.
অগ্রহায়ণের শুরুতেই রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। শনিবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুরে উৎসবের আমেজে নেচে গেয়ে চলতি মৌসুমের আমন কাটা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।
বিকেলে স্থানীয় কৃষক মনিরুজ্জামানের খেতে এ ধান কাটা উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা কৃষি বিভাগের ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ উপলক্ষে সেখানে ধানকাটা প্রতিযোগিতা ও নাচ-গানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে বরেন্দ্রের মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের উৎসব। রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলে শুরু হয়েছে আমন কাটার মৌসুম। দলবদ্ধভাবে এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কৃষাণ-কৃষাণি মাঠে নেমে পড়ায় তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। কেউ ধান কেটে জমি খালি করছেন, আবার কেউ কেউ মাড়াইও সেরে ফেলছেন। অনেকে ধান বস্তায় ভরে আঙিনায় নিচ্ছেন। বাম্পার ফলনের আনন্দে কৃষকরা নতুন স্বপ্ন বুনছেন।
এ বছর বরেন্দ্রে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা, যা কৃষকের মনে বাড়তি উৎসাহ জোগাচ্ছে। কৃষকরা জানান, মৌসুমের প্রথমদিকে আবহাওয়ার অনিয়মিত পরিস্থিতি ও খরার কারণে আমন উৎপাদন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত প্রকৃতি অনুকূল থাকায় সেই শঙ্কা কাটিয়ে উঠেছেন। বরেন্দ্রের প্রান্তর এখন সোনালি আভায় সিক্ত। বর্তমানে রাজশাহী, চাঁপাই ও নওগাঁর বিস্তীর্ণ মাঠে আমনের বাম্পার ফলনের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এই অতিরিক্ত আবাদ এবং পরিবেশের সহায়ক পরিস্থিতির কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, এবার বাজারে ধানের ভালো মূল্য আছে। তার কারণে তাদের মনে খুশির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
রাজশাহী কৃষি অফিস বলছে, চলতি মৌসুমে জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৩ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমি। তবে বাস্তবে চাষ হয়েছে ৮৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে। এ আবাদ থেকে ৩ লাখ ৫ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। ফলনও ভালো হচ্ছে। এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা যেমন ছাড়ানো সম্ভব হয়েছে, তেমনি উৎপাদনেও রেকর্ড সৃষ্টি হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। রাজশাহী কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমনের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১ হাজার ৭৫৯ হেক্টর জমি, যার মধ্যে আবাদ হয়েছিল ৮৩ হাজার ১৭৭ হেক্টরে। ওই বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৯১ হাজার ৬২ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হয়েছিল, এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়েছিল। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে গত কয়েক বছর ধরে আমন উৎপাদনে রাজশাহী জেলার কৃষকরা সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। তবে পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় এবার আমনের আবাদ ও উৎপাদনে বেশ ভালো অগ্রগতি হয়েছে।
সরেজমিনে জেলার তানোর, গোদাগাড়ী, পবা, দূর্গাপুরম চাঁপাইয়ের নাচোল ও নওগাঁর নিয়ামতপুর-মান্দা উপজেলায় ধান কাটার চিত্র বিশেষভাবে লক্ষণীয়। উৎসবমুখর পরিবেশে কৃষকরা তাদের ফসল কাটা শুরু করেছেন। কেউ কেউ মাঠের পাশেই মাড়াইয়ের কাজ করছেন।
তানোরের কৃষক সানাউল্লাহ জানান, এবারের আমন মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি এবং পরে অতিবর্ষণের কারণে কিছু কিছু জমিতে ধানের ক্ষতি হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেক জমি ডুবে যাওয়ার ফলে ফলন কম হতে পারে, তবে সার্বিকভাবে ফলন ভালো হবে। গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক মনিরুজ্জামান ও সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের জমিতে আমনের বাম্পার ফলন হবে। ইতোমধ্যে ধান কেটেছেন তারা। তারা বলেন, এবার প্রতি বিঘায় ২২ মণের বেশি ধান হবে। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কৃষক রহিদুল মিয়া জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে কেটে মাড়াই করেছেন। ভালো ফলন পেয়েছেন। তিনি আশাবাদী এ মৌসুমে তিনি লাভবান হবেন।
পবা উপজেলার কৃষক দুলাল বলেন, এবার আমন ধানের ফলন খুবই ভালো হবে। মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভালো ছিল। তাই ফলন বাম্পার হবে। ধানের দামও ভালো আছে এবার জানিয়ে তিনি বলেন আশা করা করা হচ্ছে, এবার খরচ তোলার পর হাতে ভালো পরিমাণ টাকা থাকবে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোসা. উম্মে ছালমা জানান, এখন পর্যন্ত কিছুটা জমির ধান কাটা হয়েছে এবং ফলন ভালো হচ্ছে।