন করি। তাই আমরা অনুরোধ করবো যারা গণতন্ত্রের জন্য মামলার মুখোমুখি হয়েছে তাদের মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেবেন। সংস্কার করেন, আমরা সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু এমন সময় নিবেন না, যাতে মানুষ অস্বস্তি না হয়। ধৈর্য্য থাকতে থাকতে কাজটা শেষ করার উদ্যোগ নেবেন এটা আমরা প্রত্যাশা করি।
এ সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুটু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় বিএনপির শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ওবায়দুল হক নাসির, জেলা বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি হামিদুল হক মোহন, জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফরহাদ ইকবাল, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলী, শহর বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান আলীমসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

×