শরীয়তপুর-পদ্মা সেতু সংযোগ সড়কের পুরোটাই ভাঙাচোরা আর খানাখন্দে ভরা -জনকণ্ঠ
গত চার বছরেও শেষ হয়নি পদ্মা সেতুর সঙ্গে শরীয়তপুরের টু-লেন সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ। ফলে পদ্মা সেতুর পুরোপুরি সুফল পাচ্ছে না শরীয়তপুরবাসী। চার বছরে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। সড়ক খুঁড়ে রেখে লাপাত্তা হয়েছে ঠিাকাদার। ভোগান্তিতে পড়েছে রাস্তায় চলাচলকারী চালক ও যাত্রীরা। মাত্র ২৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে প্রায় ২/৩ ঘণ্টা। বেড়েছে জ্বালানি খরচ, নষ্ট হচ্ছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ।
পদ্মা সেতুর সঙ্গে শরীয়তপুরের ফোর-লেন সংযোগ সড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। ২০২০ সালের শুরুর দিকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ভূমি অধিগ্রহণ ও জমি জটিলতার কারণে প্রাথমিক অবস্থায় টু-লেন সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পদ্মা সেতুর ল্যান্ডিং পয়েন্ট নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিস পর্যন্ত মোট ২৭ কিলোমিটার সড়ক ভাগ করা হয় তিনটি প্যাকেজে। জমি অধিগ্রহণ ও সড়ক নির্মাণে বরাদ্দ ১ হাজার ৬শ’ ৮২ লাখ টাকা। কাজের শুরু থেকেই জমি অধিগ্রহণে জটিলতা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। সড়কে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক নেই বললেই চলে। নামমাত্র গুটি কয়েকজন শ্রমিক আর যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে ২৭ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়নের কাজ।
বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহাম্মেদ তালুকদার বলেন, রাস্তার কাজের ধীরগতির কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে চলাচল করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় যানবাহন। প্রতিনিয়ত পাল্টাতে হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের মালিক রিপন খান বলেন, বছরের পর বছর রাস্তার কাজ না হওয়ায় মাল নিয়ে এলে ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতি হয় আর গাড়িরও ব্যাপক ক্ষতি হয়।
প্যাকেজ-৩ এর সাইড ঠিকাদার বকুল আহাম্মেদ বলেন, ঠিকঠাক মতোই চলছে সড়কের কাজ। বৃষ্টিসহ নানা রকম সমস্যার কারণে আমাদের কাজে বিলম্ব হচ্ছে। মীর হাবিবুল আলম কনস্ট্রাকশনের সহকারী ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলনে, রাস্তা ঠিক করতে যেসব উপকরণ লাগবে সব পর্যাপ্ত আছে। আর কাজ প্রায় শেষ। আর কিছু দিনের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করে ফেলব। এতসব অভিযোগের পরও কাজ ঠিকঠাক মতোই চলছে বলে জানালেন শরীয়তপুর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন। তবে দু/একটি স্থানে কাজ বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। তিনি বলেন, সড়ক নির্মাণকাজে জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে কিছুটা সময় বেশি পার হয়ে যাচ্ছে। যদিও ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে।
লালপুর
নিজস্ব সংবাদদাতা, লালপুর, নাটোর থেকে জানান, নাটোরের লালপুর উপজেলার বড়বড়িয়া বাজার থেকে খাটখইর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১ দশমিক ৪ কিলোমিটার সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীসহ যানবাহন চালকদের। সড়কটির পিচ ও কার্পেট উঠে গিয়ে অসংখ্য ছোট ও বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পথচারী ও ছোট-বড় যানবাহনসহ রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সড়কটি এলজিইডি এর আওতাভুক্ত। সড়কটি দিয়ে উপজেলার চিথলিয়া, লোকমানপুর, ধরবিলা, দিঘা, চৌমুহনী, ঢুষপাড়া, হাসেমপুর, রঘুনাথপুর এলাকার হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। আব্দুলপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশন, আব্দুলপুর সরকারি কলেজ, করিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল্স, উপজেলা পরিষদে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক। বড়বড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, স্কুলের সামনে সড়কটি ভেঙে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় কিছুদিন আগে এক ভিক্ষুক তার চলাচলের হুইল চেয়ারসহ সড়কের পাশে নিচু জমিতে পড়ে গিয়ে আহত হয়।
এ ছাড়া ভাঙ্গা সড়কের জন্য যানবাহন পাওয়া যায় না। বড়বড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সড়কটি ভেঙে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলের জন্য ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন আসতে চায় না। ফলে স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ মানুষকে বিপাকে পড়তে হয়। সড়কটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সাজেদুল ইসলাম বলেন, সড়কটি মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য প্রস্তাব এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে। বরাদ্দ পাওয়ামাত্র সড়কটির সংস্কারের কাজ শুরু হবে।