ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

কালচে পানির ওপর লাল শাপলা রাজ্য

মো. মামুন চৌধুরী

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

কালচে পানির ওপর লাল শাপলা রাজ্য

চারদিকে সবুজ সারি সারি চা গাছ। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, মাঝখানে লাল শাপলার বিল। বিলের কালচে পানির ওপর সবুজের ফাঁকে থরে থরে ফুটে আছে লাল শাপলা। সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতিকে ভিন্ন এক রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে যেন রংতুলির আঁচড়ে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, পানির ওপরে লাল গালিচা বিছানো রয়েছে। এক পলক দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। 
মুগ্ধতা ছড়ানো হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের এ শাপলার বিলে প্রকৃতিপ্রেমীদের আনাগোনা। রাতে শাপলা ফুটে। তাই ফুটন্ত ফুল দেখতে সকালে মানুষের ভিড় জমে বিলে। বিকালেও মানুষের ভিড় জমে উঠে এ বিলের পাড়ে। 
সরেজমিন দেখা দেখে, বাগান কর্তৃপক্ষ বিলের চার পাশে বড় গাছ ও বাঁশ দিয়ে রাস্তায় বেড়া দিয়ে, চৌকিদার বসিয়েও আটকাতে পারছে না মানুষ ও যানবাহনের ভিড়। বিলের সৌন্দর্যের আকর্ষণে কাক ডাকা ভোর থেকেই ছুটে চলেছে তরুণ-তরুণীরা। 
জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য চা বাগানের অভ্যন্তরে শুরু থেকেই তৈরি এসব বিলে সারা বছর পানি থাকে। সব চা বাগানেই এমন বিল রয়েছে। প্রায় ২০ একর জায়গাজুড়ে থাকা এ বিলটিতে অধিক পরিমাণে লাল শাপলা দেখা যায়। বিলে ফুল ফুটেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন খরব ছড়িয়ে পড়লে প্রকৃতিপ্রেমীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বিলে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন পর্যটকরা। কাক ডাকা ভোরে এবং বিকালে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন ভ্রমণপিপাসুরা। তবে এরই মধ্যে ভালো না লাগার বিষয় হলো এ বিলে যারাই আসছেন, তাদের অধিকাংশই ফুল ছিঁড়ে ছবি তুলছেন। মূলত ছবি তোলার জন্যই ফুল ছিঁড়ে নিচ্ছেন। এমনটি চা বাগানের শ্রমিকের ছেলেমেয়েরাও এ ফুল ছিঁড়ে এখন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বিক্রি করছেন। এরই মধ্যে জেলার অন্যতম ‘লাল শাপলা বিল’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে এ বিল। চা বাগানের ভেতরে গ্রামীণ প্রকৃতির মধ্যে শাপলার এ অবারিত রঙিন রূপ যে কাউকে মুগ্ধ করে। সাধারণত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এ বিলে লাল শাপলা ফুল ফুটে। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পর্যটক জানান, তারা হবিগঞ্জ থেকে এসেছেন লাল শাপলা বিল দেখতে। দূরে হওয়ার কারণে সকালে না আসতে পেরে বিকালে এসেছেন, কিন্তু ফুটন্ত ফুল দেখতে না পেলেও তারা খুশি, বিলটি দেখতে পেরেছেন। 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, লাল শাপলা বিলটি খুব সুন্দর। কিন্তু যে যেভাবে পারছে, ফুল ছিঁড়ে নিয়ে ছবি তুলছে। এতে সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি প্রকৃতির অনিন্দ সুন্দর শাপলা ফুল বংশবিস্তারের ক্ষতি হচ্ছে।

নাহিদা

×