লৌহজংয়ের জমিতে এখনো পানি। তাই চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে -জনকণ্ঠ
দেশের বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জ। এই জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। বর্তমানে আলুর বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় কৃষক আলু চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কার্তিক মাস শেষ, কিন্তু বর্ষার পানি এখনো নামছে না বহু জমি থেকে। বর্ষা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা, খাল এবং নালা দখল করে অবৈধ ভরাট স্থাপনা নির্মাণসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার কারণে এই উপজেলার প্রায় ৬ হাজার হেক্টর কৃষি জমি বছরে ৬/৭ মাস থাকে পানির নিচে। যার ফলে তিন ফসলি জমি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে কৃষকরা বছরে একবার শুধু রবি মৌসুমে আলু, ধান উৎপাদন করে। বাকি সময় এসব ফসলি জমি থাকে পানির নিচে। এই সমস্যা সমাধানে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
এদিকে প্রান্তিক চাষিরা খুব চিন্তিত, আবাদ মৌসুম শুরু হলেও বর্ষার পানি না নামায় সময়মতো আলুসহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ করতে পারছে না। উঁচু জমিতে আগাম স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ শুরু হলেও জমিতে বর্ষার পানি থাকায় স্বাভাবিক চাষ বিলম্বিত হচ্ছে। কোনোভাবেই জমির পানি যেন নিষ্কাশন হচ্ছে না। এতে ফসল আবাদে কৃষকরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাষিদের অভিযোগ জমি সংলগ্ন খালগুলো দখল আর বালু জমে খালগুলো সরু হয়ে গেছে। এতে পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় ফসলি জমিতে জমে আছে বর্ষার পানি। তাই এ বছর আলু চাষের বিড়ম্বনা ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা তাদের। প্রান্তিক কৃষকরা জানান, বর্ষার পানি জমি থেকে দেরিতে নামায় শীতকালীন ফসলের আবাদ করা যাচ্ছে না। হাড়িদিয়া গ্রামের কৃষক মেরাজ শেখ জানান, খাল ভরাটের কারণে বর্ষার পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। হাড়িদিয়া বিলে তার ১০ একর আলুর জমি এখনো পানির নিচে। কৃষক লতিফ শেখ ও জসিম জানান, খাল দখলের কারণে আগের মতো ফসলের আবাদ করতে না পারায় আমরা কৃষকরা এখন মরতে বসছি। এই বিলে বর্ষার পানি নিষ্কাশনের নুরপুরের খাল, কালুরগাঁও খাল আরেকটা হলো বনসেমন্ত খাল এই খালগুলো মাটি ভরাট করে দখল হয়ে গেছে।
খালটি পুনরায় খনন করলে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা আর থাকবে না। বর্ষার পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে খিদিরপাড়া, ঘোলতলী, ধারার হাট, গাঁওদিয়া, বেজগাঁও, কনকসারসহ ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের বিলে জমিতে এখনো পানি আটকে আছে। স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর ঘূর্ণিঝড়ে টানা বৃষ্টির প্রভাবে এবং জমি থেকে বর্ষার পানি না নামার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন দিশেহারা। বিভিন্ন খাল-বিল, সেতু-কালভার্টের মুখ আটকিয়ে মাটি ভরাটের কারণেই এই অঞ্চলের ফসলি জমিগুলো দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। আবার অনেক খাল উধাও হয়ে গেছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ থেকে জানান, দীর্ঘদিন খাল খনন না হওয়ায় বৃষ্টি ও খালের পানি জমে শৈলকূপার চার বিলের প্রায় চার শত বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। এতে প্রতিবছর কৃষকদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের দিকে জেলার শৈলকূপা উপজেলার ধলহরাচন্দ্র গ্রামের ঘাড়ভাঙার বিল, হাঁটুভাঙার বিল, ছোট ধলহরার বিল ও ধাওড়ার বিলের প্রায় ৪শ’ বিঘা জমিতে পানি জমে বছরের ৮-৯ মাস পতিত পড়ে থাকে। জমিগুলোতে পানি জমে অনাবাদি থাকার কারণে এই ৪ বিলের জমির মালিকরা প্রতিবছর কয়কে কোটি টাকার ফসল আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালটি জিকে সেচ প্রকল্পের হলেও দেশ স্বাধীনের পর খনন না করায় মাটি পড়ে খালটি ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। পরে এলাকাবাসীর দাবির কারণে ১৯৯৪ সালের দিকে তৎকালীন ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী মোল্ল্যা এই খালটি পুনরায় খনন করে। তখন খালটি খনন করায় কয়েকবছর এসব বিলের জমির মালিকেরা তাদের জমিতে ধান পাট, গম, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে আসছিল। এর কয়েকবছর পর আবারও খালটি ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও খালের জমিগুলো একশ্রেণির ভূমিদস্যু ভরাট করে ফেলেছে। বর্তমানে এই ৪টি বিলে বছরের ৮-৯ মাস পানি জমে থাকে। জমিগুলোতে ফসল আবাদ করতে না পারার কারণে জমির মালিকরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ধলহরাচন্দ্র গ্রামের শফি মিয়া জানান, এই ঘাড়ভাঙার বিলে আমার প্রায় ১৪ বিঘা জমিতে পানি জমে পতিত পড়ে থাকে। এর ফলে কোনো ফসল আবাদ করতে পারি না দীর্ঘদিন। ছোট ধলহরা গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী জানান, আমার ঘাড়ভাঙার বিলে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পানি জমে পতিত পড়ে আছে। যার ফলে কোনো ফসল আবাদ করতে পারি না দীর্ঘদিন। আমি দ্রুত খালটি পানি নিষ্কাশনের জন্য খনন করার দাবি জানাচ্ছি।
অপরদিকে ধাওড়া গ্রামের কৃষক রাজন শিকদার জানান, আমাদের অনেক জমি পতিত পড়ে আছে। খালটি খনন করা জরুরি বলে আমি মনে করি। আরেক জমির মালিক সাবেক ইউপি সদস্য দলিল উদ্দিন জানান, আমাদের বিলের সমস্যা সংবাদপত্রের মাধম্যে তুলে ধরা হোক।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও সুকর্ণ কুমার জানান, খালটি খননের তালিকায় দেওয়া আছে। নতুন অর্থ বরাদ্দ পেলেই খনন করা হবে। এ বিষয়ে শৈলকূপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্ন্ন্নিগ্ধা দাস জানান, আমি নতুন এসেছি এটা কোন জায়গায় আমি জানি না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তবে আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখি। যদি খালটি খনন করার দরকার হয় তাহলে আমি অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করব খালটি খননের জন্য।