ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

পাকিস্তান থেকে আসা ৩১৭ কনটেইনার ঘিরে বাড়ছে কৌতূহল, উদ্বেগ ভারতের

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ১৬ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২১:০১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

পাকিস্তান থেকে আসা ৩১৭ কনটেইনার ঘিরে বাড়ছে কৌতূহল, উদ্বেগ ভারতের

ছবি: সংগৃহীত।

পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে পানামার পতাকাবাহী একটি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে ৩৭০ টিইউএস কন্টেইনার খালাস করার ঘটনা নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে দেশে এবং পাশ্ববর্তী দেশ ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান সন্দেহের কথা তুলে ধরা হচ্ছে।

মূলত ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাসের পক্ষে তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ১৩ নভেম্বর এ তথ্য প্রকাশ করার পর নানা মহলে সন্দেহ ও কৌতূহল সৃষ্টি করে। কেননা ‘ইউয়ান শিয়াং ফা ঝাং’ নামের কন্টেইনারবাহী এ জাহাজটি আরব আমিরাতের দুবাই বন্দর থেকে করাচি হয়ে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এরপর ৩৭০ কন্টেইনার খালাস করে ১২ নভেম্বর জাহাজটি ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করে। পাকিস্তান দূতাবাসের পক্ষে দেওয়া পোস্টে বলা হয়েছে করাচি-চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ১৯৭১ সালের পর প্রথমবারের মত সরাসরি সমুদ্র বাণিজ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ওই পোস্টে উল্লেখ করা হয়, এর ফলে দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ স্থাপিত হয়েছে।

অপরদিকে ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় এটিকে বিগত সময়ের ১০ ট্রাক অস্ত্র চালানের মতো কিছু হয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্নের উদ্রেক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, জাহাজটি করাচি থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে কন্টেইনার খালাস করলেও সবকটি কন্টেইনার পাকিস্তান থেকে আসেনি। কিছু এসেছে করাচি থেকে কিছু এসেছে দুবাই বন্দর থেকে। এসব কন্টেইনার থেকে কি পণ্য রয়েছে তা নিয়ে নানা কানাঘুষা অব্যাহত রয়েছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, জাহাজের স্থানীয় এজেন্ট রিজেন্ট শিপিং লাইনস্ নামে চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ শিপিং সংস্থা আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর পরিবারের মালিকানাধীন। এসব কন্টেইনারে কি পণ্য এসেছে খোঁজ খবর নিয়ে  জানা গেছে, মূলত কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য রয়েছে। যদিও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব কন্টেইনার খোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। কেননা কন্টেইনার খালাস হওয়ার পর আমদানিকারক ও শিপিং এজেন্টের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে দাখিল করার পর শুল্কায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করাচি বন্দর থেকে ২৯৭ ও দুবাই বন্দর থেকে ৭৩ এফসিএল কন্টেইনার আনা হয়েছে। এসব কন্টেইনার অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল পণ্য, চুনাপাথর , শিল্পের কাঁচামাল, পোষাক শিল্পের কাঁচামাল, পেঁয়াজ, আলু, খেঁজুর, স্ক্র্যাপ, কপার ওয়্যার, রেজিন, জিপসাম ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়া হিমায়িত কয়েকটি কন্টেইনারও রয়েছে। দেশীয় আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে-স্কয়ার ফার্মাসিইউটিক্যালস, আজিজ গ্লাস ফ্যাক্টরি, নাসির ফ্লোট গ্লাস, প্যাসিফিক জিন্স, এক্স সিরামিকস, হাফিজ করপোরেশন, এম আর ট্রেডিং, আল্লাহর রহমত স্টোরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রপ্তানিকারকদের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের ১৮ থেকে ২০টি প্রতিষ্ঠান।

সূত্র  জানিয়েছে, আমদানিকারকদের ঘোষণা, তথা আইজিএম অনুযায়ী কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব পণ্য সঠিক আছে কিনা তা দেখার পর প্রয়োজনীয় শুল্কায়ন শেষে খালাস দেওয়ার কথা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, এসব কন্টেইনার বন্দরের এনসিটিতে (নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল) খালাস হয়েছে। কি পণ্য আনা হয়েছে তা বন্দর কর্তৃপক্ষের জানার বিষয় নয়। সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকগণ পণ্য খালাস নেওয়ার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর জানা যাবে ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য এসেছে কী না।

৫০ বছরের বেশি সময় পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রপথে প্রথমবারের মত সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হওয়ার বিষয়টি ঢাকাস্থ পাকিস্তান দূতাবাস স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন। এসব কন্টেইনার খালাসকালে পুলিশ প্রহরায় গোপনীয়তার সঙ্গে খালাস করার বিষয়টি শ্রেয় গুজব। বন্দর সূত্রও জানিয়েছে, স্বাভাবিক অবস্থায় যেকোনো জাহাজ থেকে যে প্রক্রিয়ায় কন্টেইনার খালাস হয় ঠিক সেভাবেই এসব কন্টেইনার খালাস হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে যেসব খবর প্রচার হচ্ছে-এসব নিতান্তই গুজব।

নৌবাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে-দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সমুদ্রপথে সরাসরি যোগাযোগ এটিই প্রথম। করাচি বন্দর থেকে এ জাহাজটি আসার তথ্য বিভিন্নভাবে প্রচার হওয়ার পর তা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে নানা ধরনের কানাঘুষা চললেও বাংলাদেশ পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদারে এটি একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ। সূত্রসমূহে জানানো হয়, এসব বিষয়ে সরকার পক্ষে স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিলে সবধরনের কানাঘুষা ও অপপ্রচারের অবসান ঘটবে।

নুসরাত

×